somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গিটার

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাপড় গুলো বারান্দায় ছড়িয়ে ঘরে আসতেই জয়িতার ফোন
বেজে উঠল। রিসিভ করা মাত্র শুনতে পেল তূর্যর কণ্ঠ,
"তুমি আর নেই সে তুমি..." শচীনদেব বর্মণের বিখ্যাত গান। চুপ করে শুনলো খানিকক্ষণ। গান থামিয়ে তূর্য বলে উঠল, "শেষটার সুর গলায় উঠছে না, বুঝছো? গুনগুন গুনগুন করো না অসময়... উঁহু, হলো না।
তুমি গাও তো।"
"ধুর, আমি গাইতে পারি নাকি? ঐটা আমার দ্বারা হবেনা।"
জয়িতা বলে।
তূর্যের কণ্ঠে গান গুলো এত অপূর্ব শোনায় যে সে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে থাকে। এত সুন্দর গায় কী করে? মনে পড়ে দুজনের
প্রেমের আগে একদিন জয়িতা বাড়ি ফিরছিল। তূর্য ওকে অবাক করে দিয়ে গেয়ে উঠেছিল "পাখি রে তুই দূরে থাকলে কিছুই আমার ভালো লাগে না।" কেন জানি প্রতিটা রক্তবিন্দুতে গানটা ছড়িয়ে গিয়েছিল ঐদিন জয়িতার। তূর্য বলতে থাকে,
:"একটা গিটার থাকলে বেশ হতো, জানো? টুংটাং করা যেত।"
-"তুমি বাজাতে পারো নাকি?"
:"পারিনা, শিখে নিলাম! সাব্বির
ভাই একটা কিনেছে জানো, অনেক সুন্দর! দাম শুনে মুখ দিয়ে একা একাই বেরিয়ে গেছে, হোয়াট দ্যা ফাজ, ইউ সান অফ আ বিস্কুট"
- এটা কী হল?
: দেখ আমি কিন্তু খারাপ কথা বলিনি,
তুমি তো মানা করো। তাই বলে পনের হাজার দিয়ে একটা গিটার
কেনে কেউ? আমার তিন মাসের খরচ।
- এত্ত দাম?
: হুম, আরো কমেও পাওয়া যায়, আমি ভাবছি একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কিনে ফেলব।
জয়িতা মনে মনে ভাবে তূর্যর হাতে একটা গিটার থাকলে কেমন
লাগবে? কালো একটা একুইস্টিক, চিকন রূপার সুতোর মতো তার গুলোতে ওর লম্বা নখ গুলো খেলবে, যেন সুরকেই
সম্মোহন করবে। জয়িতা বলে,
-"তার চেয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথে একতারা নিয়ে এসো, দামে কম পড়বে, ওতেও সুর তোলা যায়।"
:"এই জন্য তুমি গাইলে মনে হয় পেত্নীর গান" অভিমান তূর্যের গলায়।
হেসে ফেলে জয়িতা,
-"আচ্ছা বাবা, এরপরে কিনে ফেল।"
সেইদিনই টিউশনিতে যাবার পথে সাইন্স ল্যাবের দোকান
গুলোতে উঁকি দেয় জয়িতা। একটু খোঁজ নেয়া দরকার। একটা পুরনো গিটার বাজাবে তূর্য এটা মানতে পারেনা।
দোকানদার মহাউত্সাহে এমন নারী ক্রেতা পেয়ে তার পণ্যের
গুনগান শুরু করলো। গিবসন ভালো আপু, দেখেন আপনি! সিগনেচারও নিতে পারেন। সাড়ে পাঁচের মতো পড়বে। গিটারটা জয়িতার নজর এড়ায় না। কালো, তার গুলো ঝকঝকে রূপালি, স্বীয় সৌন্দর্যে যেন অহংকারি হয়ে আছে।এটাই কিনবে, ঠিক করে ফেলে। তূর্যর জন্মদিন আসতে আর ছয়মাস বাকি, কোনভাবে যদি এক হাজার করে জমানো যায়, তাহলেই হবে। মনের
ভিতরে ছোট ভাইটার আবদার গুলোও ভাসতে থাকে, "আপু, এংরি বার্ডের পেনসিল, ডোরেমনের বক্স, কমিকস, পরে মনে হলে বাকি গুলো বলবো!"
একটু সাশ্রয়ী হলেই সম্ভব। রিকশায় না চড়ে একটু হাঁটলাম, টিউশনিতে বাসে গেলাম, সপ্তাহে দুটো দিন না হয় একটু
ভাজি ভর্তাই খেলাম! আপনমনে ভাবতে থাকে।
হলে ফিরে পুরনো শ্যাম্পুর বোতলটারউপরে সূক্ষ্মভাবে কেটে ফেলে জয়িতা,যাতে শুধু টাকা ঢোকানো যায়, বের করা যায় না। মাসের শুরুর এক হাজার টাকা আর সাথে কিছু দশ বিশ টাকার
নোট ঢুকিয়ে দেয় ভিতরে। মনে মনে ভাবে তূর্য যখন গিটার
নিয়ে গাইবে, ওর চোখ থেকে চশমাটা খুলে নেবে জয়িতা।
চশমা ছাড়া সে খুব একটা ভালো দেখতে পায়না। জয়িতা চায়না ওর চোখের মুগ্ধতা টুকু তূর্য দেখে ফেলুক।
মাস তিনেক হলো। শ্যাম্পুর জারটায় তিন হাজার চারশ টাকা জমেছে।মনে মনে পুলক অনুভব করে জয়িতা, বেশ সঞ্চয়ী হয়েছে সে। আর দুটো মাস ঠিক মতো গেলেই কিনে ফেলতে পারবে গিটার টা। মাঝে মাঝেই দেখে শৈলীর মা টিউশনির টাকা দিতে দশ তারিখ করে ফেলে। এবার তা হতে দেয়া যাবে না। সংকোচের মাথা খেয়ে বলেই ফেলল, "শৈলী, তোমার মা কে একটু বলবে এ মাসে একটু প্রথম সপ্তাহে টাকা টা দিতে?"
"কেন মিস? টাকা সব শেষ করে ফেলেছেন?"
আচমকা প্রশ্ন করে বসে ছাত্রী শৈলী। এত্ত বড় হয়েছে কথা বলার ন্যূনতম ভদ্রতাটুকু শেখেনি। রাগটা আয়ত্তে নিয়ে আসে জয়িতা।
পরে অবশ্য মাসের শুরুতেই টাকা দিয়ে দিয়েছিল।
দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বর চলে এলো। দশ তারিখে তূর্যর জন্মদিন।টাকাটা গুছিয়ে ফেলেছে জয়িতা ঠিকমত। আজই কিনে রাখবে গিটারটা। ক্লাস থেকে হলে ফিরতে ফিরতে দুপুর
গড়িয়ে গেল। রুমে ঢুকে থমথমে পরিবেশটা বুঝতে একটু
সময় লাগে ওর। সিনিয়র রুমমেট ডাকে,
"জয়িতা দেখ তো তোর সব ঠিকঠাক আছে কিনা, আমার লাল
জামদানিটা নেই।" ঘটনা পুরোই দুর্ঘটনা। ফার্স্ট ইয়ারের নতুন রুমমেট সুমি দরজায় তালা না দিয়ে চলে গিয়েছিল। ভর
দুপুরের নির্জনতায় দক্ষ হাতে কেউ ওদের দেয়াল আলমারির
তালা ভেঙে নৈরাজ্য করে গেছে। জয়িতা দেখে ওর শখের
শাড়ি গুলো ঠিকমতোই আছে। শুধু নেই শ্যাম্পুর পুরনো বোতলটা। যেটা ঝাঁকালে কাগজের শব্দ হতো, লাল কাগজের একের পিছনে তিনটা শূন্য ভাঁজে লুকিয়ে থাকতো, স্ট্রং হেয়ার
লেস ফল লিখা বোতলটা যেন পুরো ধসে পড়ার অট্টহাস্যে উপহাস করে গেল।
সুমিকে গায়ের জোরে থাপ্পড় লাগানোর ইচ্ছাটা অনেক কষ্টে সংবরণ করে বাইরে গেল ও। একটু শান্ত হওয়া দরকার।
আজ দশ তারিখ। হাতের অবস্থা ভয়াবহ। হাঁটতে হাঁটতে জয়িতা কাঁটাবন গেল। পছন্দ করে একটা কাঁচেরজারে দুটো রঙিন মাছ কিনল, যাওয়ার রিকশা ভাড়া সহ খরচ দুশো ত্রিশ টাকা। তূর্যর প্রিয় রং সবুজ। সবুজ শাড়িটাই ঠিক করল আজ। আসন্ন সন্ধ্যায় বিষণ্ণ মুখটা নিয়ে বের হলো তূর্যর সাথে দেখা করতে।
রঙিন মাছ দুটো দেখে তূর্যর কি শিশুসুলভ আনন্দ। বারবার ঘুরে ফিরে দেখছে।
"আমার কাছে ঠিকমতো থাকবে তো? জয়ী ওদের নাম দিয়ে দাওনা?"
জয়িতা ওর হাসিটা দেখে ভাবে এত সুন্দর মানুষটার হাসি! আচমকা পাশ থেকে তূর্য এক হাতে জয়িতা কে আঁকড়ে ধরে, অন্য হাতে দুটো রঙিন মাছ। হাসিমুখে গেয়ে ওঠে, "কোন
দিকে যাই, কোন পথে হারাই? রক্তপ্রবাহে স্লোগান উঠেছে তোমাকে তোমাকে চাই!"
জয়িতা তূর্যর চশমাটা খুলে নেয়, ও চায়না হঠাৎ চোখের পানি টুকু সে দেখে ফেলুক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×