চিন্তা করুন একবার আপনি সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে কোনরকম দু চারটা দানাপানি মুখে দিয়ে ঠিক ৬ টা থেকে ট্রাফিক সিগনাল সামলানো শুরু করলেন।সেই যে শুরু হল একদম দুপুর ২টা/২.৩০ পর্যন্ত টানা ডিউটি।কোন কোন দিন আবার ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে ৪টা/৫টা বেজে যাওয়াও অস্বাভাবিক না।তার উপর মাসে দুইদিন আবার নাইট ডিউটি।তারপর আপনি সারাদিনের বাস-ট্রাকের কালো ধোঁয়া,ধুলোবালি মাখা ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন।পরিবারকে সময় দিলেন,বাজার করলেন,সন্তানদের পড়াশোনা দেখভাল করলেন আরও কত কাজ।রাত শেষে আবার সেই একই রুটিন।এভাবে প্রতিদিন,পুরো সপ্তাহ,পুরো মাস।কেমন বোধ করবেন ?
এটা একজন পুলিশ ট্রাফিক কনস্টেবল,সার্জেন্টের প্রতিদিনকার ডিউটি শিডিউল।থানা কিংবা ব্যারাকে যেসব পুলিশরা কর্মরত থাকে তাদের অবস্থা আরও দূর্বিষহ। হ্যাঁ এখন আমরা যুক্তি দিয়ে বলতেই পারি যে পুলিশ ২৪ ঘন্টা অন ডিউটি।সে এই চুক্তিতেই চাকুরিতে আসে।সত্য। কিন্তু পুলিশ তো মানুষই।আপনি,আমি,আমাদের বাবা,মা,চাচা,ভাই,বোন থেকেই কেউ না কেউ পুলিশে যাচ্ছে দেশকে সেবা দেবার জন্য।পুলিশ তো কোন রোবট না যে তার আরাম আয়েশের দরকার পড়ে না।তার পরিবারের সাথে সময় কাটানোর প্রয়োজন হয় না।
অন্যান্য সরকারি-বেসরকারী চাকুরীজীবিরা যেখানে ২দিন/১ দিন করে সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করছে তার থেকে পুলিশকে এভাবে সাপ্তাহিক ছুটি বঞ্চিত রেখে একজন পুলিশের থেকে সবসময় সঠিক সেবার পাশাপাশি সুব্যবহার আশা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ?ঢাকা শহরের মত যানজটপূর্ণ শহরে ১০ মিনিট একটা ট্রাফিক সিগনালে আটকা পড়ে থাকলেই যেখানে অসুস্থতা অনুভব হয় সেখানে দিনের পর দিন টানা ডিউটি পালন করা মানুষগুলোর শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি কে দেখবে ?
পুলিশের প্রথম শ্রেনীতে যারা কর্মরত আছেন তাদেরও সাপ্তাহিক কোন ছুটি নেই কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় দেখা যায় বড় পজিশনে থাকলে আপনা আপনি থেকেই একটা ছাড়ের জায়গা তৈরি হয়ে যায়। তারা নিজেদের সুবিধামত সময় ঠিকই বের করে নিতে পারছে। কিন্তু যারা এস.আই,এ.এস.আই,কনস্টেবল বা তারও নিচে কর্মরত তাদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগটা থাকছে না।অথচ জনগণের সাথে এদেরই সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকে।
পুলিশের দূর্নীতি সেটি একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।তা নিয়ে এখানে আলোচনা করতে চাই না।কিংবা এটাও বলতে চাই না যে শুধুমাত্র সাপ্তাহিক ছুটি নেই বলেই অনেকে পুলিশের বাজে আচরণের শিকার হন।তবে মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় পুলিশ সপ্তাহে অন্তত একদিন ছুটি প্রাপ্তির দাবিদার।আর সেটা অনেকভাবেই করা যেতে পারে।সরকার এবং বাংলাদেশ পুলিশের এ ব্যাপারে মনযোগী হওয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৪