আমি তাকে চিনি সহস্র বছর ধরে। সেই গাঢ় নীল অবয়ব, ছলছলে চোখ, কোক-চিপস আর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। আমি প্রত্যেক রাতে স্বপ্নে দেখি সে একই চলচ্চিত্র। সে আমার কাছে কোন পাপ করেনি, একটু সান্ত্বনা চেয়েছিলো। আমি ভয়, ইতঃস্ততায় আর আনাড়ি ভাবনায় তাকে হারালাম, তোমায় হারালাম। সে কি যে অভিশাপ আমি কুড়োলাম তা শুধু বিধাতাই জানে। তারপর বাসের ভেতর থেকে তোমার শহর দেখেছি, হয়তো বারবার চেয়ে তোমাকেই খুঁজেছি। কিলোমিটার পোস্টে নামটা দেখলে থমকে দাড়াই! এ শহরেই আমার আপন কেউ এখনো আসে, ঈদের ছুটিতে, জরুরী নিমন্ত্রণে কিংবা অভ্যাসবশত। আমিও তোমাকে এখন অভ্যাসবশত মনে রাখি। অভ্যাস এর সর্বোচ্চ পর্যায় কি? ইন্সটিঙ্কট!!
নতুন শহর। ধিক ধিক আগুন জ্বলে সে শহরে। তোমাকে খুঁজি আনাচে কানাচে। বিশ্ববিদ্যালয় দরজায়, ফুটপাথে আর বইয়ের দোকানে। এখনো তোমার সব থেকে প্রিয় বস্তু বই তাই না? ইস আমি যদি বই থেকেও প্রিয় হতে পারতাম! এখানে বইকে আমার চিরশত্রু মনে হয়। ধানমন্ডিই তো হবে তাই না? রোড নম্বর আমার ঠিকঠাক মনে নেই। বড়সড় বিউটিপার্লার আছে সেখানে। ঠিক তার বিপরীতে বসে ছিলাম টানা কয়েক ঘন্টা, তোমার অপেক্ষায়। রুপালী রঙয়ের শার্ট আর কালো সানগ্লাস, আমিই ছিলাম সেই ফেব্রুয়ারির রোদে।
একটা ভিতর গোঁজা মানুষ ফিরে এল। পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলাম তোমার থেকে। হুট তুলে রিকশা মামাকে বেরিয়ে যেতে বললে। আশেপাশের সব চোখ আমাকে দেখছে, প্রত্যেকটা রিকশাওয়ালাও আমার দিকে করুণা দেখালো শুধু তুমি বাদে। জীবনের প্রথম কোন মেয়েকে যন্ত্রণা দিচ্ছি সামনা সামনি। নিজেকে বিটুমিন ঢালা রাস্তার ভিতর আবিষ্কার করতে ইচ্ছা হয় আমার। তুমি তখন অনেক দূরে। তিন চাকা ক্রিং ক্রিং করে চলছে, সবসময় যেমন চলে। কালো চোখের চশমার মানুষও কাঁদে! হু হু করে নদী বয়ে চলে। বইমেলায়। ফেব্রুয়ারিতে!
অনেকটা সময় হারিয়ে গেছে। ঈশ্বর যা দিয়েছিলেন তা কেড়ে নিতে খুবই ব্যস্ত। আমিও কিছু স্মৃতি হারাতে চাই, স্বইচ্ছায়। ঈশ্বর মনোযোগ দিবেন! কেড়ে নিবেন নাকি ফিরিয়ে দিবেন?
শুধু ভালো থেকো, আর কিছু নয়। যখন কাওকে সব থেকে বেশি ঘৃণা করছ সেই হয়তো তোমাকে সব থেকে বেশি ভালবাসছে, কল্পনায়। কি অদ্ভুত পৃথিবী, কি অদ্ভুত ভালোবাসা, কি অদ্ভুত সময় আর ঈশ্বর।
ক্ষমায় পূর্ণতা। শুধু ভালোবাসায় নয়। হোক হোক তাইই হোক।
। । সমাপ্ত । ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২২