এ সবকিছু দেখে বৃটেনের প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানরা বিচলিত হয়ে পড়ে। প্রোটেস্ট্যান্টরা ভাবতে শুরু করেন জেমস দ্বিতীয় ব্রিটেনকে একটি পুরোপুরি ক্যাথলিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছেন। তাদের এ ধারণা আরও পাকাপোক্ত হয় যখন রাজা জেমস দ্বিতীয় তৎকালীন রাজ্য সংসদ রদের ঘোষণা দেন। তিনি সংসদে তার নিকটস্থ লোকদের নিয়োগ দিতে থাকেন যাতে করে সংসদেও রাজার সর্বোচ্চ ক্ষমতা বজায় থাকে।
কিন্তু এত কিছুর পরও প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানরা আশার আলো খুঁজে পান রাজার মেয়ে মেরির মধ্যে। রাজা জেমস দ্বিতীয় ক্যাথলিক হলেও মেরি ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট। আর তখন অব্দি রাজার কোন ছেলে সন্তান না থাকায় স্বভাবতই রাজার মৃত্যুর পর মেরি বৃটেনের রানী হতেন।
কিন্তু বিধিবাম রাজার দ্বিতীয় স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন এবং রাজা ঘোষণা করেন তিনি তার এই সন্তানকে ক্যাথলিক হিসেবে বড় করবেন।
এ সবকিছু দেখে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মগুরুরা রাজার নিকটস্থ কিছু কর্মকর্তাদের সাথে মিলে মেরির স্বামী উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ কে ব্রিটেন আক্রমণের জন্য চিঠি পাঠালো। উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ ছিলেন ডাচ সর্বাধিনায়ক। প্রতিবেশী ফ্রান্সের সাথে তার যুদ্ধ লেগেই থাকত তিনি ভাবলেন যদি তিনি বৃটেনের রাজা হয়ে যান তবে বৃটেনের সহায়তায় তিনি ফ্রান্স আক্রমণ করতে পারবেন।
অবশেষে ১৬৮৮ সনে উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ ৩৫ হাজার সৈন্য নিয়ে ব্রিটেনে উপস্থিত হন। রাজা এক সবকিছু দেখে মৃত্যুভয়ে ফ্রান্স পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু তার নিকটস্থ কর্মকর্তাদের নিকট বন্দি হন। কিন্তু মাসখানেক পর দ্বিতীয় চেষ্টায় তিনি ফ্রান্স পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ফ্রান্সের তৎকালীন রাজা ছিলেন জেমস দ্বিতীয় এর চাচাতো ভাই লুই চোদ্দ।
এদিকে উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ বৃটেনের নতুন রাজা এবং স্ত্রী মেরি রানী নির্বাচিত হন। উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ পুনরায় সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ডিক্লারেশন অফ রাইটস বিল পাস করার মাধ্যমে বৃটেনের রাজতন্ত্রের ইতিহাসই পরিবর্তন করে দেন। এই বিল পাস হওয়ার ফলে সংসদে জনগণের মতামতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। রাজার সিদ্ধান্তে বাধা প্রদানের ক্ষমতা অর্পিত হয় সংসদের উপর। যার ফলে প্রথমবারের মতো ব্রিটেন একটি সাধারণ রাজতন্ত্র থেকে হয়ে ওঠে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র।
এই বিলটি পরবর্তীতে বিল অফ রাইটস নামে পরিচিতি পায় এবং সময়ের সাথে সাথে বৃটেনের রাজার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পেতে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। ইতিহাসের পাতায় রক্তপাতহীন এ বিপ্লব ❝গ্লোরিয়াস রিভলিউশন অফ ১৬৮৮❞ নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩২