somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাদের দৈন্যতা আমাদের স্বপ্ন চুরি করছে?

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক খুঁজাখুঁজি করলাম কিন্তু গত এক মাস ১০ দিনে একটিও পেলাম না। চারচোখ দিয়ে জাপানের এই শহরটাকে হন্তদন্ত হয়ে অনেক জায়গায় খুঁজেও কোথাও এক বিন্দুর জন্য হলেও পেলাম না কিছু। তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে এসেছি আর হয়তো এই জন্য কৌতুহলের এতো ফুলঝুড়ি। নিজে দেশে জন্মের পর থেকে যা দেখে এসেছি আর হঠাৎ তা দেখতে না পেরে কৌতুহলের তীব্রতা বেশি করে জেঁকে বসেছে।

প্রাপ্তির পাল্লায় শূন্যতা দেখে মনে হচ্ছে আসলে কি আমাদের স্থবিরতা কাটবে না? আমাদের রবি কিরণ কি হাসির উজ্জ্বলতা পাবে না? রোবটের এই দেশটিতে যে জিনিসটি খুঁজেছি তা হলো এই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। খুঁজেছি আমার দেশে ন্যায় রাজনীতিবিদদের লাগামহীন প্রশংসা বাক্যময় পোস্টার, ব্যানার কিংবা ফেস্টুন। কিন্তু বিশ্বাস করুন বা নাই করুন এখন পযন্ত কোন পোস্টার, ব্যানার কিংবা এই সম্পকিত এক খন্ড কাগজের টুকরা। কোথায় খুঁজে পেলাম না রাজনৈতিক কোন আলাপ আলোচনা।

সব চেয়ে অবাক লাগলো তখনই যখন আমার এক জাপানিজ ল্যাবমেটকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার দেশের প্রেসিডেন্টের নাম কি? সে মাথা চুলকিয়ে পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে ইন্টারনেটে সাচ দিয়ে কয়েক মিনিট পর বললো সিনজো আবে। পরে বেশ কয়েকজন জাপানিকে কথাচ্ছ্বলে জানতে চেয়েও হয়েছি বিব্রত।

শুধু তাই নয় নিজ বাড়ির ১৫ গজ দূরে কিংবা বাড়ির পাশে কোন প্রতিবেশি-রাস্তার নাম বলতে পারে না তারা। সেই জায়গা থেকে বুঝে নিলাম যে জাতির সন্তানরা এই অভ্যাসে অভ্যস্ত সেই খানে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় চাওয়া নিত্যন্ত বোকামি ও মূখতা।

কয়েকদিন থেকে বিষয়টি প্রিয় জন্মভূমির সাথে তুলনা করে প্রথমে মেনে নিতে কষ্ট হলেও এখন দিনের আলোর মতো পরিস্কার জাতি হিসেবে আমরা কতটা প্রাপ্তির যোগ্য। আমাদের নাগরিকরা কেনই বা অন্যে দেশের অন্নের উপর নিভর করবে না। রাজনৈতিক দৈন্যতা কেড়ে নিচ্ছে আমাদের স্বচ্ছ্বলতার স্বপ্ন। হতাশা গ্রাস করেছে পুরো জাতিকে। অন্ধকারের গহ্বরে কাতরাচ্ছে সম্ভবণার সুর।

আচ্ছা আপনি একবার মনে মনে ভাবুন তো রাজনৈতিক সংস্কৃতির লালন আপনার সাফল্যের জন্য কতটা দায়ী? কিংবা আর একটিবার খোলসা করে ভাবুন তো আপনার সাফল্যের অন্তরালে কিংবা আপনাকে পিছিয়ে ফেলতে এই রাজনীতির ছায়াটি কতাংশ দায়ী?

মনে করলে খুব কষ্ট লাগে আমাদের উন্নয়নের স্থিতিকাল এনে দিচ্ছে আমাদের অতি পুরোনো এই সংস্কৃতিটি। শৃঙ্খলতাকে দহন করে বাংলাদেশের আকাশে বাতাশে স্থান নিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকারে আদায়ে লেবাসধারীরা। বায়ান্ন, একাত্ত্বর, একানব্বই গণতন্ত্রকে রক্ষায় আমরা যা দেখিয়েছি তা কোন রাজনৈতিক ইন্ধনে নয় মাতৃভূমির গতিয়ানের জন্য, কণ্ঠকে উবর করার জন্য কারও কাছে ক্ষমতার কুক্ষাগত করার জন্য নয়।

একক আধিপত্যে রাজনৈতিক দলগুলো কাছে আমরা জিম্মি হতো বাধ্য হয়েছি। স্বাধীনতার পরাশক্তির হাতে রক্তাভ পতাকা তুলে দিয়ে নিজেদের বিবেকের দৈন্যতার প্রমাণ দিয়েছি। জঙ্গীবাদ নিয়ে এসে ক্ষমতাকে মুড়ানোর চেষ্টা করেছি। গণতান্ত্রিক কথা বলে এক নায়কতত্বের পথে হেটে চলেছি। আর পায়ে বিষফোড়া নিয়ে অশ্রু বিসজন করে নিজেদের কপালের উপর হাত চাপড়াচ্ছি।

দংশিত এই জাতির কাছে আমাদের স্বপ্ন ফেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই যাওয়ার পিছনে আমাদের অবদান কিন্তু কম নয়। জাপানের রাজনীতির খবর শুঁকতে িএই দেশের বেশ কয়েকটি পত্রিকার দিকে নজর দিয়েও লাভ হয়নি। পত্রিকার ভিতরে কোন এক কোণায় মাঝে মাঝে প্রেসিডেন্টের কিংবা পালামেন্টের দুই এক কলাম খবর। পুরো পত্রিকা জুড়ে উন্নয়ন আর সম্ভবনার কথা লেখা থাকে। আর তার মাধ্যমে হয়তো তারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

কিন্তু আমাদের দেশের মিডিয়ার কথা ভাবলেই লজ্জায় লাল হতে হয়। পুরো পত্রিকা জুড়ে রাজনীতি বিদের সংশ্লিষ্ট খবর। মন্ত্রীদের স্তুতিধ্বণী সম্পকিত শিরোনাম। একাত্তরের পক্ষে বিপক্ষের সংবাদ। ডান পক্ষ বাম পক্ষ নিয়ে কামড়া কামড়ি। ইচ্ছে মতো খবর ছাপিয়ে উস্কানির আস্ফালণ ঘটিয়ে মানুষকে রাস্তায় নামায় আবার হত্যা করে মায়া কান্না দিয়ে টেলিভিশনের বুমের সামানে মুখে ইতিরকম ফেনা তুলে দিই।

কিংবা নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়ে সন্ত্রাসী বানিয়ে আস্ত মুরগির কিমায় দাঁত বসিয়ে বুড়ো আঙ্গুল ঝুলি নাচানাচি করি। হরতাল নামক শব্দটি ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক নামক আর একটি শব্দ চচা করি। শিক্ষাথীদের পড়াশোনাকে চুলোয় দিয়ে দেশপ্রেমিকের ছোঁয়া লাগায় তাতে কিচ্ছু আসে যায় না আপনাদের কিন্তু আমাদের আসে যায়। আপনাদের নোংরামিতে আমাদের স্বপ্নগুলো নড়াচড়া করে।

আপনাদের প্রবীন মস্তিষ্কে হয়তো দেশ প্রেমের জোয়ার বয়ে চলে কিন্তু আমাদের মনে লুকিয়ে থাকা সম্ভবণার দরজা আপনাদের সেই কথিত প্রেমের জোয়ারে স্নাত হওয়ার ভয় থাকে। আমি জানি না কথাগুলোর বুদ্ধতা কিংবা নিমোহতার ফসল বয়ে আনবে কি না তবে গণমাধ্যমের দায়িত্ববোধ তা এড়াতে পারে না।

ছয় কিংবা সাত দশকের এই সংস্কৃতি হয়তো আরও চলতে থাকবে আরো নোংরামির ফসল আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে তবে আমি স্বপ্ন দেখি কেবল হিংস্য ও পাশবিক দৈন্য রাজনীতির কড়াল গ্রাস থেকে বিশ্বমাতার কাছে খন্ডিত ব-দ্বীপের নতুন পরিচয় দেয়া সম্ভব তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরাও তৃতীয় থেকে প্রথমের দিকে হাঁটতে পারি ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য একটি শৃঙ্খল জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে পারি সেই সম্ভবণার দরজা খোলার দায়িত্ব আমার-আপনার হাতে অপিত। নোংরামি শব্দটি উহ্য রেখে রাজনীতির সুষ্ঠু অনুশীলন হতে পারে তা শুরু করার দায়িত্ব দেশের সকল রাজনীতিবিদদের।

প্রতিহিংসার অগ্নিস্ফুলঙ্গে নিজেদের ধ্বংস করতে পারি কিন্তু আগামি প্রজন্মকে ধ্বংস করার দায়িত্ব আপনাদেরকে কেউ দেয়নি। আর তা থেকে হয়তে সোনার দেশের সোনালী স্বপ্ন আবারও উঁকি দেবে এটাই আমার বিশ্বাস।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×