সংসদ ভবনের পাশে মানিক মিয়া এভিনিউতে সেদিন একা বসেছিলাম। পাশেই ৫/৬ জন আর্টিস্ট তাদের স্কেচিং নিয়ে ব্যস্ত। ক'দিন ধরেই ভাবছিলাম নিজের একটা ছবি আঁকাবো। চোখ বুলাতেই দেখলাম একটু দূরে একজন পেন্সিল-আর্ট পেপার নিয়ে বসে আছে। অন্য আর্টিস্ট দের সবারই ৮/১০ টা অর্ডার জমা, তাই তারা আকাআকিতে ব্যস্ত। কিন্তু ওই আর্টিস্টের কাছে একটাও অর্ডার নেই। ভাবলাম সুবিধাই হল। এখনি বসে স্কেচ করিয়ে নেয়া যাবে। এগিয়ে গিয়ে কথাবার্তা বললাম। টাকার কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো "আগে পুরো ছবিটা আঁকান, পরে যা মন চায় দিয়েন"
বসে গেলাম। আঁকছেই তো আঁকছে.....
কিন্তু সমস্যাটা হল লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে আঁকছেনা, বারবার একটা আয়নায় তাকাচ্ছে শুধু। বিরক্ত হয়ে ১০ মিনিট পর উঠে গেলাম তার কাজ দেখতে। ব্যাটা ফাজিলের কাছে কেন যে কেউ আঁকায়না তা বুঝলাম। বলদটা একটা আস্ত কঙ্কালের ছবি একেছে এতাক্ষণ। কঙ্কালটা বসা অবস্থায় ছবি আঁকছে।
মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম কেন এই ফাজলামি টা করলো। জবাব দিলো- "মামা, সবার ছবিতো আঁকি। আজকে একটু নিজের ছবিটা আঁকলাম আরকি"
আমি-"মানে কি? এইটা তোমার ছবি হইলো? এটাতো পুরনো একটা কঙ্কালের ছবি"
সে-"হুম মামা। ৪ বছর আগে কবর দিসে আমারে, এতোদিনে তো কঙ্কাল পুরান হইবই"
কথাটা বলেই বিচ্ছ্রি একটা হাসি দিলো সে। লক্ষ্য করলাম তার জ্বিহবা নেই!
নিঃশ্বাস ফেলার আগেই ওই জায়গা থেকে পঞ্চাশ কিঃমিঃ/ঘন্টা বেগে দৌড়ালাম। ৫ মিনিটেই আসাদ গেট পৌছালাম। তড়িঘড়ি করেই একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়লাম। রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করলো-"কই যাইবেন মামা?"
-"আরে সামনে চল। কই যাবা পরে বলতেসি"
-"কই যামু হেইটা না কইলে ক্যামনে যামু?"
রাগে গজগজ করতে করতে রিকশাওয়ালা কে ঝাড়ি দিয়ে বললাম "তোমার বাসায় যাও, তারপরেও রিকশাটা চালাও"
তখনি রিকশাওয়ালা টা আমাকে বললো-"আজিমপুর গোরস্থান তো মেলা দূর মামা, একশ ট্যাহা দেওন লাগবো"
আমি রিকশাওয়ালার দিকে তাকালাম। সে ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।
সেই জ্বিহবাহীন হাসির লোকটা.........!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২২