somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালীর আত্মসমালোচনা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইউক্রেনের বর্তমান অবস্থা আর বাংলাদেশের একাত্তরের অবস্থার মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হল, ইউক্রেনের পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ডে একজন ইন্দিরা গান্ধী নেই। ২০২২ এর এই সময়ে ভ্লাদিমির পুতিন ভালো করেই জানে গোটা ইউক্রেন দখল করে নিলেও বিশ্বের অন্য কোন দেশ তার সেনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসবে না। অন্যদিকে একাত্তরের এপ্রিলে ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউনাইটেড নেশন, গোটা আরব বিশ্ব, পাকিস্তান এবং চীনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মনোনিবেশ করেন। সে মাসেই তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান কে ডেকে বলেন, “You [Manekshaw] must stop them. If necessary, move into East Pakistan but stop them.” এই মহিলার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরোটাই বোধহয় কলিজা ছিল। মার্গারেট থেচারকে কোন আক্কেলে আয়রন লেডি খেতাব দেয়া হলো তা বুঝে আসেনা কিন্তু নিঃসন্দেহে এশিয়ার আয়রন লেডি ইন্দিরা গান্ধীই। বিশ্ব দরবারে তার কূটনৈতিক সক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে এসেই অকৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পেছনে এই মহীয়সী নারীর অবদানকে ভুলতে বসেছে। সবকিছুকে ধর্মের চশমা দিয়ে দেখতে আমরা এখন বড্ড ভালোবাসি। অথচ তার জায়গায় নামটা এপিজে আবদুল কালাম হলে আমরা কিন্তু ঠিকই মাথায় নিয়ে নাচতাম।

ইন্দিরা গান্ধী তো তাও পার্শ্ববর্তী দেশের।আমরা অন্তর থেকে পঁচে যাওয়া জাতি তো নিজ দেশের হিরোদেরকেই গণহারে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দিতে ব্যস্ত। সরকার চেঞ্জ হয় তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ইতিহাসও চেঞ্জ হয়। স্বাধীনতার ঘোষক কে এ নিয়ে মারামারি হয়। সংসদের মত জায়গা রঙ্গ মঞ্চ। পোশাক রপ্তানি প্রতিবছর বছর আকাশ ছোঁয়,তার সাথে পাল্লা দিয়ে মহাকাশ পেরিয়ে যায় দেশের জিডিপি অথচ বৃদ্ধ কঙ্কালসার একাত্তরের নায়কেরা একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে অশ্রুসিক্ত নয়নে একে একে কবরগত হচ্ছে। তাদের এই চাপা কান্না যেন আবার কোনদিন এই দেশের বুকে অভিশাপ হয়ে নেমে আসে কারণ কথায় আছে না "আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু একদম ছেড়ে দেন না।"

বিশ্ব ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। আগামী বিশ্বে আরো বড় বড় ঘটনা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। পরাশক্তিগুলো তাদের নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য একে অপরকে মরণ কামড় দিবে। আর আমরা জাতি হিসেবে দিন দিন যে পরিমাণ নিকৃষ্ট,জঘন্য,আত্মভোলা এবং নাফরমানে পরিণত হচ্ছি ভবিষ্যতে ইউক্রেনের মত এমন কোনো পরিস্থিতি সামনে এসে পড়লে, একাত্তরে সাত কোটির মধ্যে তাও আড়াই লাখের মতো দেশ প্রেমিক অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল কিন্তু এখন হয়তো আড়াইহাজার খুঁজে পাওয়াই কঠিন হবে। কারণ দেশপ্রেম তো আর কোন গান না যে অনলাইন থেকে ডাউনলোড দিয়েই আমি দেশপ্রেমিক হয়েগেলাম।দেশপ্রেম বছরের-পর-বছর চর্চা করতে হয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দেশপ্রেম ছড়িয়ে দিতে হয়। নতুন প্রজন্মকে দেশ গঠনের পেছনের নায়কদের গল্প শোনাতে হয।

আমরা দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি পরে, তার আগে আমরা হচ্ছি বিএনপি-আওয়ামী লীগ। আমরা হচ্ছি হিন্দু-মুসলমান। আমরা হচ্ছি স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি-বিপক্ষ শক্তি। আমরা হচ্ছি শাহবাগী-শাপলা চত্বরী। আমরা হচ্ছি ডেমোক্রেট-কমিউনিস্ট। আমরা হচ্ছি আস্তিক-নাস্তিক। আমরা হচ্ছি অমুক ইউনিভার্সিটির-তমুক ইউনিভার্সিটির। এইরকম হাজার ভাগে বিভক্ত আমরা। শুধুমাত্র ক্রিকেটেই বোধহয় গোটা জাতি একত্রিত হয়। তাও তো না। এখন তো আবার বাংলাদেশের খেলাতেও সগৌরবে বাঙালির হাতে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ে।

বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছি। আরো বেশি ভঙ্গুর হচ্ছি। নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের শুধরাতে হবে। নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। শুরুটা নিজে থেকেই করা উচিত। সুশিক্ষিত সুশৃংখল দেশপ্রেমিক জাতি দিয়ে একটি সফল রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। বাঙালি জাতি হিসেবে সবাই এক সুরে এক কণ্ঠে বলতে চাই," আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।"
ও এখন তো আবার এই গানেও বাঙালি বিভক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:৫২
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×