somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশাবারের নামে যা চলছে...

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘড়িতে সময় রাত সাড়ে নয়টা। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের শেষ মাথার একটি দোতলা রেস্টুরেন্ট। দুটো তলাতেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। তবু একটু আলাদা। নিচতলাটা উজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করছে, ওপরেরটা আলো-আঁধারি। দরজা ঠেলে দোতলায় ঢুকতেই দেখা গেল গোটা কক্ষ ধোঁয়ায় অন্ধকার, প্রচণ্ড শব্দে হাল আমলের গান বাজছে, আর ১৬-১৭ বছর বয়স থেকে ত্রিশোর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষ শিশা পান করছে।

‘শিশা’ একটি ফারসি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো হুক্কা বা হুক্কার মাধ্যমে সেবনযোগ্য তামাক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শিশাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে ঘোষণার সুপারিশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০-এ শিশাকে মাদক বলে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু শিশাবারগুলোর কোনো কোনোটিতে শিশার আড়ালে মাদক সেবন করা হয়। শিশাবার চালাতে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগে না। প্রতিবছর শিশাবারগুলো গড়ে ২৪ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা করলেও তাদের কোনো মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হয় না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গুলশানের বেশ কয়েকটি শিশাবারে অভিযান চালিয়ে তাঁরা আটটি নমুনা সংগ্রহ করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাঁচটিতে গাঁজা পাওয়া যায়।

পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অভিযানে অংশ নেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজধানীর গুলশান, বনানী, বেইলি রোড ও ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায় শিশাবার এখন অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের সময় কাটানোর প্রিয় জায়গা।

একটা সময় নিয়মিত শিশাবারে যাওয়া-আসা ছিল, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, ‘এটা আসলে একটা ফ্যাশনের মতো। শিশা তো প্রধানত তামাক। সামান্য মাথা ঝিমঝিম করা ছাড়া তেমন কিছু হয় না।’

শিশাবারে অভিযান চালিয়েছেন, এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিশাবারে অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে। বারের পরিবেশ বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতির অনুকূল নয়। শিশা সেবনে ছেলেমেয়েদের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। সামাজিক ক্ষতির দিকটিও কম নয়। শিশাবারে যায়, এমন ছেলেমেয়ের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলি আমরা। তাঁদের অনেকেই জানতেন না ছেলেমেয়েরা এখানে সময় কাটায়। অনেকে বলেছেন, “আমার বাচ্চা শিশাবারে গেলে আপনার কী?”’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিশাবার সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্ট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আন্তসংস্থা তদন্ত বোর্ড গঠন করে। ওই বোর্ডের সভাপতি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মাইন উদ্দিন খন্দকার, সদস্যসচিব ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু তালেব। তদন্ত বোর্ড ঢাকা শহরের বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টে শিশা ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করে এর ক্ষতিকর দিক ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে মতামত দেয়।

গত ১৪ মার্চ তদন্ত বোর্ড সরেজমিনে গুলশানের বেশ কিছু শিশাবার পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে পাওয়া নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, আটটির মধ্যে পাঁচটিতে গাঁজা আছে। তদন্ত বোর্ড বলছে, শিশা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০-এর তফসিলভুক্ত কোনো মাদকদ্রব্য নয়। তাই এর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০-এর বিধান অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু শিশার সঙ্গে গাঁজা পরিবেশিত হলে সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা করা যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিশা সেবনের একটি আসরে যে পরিমাণ ধোঁয়া এক-একজন গলাধঃকরণ করছে, তা ২০০টি সিগারেটের সমান।

অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তার প্রতিবেদনে শিশাবারের সামাজিক ক্ষতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘শিশা সেবনকালে সেবনকারীদের আরাম-আয়েশের জন্য নরম গদি ও তাকিয়া, মখমলের গালিচা ইত্যাদি বিছানো আছে। শিশা সেবনের মুহূর্তগুলো রোমান্টিক করার জন্য এখানে হালকা ও রঙিন আলোর ব্যবস্থা থাকে। স্নায়ু উত্তেজক সংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে। শিশার শারীরিক বা চিকিত্সাশাস্ত্রীয় ক্ষতি যতখানি, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদনে অবিলম্বে শিশাকে মাদক হিসেবে ঘোষণা করা, লাইসেন্স প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিশাবারের প্রসার নিয়ন্ত্রণ করা, ২৫ বছরের নিচে শিশাবারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা ও ঘন ঘন মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে শিশাবারে মাদকের অপব্যবহার বন্ধ করা ও অপব্যবহারকারীকে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।

তবে শিশাকে মাদকের অন্তর্ভুক্ত করা এবং এর প্রসারে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এ বিষয়ে জানেন না ব্যবসায়ীরা। গুলশানের যে বারগুলোয় অভিযান পরিচালনা করা হয়, তার একটির ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে একটি শিশা লাউঞ্জের মালিক বলেন, সবকিছুই নীতিমালার আওতায় আনা উচিত। তবে শিশাবারে এমন কিছু হয় না যা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁর ছেলেমেয়েরা শিশাবারে গেলে তিনি কিছু মনে করবেন না। কিন্তু তাঁরা বিদেশে পড়াশোনা করছে।


Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×