আমেরিকার ক্ষমতা দিন দিন বিশ্ব দরবারে হ্রাস পাচ্ছে।এশিয়াতে আমেরিকার দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার উপর পানি ঢেলে দিয়েছে ভারত।পৃথিবীর সবচাইতে বড় মহাদেশে এক জাপান আর দ.কোরিয়া ছাড়া আমেরিকার কোন মিত্রদেশ নেই।দূর্ভাগ্যবশত এই দুইটি দেশও সামরিক দিক থেকে উঠতি শক্তি চীনের ধারেকাছেও নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে গোটা এশিয়া রাশিয়ার পক্ষে নিরব সমর্থক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এতে আকাশ থেকে পড়ার মত কোন ঘটনা ঘটে নি।ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় আজকের ভারত,বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামে সোভিয়েত ইউনিয়ন ঢাল হয়ে আমেরিকা-বৃটিশদের সামনে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং আসিয়ান দেশগুলো জন্মগত ভাবেই সোভিয়েত বা রুশপন্থী।
অন্যদিকে এই দেশগুলোর সামরিক সরঞ্জামাদির চাহিদা সেই সূচনালগ্ন থেকেই রাশিয়া পূরণ করে আসছে। খোদ ভারতের মতো আঞ্চলিক শক্তির সামরিক সরঞ্জামাদির ৭৫ ভাগ রাশিয়ার তৈরি। এমন অবস্থায় রাতারাতি রাশিয়ার পক্ষ ছেড়ে দেওয়া বোধহয় এ অঞ্চলের কোন দেশের জন্যই সম্ভব হয়ে উঠবে না।
অন্যদিকে রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোর বিস্তার বন্ধ করতে আমেরিকাকে বারবার বলে আসলেও মার্কিনীরা বিষয়টি একপ্রকার গাছাড়া ভাবে এড়িয়ে গেছে। মার্কিনিরা বোধহয় খানিক সময়ের জন্য ভুলে গেছিল সাবেক সোভিয়েত কেজিবির গোয়েন্দা ভ্লাদিমির পুতিন এখনো পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিরে পাবার স্বপ্ন দেখেন। অবশেষে ইউক্রেন এখন যুদ্ধ ভূমি। একদিকে রাশিয়া প্রতিদিন একটু একটু করে ইউক্রেনের দখল নিচ্ছে আর অন্যদিকে ব্যবসায়ী শকুন আমেরিকা ইউক্রেনের ৩০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ অস্ত্র সহায়তার নামে লুটেপুটে নিচ্ছে।
একটি আগ্রাসী রাশিয়া আমেরিকার অস্ত্র বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া যত বেশি আগ্রাসী হবে ইউরোপ থেকে আমেরিকার ঝুলিতে ততবেশি অস্ত্রের অর্ডার পড়বে। এইতো সেদিন পোল্যান্ডকে রাশিয়ার ভয় দেখিয়ে ২৫০ টি ট্যাংক বেচে দিল আমেরিকা। মূল্য মাত্র ছয় বিলিয়ন। এই ভয় দেখানোর কাজটি খুব সুন্দরভাবে করছে বিবিসি, সিএনএন, ভয়েস অফ আমেরিকা ইত্যাদি নামক আমেরিকার প্রোপাগাণ্ডা মিডিয়া হাউজ। আফগানিস্তান, ইরাক,লিবিয়া যুদ্ধে এই মিডিয়া খুব ফলাও করে মার্কিন সামরিক অভিযান,তাদের হ্যাডম প্রচার করেছে। আর ইউক্রেনের ক্ষেত্রে প্রচার করছে ইউক্রেনবাসী রুখে দাঁড়িয়েছে,ইউক্রেনবাসী টানেলে আশ্রয় নিয়েছে।এক কমেডিয়ান জেলেনস্কি ২দিন পর পর কোত্থেকে এসে পাগল ছাগলের মত আবল তাবল বলে যায়,যেখানে সে এখন নিজেই ইউক্রেনে নাকি পোল্যান্ডে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাশিয়ার মত পরাশক্তিকে বেশিদিন আটকে রাখার কথা বলা কোন দিক থেকেই বাস্তবসম্মত না। আমেরিকার মত তীব্র আক্রমণ করা শুরু করলে ইউক্রেন দখল করতে রাশিয়ার বড়জোড় ১৫ দিন লাগতে পারে।কিন্তু এতে প্রচুর বেসামরিক লোক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। অন্যদিকে এই ফুটেজ ধরতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের এমন কোন বিল্ডিং বাকি নেই যেখানে এই নিউজ চ্যানেলের ক্যামেরা বসানো হয় নাই। এক ইরাক আক্রমনের সময়ই ইরাকে টানা ৪০ দিন বোম ফেলেছে আমেরিকা।ভিয়েতনাম,কোরিয়া, লাওসে গ্রামের পর গ্রাম বোম মেরে ছাই করে দিয়েছে এই আমেরিকা। আরব বসন্তের নামে মধ্যপ্রাচ্যকে গোরস্তানে পরিণত করেছে। সর্বসাকুল্যে কথা হল গিয়ে তারা করলে মানবতার ফেরিওয়ালা আর রাশিয়া,চীন করলে আগ্রাসন।
বাইডেনের একটা ফোনকলই যথেষ্ট এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু এই বুড়া ভাম সেটা করবে না। কেন করবে ? টাকা তো আমেরিকাতেই আসতেছে।যুদ্ধ বিগ্রহ যা হোক সব তো ইউরোপেই ঘটবে। তবে বিশ্ববাসীর জন্য খারাপ সংবাদ হল গিয়ে আমাদের হয়তো যেকোন দিন ঘুম থেকে উঠে শুনতে হবে ইউক্রেনে বা পোল্যান্ডে ছোটখাটো একখানা পরমাণু হামলা ঘটে গেছে। সাথে সাথে গোটা ইউরোপ একদম চুপ করে যাবে,আর কোন টু শব্দটিও করবে না কেউ।ইউরোপ তখন ঠিকই বলবে আচ্ছা ঠিক আছে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতেছি,এইবার থামেন পুতিন সাহেব। সামরিক দিক থেকে যতই এগিয়ে থাকুক না কেন রাশিয়া, অর্থনৈতিক দিক থেকে রাশিয়ার কোমর ভেঙে দেয়ার মিশনে নেমেছে তথাকথিত মানবতাবাদী মার্কিন গংরা। রাশিয়ার অবস্থা ঠিক ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার জার্মানদের মত হচ্ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে পুতিন বড় পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে বলে মনে হচ্ছে না। আর এমনটা হলে নতুন করে পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির দৌড় ঝাঁপ দেখবে বিশ্ব।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১২:১৫