ফরমালিন কি বা ফরমালিন যুক্ত ফল চেনার উপায় কি ?
(১)ফরমালিন যুক্ত ফলে প্রাকৃতিক সুবাসের পরিবর্তে ঝাঝালো এক প্রকার গন্ধ থাকে।বিশেষ করে ফলের বোটার অংশটি নাকের কাছে ধরলে সেটা অনেকটা ক্লিয়ার বোঝা যায়। যদি প্রাকৃতিক গন্ধ না পান বা ফল ও সবজি থেকে কোন প্রকার ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে লাগে তাহলে নিশ্চিতভাবে বুঝতে হবে সেই ফলে বা সবজিতে ১০০% ফরমালিন মেশানো হয়েছে।
(২)প্রাকৃতিক ভাবে পাকা ফলের রঙ কিছুটা সবুজ বা কিছুটা হলুদ হয়ে থাকে, কিন্তু কার্বাইড মেশানো ফল আগাগোড়া সম্পূর্ণ হলুদ হয়ে যায় । প্রাকৃতিক ভাবে পাকা ফলের স্বাদ সম্পূর্ণটাই মিষ্টি হবে। কিন্তু রাসায়নিকভাবে ফা ফরমালিন মেশানো পাকানো ফলের কিছু অংশ মিষ্টি এবং কিছূ অংশের স্বাদ টকহবে।পুরোপুরি মিষ্টি লাগবে না।
(৩)স্বাভাবিক ফল পেকে যাওয়ার পর ফ্রিজে রাখা না হলে স্বভাবতই পচে যাওয়া শুরু করবে, কিন্তু ফরমালিন যুক্ত ফল ফ্রিজে না রাখলেও পচবে না।লিচুর রঙ কাঁচা অবস্থায় হবে সবুজ,পেকে গেলে ইট রঙের। এখন গাছে থাকা অবস্থায় রাসায়নিক দেওয়ার কারনে তার রং হয়ে যায় ম্যাজেন্টা।
(৪)রাসায়নিক দেয়া লিচুতে স্বাভাবিক স্বাদ বা গন্ধ থাকে না। বিশ্রী ঝাঁজালো ভাব থাকবে, আর রসালো হবে না।চেহারা দেখে ফল কিনবেন না। বিশেষ করে আম। অনেকেই দাগহীন মোলায়েম চেহারা দেখলেই আম কিনে ফেলেন। আমের চেহারা শতভাগ দাগহীন হওয়ার অর্থ যে একে কাঁচা অবস্থায় পাড়া হয়েছে এবং ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়েছে।
(৫)ফরমালিন যুক্ত ফলে মাছি, মৌমাছি ইত্যাদি পতঙ্গ বসে না।
ফরমালিন যুক্ত মাছ কিভাবে চিনবেন এবং ফরমালিন দূর করার উপায় বা ফরমালিন এর সংকেত:
গবেষণায় দেখা গেছে ভিনেগার এবং পানির মিশ্রণে ১৫ মিনিট ফল বা সবজি ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফরমালিনই দূর হয়। ভিনেগার না থাকলে ফল খাওয়ার আগে লবণ পানিতেও ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারেন। তাতে ফরমালিন দূর হবে অনেকখানি।
ফরমালিন নামক শব্দটি শুনে নাই এরকম মানুষ হয়ত খুবই কম পাওয়া যাবে। বর্তমান নাগরিক জীবনে এটি আষ্টেপিষ্টে আমাদেরকে জড়িয়ে ধরেছে। এই দ্রব্যটি একটি আতংকের নাম। কিন্ত এটা থেকে মুক্তি পাওয়া মনে হয় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই চলুন জেনে আসা যাক ফরমালিন সম্পর্কিত কিছু তথ্য।
ফরমালিন কী ?
এখন বাংলাদেশে ফরমালিন ছাড়া খাবারজাতীয় কোনো কিছু পাওয়া এককথায় অসম্ভব। ফলে ফরমালিনযুক্ত খাবার খেয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তবে একেবারে সহজ কিছু উপায় অবলম্বন করে ফর মালিনের ক্ষতিকর থেকে দুরে থাকা যায়। ফরমালিন হলো এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বা সংক্রামক ব্যাধি নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ফরমালিন মানুষের লাশসহ মৃত প্রাণীর দেহর পচন রোধ করতে ব্যবহার করা হয়। আমরা নিশ্চয় জীব বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে কাচের জারে ডুবানো বিভিন্ন স্পেসিম্যান বা নমুনা (মৃতদেহ) দেখেছি যেগুলোতে ফরমালিন মেশানো থাকে। বিশেষ করে ফরমালিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংক্রমিত হতে না দেওয়া। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলতে পারে। রং তৈরী, বস্ত্রখাতে কাপড় কুঞ্চিত হতে না দেয়া, সংরক্ষণ, বিস্ফোরণ এবং পলিমার তৈরীতে এটি ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৩ মিলিয়ন টন বা ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড ফরমালিন প্রস্তুত করা হয়েছে।
২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় $১৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ফরমালিন এবং সংশ্লিষ্ট দ্রব্য উৎপাদিত হয় যা জিডিপি'র প্রায় ১.২%। দেশ দু'টির ১১,৯০০ প্ল্যান্ট বা কারখানায় ৪ মিলিয়নেরও অধিক লোক কর্মরত রয়েছেন।
বিষাক্ততা এবং উদ্বায়ী, অপব্যবহারের প্রেক্ষিতে ফরমালিন মানব দেহের বা স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকারক পদার্থ হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। ২০১১ সালের ১০ই জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল টক্সিকোলজি প্রোগ্রাম কর্তৃক ফরমালিনকে মানুষের ক্যান্সার রোগ সৃষ্টিতে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে জানায়।বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ফরমালিন ব্যবহার এবং ফরমালিনজাত দ্রব্যাদি আমদানীতে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফরমালিনসম্পৃক্ত জিনিসপত্রে ফরমালিনের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
ফরমালিনের ক্ষতিকর দিকগুলো:
(১) ফরমালিন এবং অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। কিডনি, লিভার এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশু কিশোররা। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।
(২) ফরমালিনের মাত্রা বেশী থাকলে খাওয়ার পর পরই মানুষের শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে এবং প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
(৩) বৃক্ক, যকৃত, ফুলকা এবং পাকস্থলী সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লিভারেও সমস্যা হতে পারে ।অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কয়েক দিন পরপর একই রোগী ডায়রিয়ায় ভুগছেন, পেটের পীড়া ভালো হচ্ছে না, চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
(৪) শিশুদের দৈহিক স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও ফরমালিনের ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
(৫) অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।
(৬) তাৎক্ষণিকভাবে ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কারবাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
চাইলে ফরমালিন যেভাবে দূর করতে পারেন:
(১) সবজি রান্না করার আগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম পানির মাঝে বেশ খানিকটা লবণ মিশিয়ে তাতে ডুবিয়ে রাখুন । পানিটা সম্পূর্ণ ফেলে দিয়ে আবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
(২) ফল খাওয়ার সময় কমপক্ষে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে। আপেল জাতীয় ফলের ক্ষেত্রেও খোসা ছিলে তারপর খাওয়া উত্তম।
(৩) ১ ঘন্টার বেশী সময় মাছ ও মাংস পানিতে ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ৬০ ভাগ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যাবে।
(৪) প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে মাছ ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টা খানেক। তারপর সাধারন পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিলে ৭০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়ে যাবে।
(৫) ভিনেগার এবং পানি একসাথে মিশিয়ে ১৫ মিনিট মাছ ও মাংস ডুবিয়ে রাখলে শতকরা ১০০ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যাবে।
(৬) এখন শুটকি মাঝে প্রচুর ফরমালিন দেওয়া হয় । এই ব্যাপার থেকে মুক্তি পেতে হলে শুটকি মাছ প্রথমে গরম পানিতে একঘণ্টা তারপর স্বাভাবিক পানিতে আরও এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ফরমালিন মুক্ত হবার পাশাপাশি অনেক স্বাদও বাড়বে।
চলুন ফরমালিন মেশানো মাছ চেনার উপায় ভিডিও দেখে নিই ।
তথ্য: ইন্টারনেট ।
তথ্যসূত্রঃ
তথ্যসূত্রঃ
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৪