যখন মিডিয়াতে এই খবর আসা শুরু হল যে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় আসছেন,তখন থেকেই দেশে একটা মোদি বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন ধরে ইসলামিক কিছু দল পাশাপাশি নুরুল হক নুরের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং কিছু বামপন্থী দল ঢাকার রাস্তায় বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করেছে।আজ ২৬শে মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস।এবং পূর্ব সূচি অনুযায়ী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে ঢাকায় অবস্থান করছেন।এই লিখা যখন লিখছি তখনও বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সাথে ইসলামপন্থী কিছু দলের সমর্থকদের সংঘর্ষের খবর আসছে।
কেন হঠাৎ এই মোদি বিরোধী আন্দোলন ?একটা সময় ভারতে এন.আর.সি,সি.এ.এ এর কথা খুব জোরেশোরেই হচ্ছিল সেটা কতটুকু বাস্তবিক বা রাজনৈতিক তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতেই পারে কিন্তু এখন এই মূহুর্তে না ভারতে না বাংলাদেশে এন.আর.সি,সি.এ.এ নিয়ে কোন আলোচনা হচ্ছে।কাশ্মীর ইস্যু এই অঞ্চলের একটি অতি পুরোনো দীর্ঘশ্বাস। ১৯৪৭ এর পর থেকেই কাশ্মীরিদের স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করে পাকিস্তান-ভারত ছেলেখেলায় মত্ত।ভারত তাদের নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা রদ করেছে যা ভারতের দিক থেকে বিবেচনা করলে খুব একটা বেঠিক বলে বিবেচনায় আসে না।ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের কিছু ইসলামিক দল মোদির বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তোলে বরাবরই কিন্তু তারা চীন কর্তৃক উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের বেলায় চুপ থাকে।সৌদি কর্তৃক ইয়েমেনীদের উপর নির্যাতনের বেলায় চুপ থাকে। তুরস্ক কর্তৃক কুর্দিদের উপর নির্যাতনের বেলায় চুপ থাকে।আজ যদি শী জিন পিং, এরদোগান বা সৌদির মোহাম্মদ বিন সালমান দেশে আসতো তবেও কি এমন আন্দোলন দেখা যেত ?
ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলিম বিরোধী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে এটা অনেকটা সত্য।মূলত ভারতে বিজেপির এখনকার শক্তিশালী অবস্থানের পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বিজেপির কাশ্মীর ইস্যুতে শক্ত অবস্থান এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কট্টরপন্থী হিন্দু দলগুলোকে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং মুসলিম নির্যাতন করার সুযোগ করে দেওয়া।বর্তমান বিজেপি সরকারের এই মুসলিম বিরোধী নীতি যতটা না আদর্শিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বলে মনে হয়। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যে এটা একটা দারুণ অস্ত্র বিজেপি সরকারের জন্য।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে আসার আমন্ত্রণ জানানো কতটা যুক্তিযুক্ত ? আমি এখানে শতভাগ বলব।কারণ নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোন নির্দিষ্ট দলের নেতা হিসেবে নয়।এখানে মোদির জায়গায় অন্যকেউ প্রধানমন্ত্রী থাকলে তিনি আসতেন। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অবশ্যই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মিত্রদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী,রাষ্ট্রপতি সবার আগে আমন্ত্রণ পাবার যোগ্য। পাশাপাশি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল,ভুটান,শ্রীলঙ্কা,মালদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানরাও বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন।আমাদের অতিথিদের প্রতি আমাদেরকে অবশ্যই সমানভাবে সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।
নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি ভারত বিরোধিতা বেশিরভাগটাই রাজনৈতিক। এখানে ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে আমাদের বামপন্থী দলগুলোর অংশগ্রহণ আশ্চর্যজনক ব্যাপারই বটে।ইদানীংকালে বেশিরভাগ বাংলাদেশীরা ভারত বিরোধী বিষয়গুলোকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে পছন্দ করছে।যেখানেই ভারত বিরোধিতা সেখানেই বাংলাদেশীদের মধ্যে বড় একটা জনগোষ্ঠী আনন্দ খুঁজে পান,এবং সমর্থন প্রদান করেন।এটা সম্পুর্ণই মনস্তাত্ত্বিক ব্যপার।আর এটাকেই পুঁজি করতে চাইছে ইসলামিক দলগুলো,পাশাপাশি নুরুল হক নুরের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এর মাধ্যমে যদি জনমনে প্রতিষ্ঠা হওয়া যায় তবে মন্দ কি! এটা তারা নিজেরাও জানে যে এমন আন্দোলন করে মোদির ঢাকা সফর বাতিল হবে না। মোদি বিরোধী আন্দোলন বা ভারত বিরোধী আন্দোলন তাই এইসকল দলগুলোর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের পথ সুগম করার প্রয়াস বলাই যায়। এইদিক থেকে তারা লাভবান।
এই তথাকথিত মোদি বিরোধী আন্দোলনের আরেকটি লাভবান গোষ্ঠী হল আমাদের বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার।জ্বি হ্যাঁ।আমাদের বর্তমান সরকারের সাথে একাত্তরের মিত্রদেশ ভারতের সুসম্পর্ক কতটুকু গভীর তা বলার অপেক্ষা রাখে না।আর মোদি দেশে আসার পূর্বে যদি ঢাকার রাস্তায় টুপিওয়ালাদের একটা আন্দোলন হয়ে যায় তবে দিল্লি এই ম্যাসেজটা খুব ভালোভাবে পাচ্ছে যে এই সরকারের আমলেই যদি ঢাকায় ভারত বিরোধী/মোদি বিরোধী বিক্ষোভ হয়,তাহলে অন্য কোন সরকারের আমলে কি হবে !আমাদের ইসলামী দলগুলো যখন ঢাকার রাস্তায় যুক্তিহীন মোদি বিরোধী বিক্ষোভ করছে তখন তারা জেনে বা না জেনে বর্তমান সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক উন্নতির পথটা আরও সুগম করে দিচ্ছে।কে জানে সরকার ভেবে চিন্তেই আন্দোলন করার জন্য একটু ছাড় দিল কি না !