somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রস মার্ক

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেয়াল ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ টা ছাড়া এই মূহুর্তে আর কোন আওয়াজ কানে আসছে না।আসার কথাও না।রাত এখন প্রায় আড়াইটা।আমার ঘুম ভেঙে গেলো।মেহরীন ওপাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে। এখন তাকে শুধু শুধু জাগানোর কোন মানে হয় না।মেয়েটা সারাদিন সংসারের সব কাজ কর্ম একা হাতে সামলায়, রাতে একটু শান্তি তে ঘুমোয়।আমার এখন আর ঘুম আসবে না।বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। একটা সিগারেট ধরানো দরকার।কিন্তু মেহরীনের জন্যে ঘরে সিগারেট নিয়ে ঢুকাই দায়।তবে টেবিলের ড্রয়ারের কোনায় দুই একটা লুকিয়ে রেখে দেই, সে খুঁজতে যায় না সেখানে।সিগারেট টা ধরিয়ে বারান্দায় বেতের চেয়ারটাতে আরাম করে হেলান দিয়ে চোখ বুজলাম। আজকের রাতটা বড়ই নিস্তব্ধ মনে হচ্ছে, সময় মনে হয় থেমে গেছে এখন, আর আমি এই সময়ের চালক।আমি চোখ না খুলা অব্দি যেন সময় এভাবেই থেমে থাকবে।হঠাৎ নিজেকে খুবই ক্ষমতাধর মনে হচ্ছে।কিন্তু সময়কে এভাবে আটকে রাখা ঠিক নয়,এটা প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ।আমি চোখ মেলে তাকালাম।আর ঠিক তখনই চোখের সামনে একটা লাল ক্রস চিহ্ন ক্ষণিকের জন্য ভেসে উঠে আবার যেন উধাও হয়ে গেল।কিন্তু এর রেশটা যেন এখনো রয়ে গেছে।আমি এখনো অনুভব করতে পারছি।দুটি আড়াআড়িভাবে টানা কাটা ক্ষত, যেন কেউ চাকু বা ধারালো কিছু দিয়ে কারো বুকের বাম পাশে বসিয়ে দিয়েছে।এই ক্রস মার্ক আমার একদমই অপরিচিত নয়।গত সাতাশ তারিখ ব্লক এইটের একটা ফ্লাটে ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় একটা লাশ পাওয়া যায়।মাজেদুল হক, পেশায় ঠিকাদার।সরকার পরিবর্তনের পর দল পাল্টে রাতারাতি অনেক টাকার মালিক বনে যায়, পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ে নানা অনৈতিক কাজে।কয়েকদিন আগে ১৩ বছর বয়সী কাজের মেয়েকে শারীরিক নির্যাতনের কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়ে।কিন্তু কেস ফাইল হবার আগেই টাকাপয়সার জোরে ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।তার দুদিন পর মেয়েটার লাশ পাওয়া যায় একটা কনস্ট্রাকশান বিল্ডিংয়ের পানির টাংকির ভেতর।সেই কেসটাও উপর মহলের ফোনে ক্লোজ হয়ে যায়।মানুষের কাছে ক্ষমতা আর টাকা দুটোই চলে আসলে নিজেকে সামলে রাখা বুঝি খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে।এর একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ হতে পারে মাজেদুল হক।যাক শেষপর্যন্ত তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। একজন এসআই কে পাঠাই সেখানে ক্রাইম সিন সংগ্রহ করার জন্য।সাথে পাঠাই চৌকস একটা ফরেনসিক টিম।কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তথ্যও যাতে বাদ না যায়। কারণ জানি, এইসব করাপ্টেড লোকের খুনের ক্ষেত্রে উপর থেকে একের পর এক ফোনকল আসতেই থাকে।আর অফিসার ইনচার্জ হওয়ার কারণে সব প্রেসার আমার উপরেই পড়বে।সেই কেসটাতে আশ্চর্যের বিষয় ছিল এটাই যে ক্রাইম স্পটে খুনি সামান্যতম এমন কোন কিছুই ফেলে যায় নি যেটা ধরে পুলিশ তদন্ত এগিয়ে নিতে পারে।না কোন আঙুলের ছাপ,না কোন মার্ডার উইপন,না কোন হাতাহাতি - ধস্তাধস্তির ফলে ভেঙে পড়া জিনিসপত্র।খুনি কোন কিছুই ফেলে যায়নি। এ থেকেই বুঝা যায় খুনি খুবই প্রফেশনাল,নয়তো পুলিশের ক্রাইম সিন সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভালো ধারণা রাখে।দৃশ্যমান আঘাতের মধ্যে গলার পেছনের দিকে দুটি ছুরির আঘাত আর বুকের বাম পাশে একটি ক্রস মার্ক।সেই থেকেই এই ক্রস মার্ক আমার মাথায় ঢুকে গেছে।এই চিহ্ন দিয়ে খুনি কি বুঝাতে চাইছে? সে কি কোন হিডেন মেসেজ দিয়ে গেলো! নাকি নিছক মনের খেয়ালে একটা চিহ্ন এঁকে রেখে গেলো।সেই তদন্ত এখনো চলছে,অগ্রগতি সামান্যই।রুমের ভেতরে স্টিলের বাটি জাতীয় কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম। মাত্রই খেয়াল আসলো আমি এখনো বারান্দায় বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে আছি।সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাত এখনো অনেক বাকি।চেয়ার ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।মেহরীন এখনো মরার মতো পড়ে ঘুমোচ্ছে, তার চুল এসে পড়েছে মুখের উপর।ঘুমের মধ্যে মেয়েদের সৌন্দর্য বুঝি আরও বেড়ে যায়।
অফিসের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে একটা পুরোনো গান মনে মনে গাওয়ার চেষ্টা করছি "মনেরি রঙে রাঙাবো, বনেরি ঘুম ভাঙাবো..." বুট ঠুকে সালাম দেবার শব্দ পেলাম।সামনে এস আই ফারুক দাঁড়ানো।এই থানার সবচেয়ে কাজের একজন মানুষ, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন।আমার থেকে বয়সে অনেক বড় বিধায় আমি তাকে ফারুক সাহেব বলে সম্বোধন করি।
:- আসুন, বসুন।
সামনের চেয়ারটাতে এসে বসলেন তিনি।কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তার আগেই আমি মুখ খুললাম
:- ফারুক সাহেব দুটি কারণে আমি আপনাকে অপছন্দ করি।জিগ্যেস করুন কি কি..?
: কি কি স্যার..?
ফারুক সাহেবের মুখের হাসি উবে গেছে।তার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
:- থাক বাদ দিন।বলুন কি বলতে এসেছেন।
: স্যার, জাভেদ পাটোয়ারী খুন হয়েছেন।
:- কোন জাভেদ পাটোয়ারী ? ডায়মন্ডের বিজনেস করতো যে উনি ?
:জ্বি স্যার। কিছুদিন আগে এসেছিল মনে আছে স্যার ? ঐ যে তার স্ত্রী নিখোঁজ, ডায়েরি করতে।
:- হুম...আর তার স্ত্রীর লাশ পাওয়া যায় তার গোডাউনে।
: জ্বি স্যার।মন্ত্রী নাক না গলালে তো ব্যাটা গেছিলো চোদ্দ বছরের জন্যে।
:- ক্রাইম স্পটে গিয়েছিলেন ?
: তেমন কিছু পাওয়া যায়নি স্যার তবে...
:- তবে ?
: সেম টু সেম মাজেদুল হকের কেস স্যার। ফ্যানে ঝুলানো লাশ, ঘাড়ে দুটো স্টেপ আর সেই ক্রস মার্ক।
:- ক্রস মার্ক!!
: বুকের বাম পাশে ছুরি দিয়ে কেটে কেটে বানানো ক্রস মার্ক স্যার।আর আমি যা আশা করছি পোস্টমর্টেম রিপোর্টে এটাই আসবে প্রথমে অজ্ঞান করা হয়েছে।তারপর ছুরি দিয়ে মেরে ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখে গেছে।
:- হুম...আশপাশে খোঁজ খবর নিয়েছেন? কেউ কোন কিছু শুনেছে বা দেখেছে?
: কেয়ার টেকার কে উঠিয়ে এনেছি স্যার। তবে ব্যাটা বলছে সে নাকি ঘুমাচ্ছিলো। কিছু শুনতে বা দেখতে পায়নি।
:- কোন কিছু চুরি?
: না স্যার।আলমারি খোলাই হয়নি,অথচ ভেতরে চার লাখ টাকা ক্যাশ।এমনকি স্যার মোবাইলটাও নেয় নি।
:- ঠিক আছে।আপনি তদন্ত চালিয়ে যান।আর আমাকে নিয়মিত আপডেট দিবেন।
: স্যার মাজেদুলের কেসটাও আমি দেখছি।
:- হ্যাঁ এজন্য এটাও আপনাকেই দিচ্ছি।খুনের ধরন একই যেহেতু একজনই দেখুক দুটি কেস।আপনার কোন অসুবিধে আছে ?
: না স্যার। অসুবিধে নেই স্যার। তবে..
:- তবে ?
: স্যার বলছিলেন আমার কি কি যেন অপছন্দ করেন..
মনে মনে হেসে উঠলাম আমি।
:- হ্যাঁ করি।কিন্তু গুরুতর কিছু না।আচ্ছা আসুন আপনি এবার।কোন প্রয়োজন পড়লে আসবেন।
ফারুক সাহেব আরেক দফা সালাম ঠুকে চলে গেলেন।তাকে আমি ভালোভাবেই চিনি। তিনি এখন একটা দুশ্চিন্তায় থাকবেন।আমি তার কি অপছন্দ করি এটা নিয়ে ভাববেন,ভাবতেই থাকবেন।কেসে মন দিতে পারবেন না ঠিকঠাক।অথচ আমি জানি তিনি যে কারণে দুশ্চিন্তায় থাকবেন তা আদৌও কিছুই না।হ্যাঁ আমি তার দুটি অভ্যাস অপছন্দ করি।এক তাকে না বলার পরও তিনি প্রতিদিন এসে বুটে সালাম ঠুকে বসবেন আর দুই তিনি প্রচুর পান খান।সারাক্ষণ তিনি পান চাবানোতেই আছেন।এইজন্য প্রায়সময়ই জুনিয়রদের মাঝে তাকে নিয়ে পান ফারুক বলে হাসাহাসি করতে শোনা যায়।আমি আবার চেয়ারে হেলান দিয়ে পুরনো গান টা মনে করার চেষ্টা করলাম "মনেরি রঙে রাঙাবো,বনেরি ঘুম ভাঙাবো...”

বড় বাসায় স্বামী-স্ত্রী একা থাকার মাঝে একটা আলাদা সুখ আছে।যেমন আমার তিন রুমের বড় বাসায় মানুষ কেবল আমি আর মেহরীন।বাসার সব কাজ সে একাই করে।কাজের মানুষ রাখার বিপক্ষে সে সবসময়ই।সহজ কথা, কাজের মানুষে তার কোন ভরসা নেই।তার সকল ভরসায় জায়গা যেন একমাত্র আমি।আর না-ই বা হবে কেন।সেই কলেজ থেকে মেহরীনের সাথে সম্পর্ক। কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটি। ইউনিভার্সিটি পেরিয়ে পুলিশের চাকরিতে ঢুকা অব্দি অনেকটা সময়।এই সময়ে মেয়েটা অনেক লড়াই করে গেছে।একের পর এক বিয়ে ভেঙেছে, বাসায়-প্রতিবেশীদের কত রকম কথা শুনতে হয়েছে।কিন্তু শেষপর্যন্ত আমার সাথেই রয়ে গেছে, সাপোর্ট দিয়ে গেছে সবসময়।এরপর আমাদের বিয়ে হলো একটাসময়।সে প্রায় নয় বছর আগেকার কথা।আমাদের কোন সন্তান নেই।কিন্তু এ নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই।আমিও তাকে কখনো এ নিয়ে ভাবতে দিইনি। তবে মেয়েদের মন খুবই জটিল। সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে একটু জটিল করেই তৈরী করেছে বোধহয়। মেহরীন মাঝে মধ্যেই উদাস হয়ে পড়ে। আমি জানি সে কি নিয়ে ভাবে তখন।কিন্তু আমি তাকে বেশিক্ষণ এই নিয়ে ভাবতে দিই না। থানার ড্রাইভার আব্বাসকে ফোন করে বলি গাড়ি নিয়ে আসতে।
:- চলো, আজ তোমার বিশ্রাম।বাইরে খাওয়া দাওয়া করে আসি।
মেহরীন কয়েকবার না করলেও একটু পর সে ঠিকই কালো পাড় নীল শাড়ি পড়ে এসে সামনে দাঁড়ায়। আমি তখন তাকে সেই ইউনিভার্সিটির মেহরীনের সাথে মেলাবার চেষ্টা করি।সেই চঞ্চল মেয়েটা এখন কত শান্ত।কপালে চুমু দিয়ে বলি "আমার বউটাকে আজ অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।" মেহরীনের মুখে হাসি ফুটে উঠে। এই হাসির মূল্য অনেক।

প্রায় তিন ঘন্টা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে মিটিং শেষ করে থানায় এসে বসলাম।একটু ক্লান্তি লাগছে। আর আমি তো আমাকে ভালোভাবেই জানি।একটু হেলান দিলেই এখন ঘুমিয়ে যাবো। তার চেয়ে ভালো কেসগুলোর ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নেয়া যাক।মাজেদুল আর জাভেদ পাটোয়ারীর কেসদুটি নিয়ে বেশ চাপে আছি।সরকারের উপর মহল অব্দি তাদের চেনাজানা ছিলো। তার উপর এক মন্ত্রী সার্বক্ষণিক ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন।
ফারুক সাহেব বুট ঠুকে সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলেন।তার ঠোঁট-মুখ লাল হয়ে আছে।মানে একটু আগেই পান খেয়েছেন।
:- বসুন
: থেংক ইউ স্যার।
ফারুক সাহেবকে চিন্তিত মনে হচ্ছে।কেসদুটি নিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন বুঝতে পারছি।আমি সরাসরিই প্রশ্ন করলাম
:- তদন্তে কিছু অগ্রগতি পেলেন ?
: না স্যার।একদমই কিছু পাচ্ছি না।কোন ক্লু নেই।পরিবার,আত্মীয়,বিজনেস পার্টনার, বৈধ-অবৈধ সম্পর্ক সব দিক ঘেঁটে দেখলাম।সব ক্লিন।বাহিরের কোন ঘটনা মনে হচ্ছে স্যার।কিন্তু সেটা কি বুঝতে পারছি না।
:- হুম..। উপর থেকে চাপ আসছে।কেস আর আমাদের হাতে থাকবে না বেশিদিন বোধহয়।
: না থাকাই ভালো স্যার।বেশ মুশকিলে পড়ে গেছি।এই ঝামেলা থেকে বেরোতে পারলেই আমি বাঁচি।এত এত ভালো মানুষ মরে ধামাচাপা পড়ে যায় কেস।আর এই দুই বদমাইশ মরে গিয়ে আমার ঘুম হারাম করে দিলো।ইয়ে স্যার একজন বয়স্ক লোক সকাল থেকে বসে আছেন।আপনার সাথে দেখা করতে চায়।মুক্তিযোদ্ধা।
:- কি ব্যাপারে..?
: হাউজিং কোম্পানি হাকিম গ্রুপ ভদ্রলোকের জমি দখল করে নিয়েছে বলছেন।তার উপর হাকিম সাহেব নাকি উনার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছেন।
:- হুম..পাঠিয়ে দিন।আর দেখুন কেসগুলোতে নতুন কিছু পান কি না।
: ইয়ে স্যার, একটু সাবধানে সিদ্ধান্ত নিবেন।হাকিম সাহেবকে তো চেনেনই। অনেক উপর অব্দি হাত, তারউপর এত নামীদামী হাউজিং কোম্পানির মালিক।
:- হুম..
ফারুক সাহেব আরেকদফা বুটে সালাম ঠুকে বের হয়ে গেলেন।
আজ দিনটা মেঘলা মেঘলা মনে হছে।রাতে বৃষ্টি হতে পারে।বয়স্ক একজন লোক সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলেন।কপালে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।

মেহরীন আজকে রাতের খাবারে টমেটো দিয়ে শিং মাছের তরকারি রান্না করেছিলো।এটা আমার প্রিয়। ইউনিভার্সিটিতে থাকতে মাঝে মাঝেই রান্না করে দিতো।হলে নিয়ে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খাওয়া হতো।তার রান্না নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবিদার। বন্ধুদের মুখ থেকে তাই প্রেমিকার রান্নার প্রশংসা শোনা হয়েছে বহুবার।আমি মাঝেমধ্যেই ভাবি এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে না হলে কি যে হতো।তার সাথে কাটানো আমার সব স্মৃতিগুলো সব হারিয়ে যেতো।আমার এতো এতো ভালো লাগার স্মৃতি। এগুলো যেন এত বছর পরও জীবন্ত। দেয়াল ঘড়িটা শব্দ করে বেজে উঠল। রাত নয়টা বাজে।আমি টিভি টা রিমোট দিয়ে বন্ধ করে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। মেহরীন আজকে টকটকে লাল একটি শাড়ি পড়েছে।তাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।
কেউ যেন আমার কপালে প্রচন্ড ভাবে আঘাত করলো। আমি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।সামনে থাকা সানগ্লাস পড়া লোকটি তাচ্ছিল্যের সাথে বলতে লাগলো "হারামজাদা জমি নিতে আসছিস।ফকিন্নির বাচ্চা।তখন ভালোভাবে বলছিলাম দাম দেই জমি দিয়ে দে।দিলি না।মাদা** ভাগ এইবার " আমার ঘুম ভেঙে গেলো।শরীরের রক্ত যেন আগুনের মত গরম হয়ে আছে,টগবগ করছে।মেহরীনের দিকে তাকালাম।সে ঘুমোচ্ছে। ডাক না দিলে সকালের আগে উঠবে না।বিছানা ছেড়ে আস্তে করে উঠে দাঁড়ালাম।টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বারান্দার বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজলাম।এখন শুধু বৃষ্টির শব্দ কানে আসছে।প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।মনে করার চেষ্টা করলাম আজকে নতুন কেনা কালো রেইনকোটটা কোথায় রেখেছি ? হ্যাঁ মনে পড়েছে সেটা ঘরে ঢুকার দরজার বামপাশের দেয়ালটার হুকে ঝুলানো আছে।হাকিম গ্রুপের মালিক আলী হাসান হাকিম।একসময়ে ছিঁচকেচোর ছিলো।সেই থেকে এখন কোটি টাকার মালিক।বড় বড় মন্ত্রী-আমলাদের সাথে উঠাবসা।সবমিলিয়ে ছাব্বিশটি কেস পেন্ডিং তার বিরুদ্ধে। বাসার ঠিকানা মিরপুর দুই,ব্লক সি,রোড উনিশ,হাউস নং এইট,তৃতীয় তলা।সিগারেটে আরেকটি লম্বা টান দিলাম।বাইরে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে।
অতি বৃষ্টির কারণে ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ মনে হচ্ছে।রোডলাইটগুলো নেভানো।খুব কাছেই একটা বজ্রপাত হলো বোধহয়,এক মূহুর্তের জন্যে আলোকিত হলো চারপাশ। কালো রেইনকোট পড়া একটা ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এলো আফিসার ইনচার্জ সানাউল হকের বাসা থেকে, হাতের ধারালো ছুরিটা চিকচিক করে উঠলো।ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অন্ধকারে মিশে গেলো মূর্তিটা।বৃষ্টির পরিমান আরও বাড়লো বোধহয়।উপরের বারান্দায় বেতের চেয়ারটা খালি, সাথে পড়ে আছে সদ্য নেভানো একটি সিগারেটের অবশিষ্টাংশ।
©নাহিদ হাসান সানি

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×