somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাবিব আলীর পতাকা পুরাণ

২১ শে জুন, ২০০৭ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাবিব আলীর শখটা অনেক দিনের। বুকের মধ্যে যত্নে লালন পালন করতে করতে পুষ্ট শখ কখনও পুরন হবে কিনা এই নিশ্চয়তা না থাকলেও হাবিব আলী স্বপ্ন দেখার হাল ছাড়েনি। সে স্বপ্ন দেখেই যায়। শখ পুরনের স্বপ্ন।
মানুষের সকল ইচ্ছা পূর্ন হয়না। তবু মানুষ নতুন নতুন ইচ্ছা নিয়ে মেতে উঠে। অনেকেই পুরনো শখ ভুলে যায়। কিন্তু হাবিব আলী ভুলেনা। যতদিন যায় শখ বাড়তে থাকে, তাতে চেকনাই লাগে। শখের জেল্লা বাড়ে। শখ পুরনের ফন্দি ফিকির আবিস্কারে ব্যয় হয় হাবিব আলীর রোজকার কিছুটা সময়। কিন্তু সফল লভেদী বুদ্ধি আবিস্কার করা হয়ে উঠেনা।
অবশেষে এল বুদ্ধি। শানদার এক বুদ্ধি। যখনই এই বুদ্ধিটা মাথায় আসল তখনই শুরু হল সমস্যা। নিজের মাথার চুল নিজেই ছেড়া শুরু করল হাবিব আলী। এই ব্যপারটা এতদিন ধরে ঘটছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আর তার মাথায় কিনা এতদিন পরে আসল! নিজেকে সে কুৎসিত ভাষায় গালি দিতে লাগল।

একসময় হাবিব আলীর মাথা ঠান্ডা হল। সে তার শখ, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতে বসল। কিন্তু সেটা মোটেই সহজ নয়। দিব্যওচাখে নিজেন স্বপ্নের রুপায়ন দেখে তার মনের ডুগডুগি অবিরাম বাজতে থাকায় মন ও মগজকে পুরুপুরি শিতল করা যায়না। অবশেষে অনেক চেষ্টায় হাবিব আলী তার কর্মপর্যায় নির্দিষ্ট করতে সম হল।

১৯৯৯ সালের পহেলা মে। সকাল দশটা। হাবিব আলী তার বাড়ির সামনে সাত হাত লম্বা, আড়াই হাত পেট মোটা লাল একটা ব্যানার টাঙ্গালো যাতে সাদা হরফে লেখা “বিশ্বকাপে বঙ্গশার্দুল”। মানুষজন এই ব্যানার দেখে পুলক অনুভব করল। বস্তুত: বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলছে, দেশের প্রতিটি মানুষ এই কথা জানে। এবং এজন্য সবসময় মনে আনন্দ অনুভব করে। তার উপর হাবিব আলীর এই ব্যানার সবার কাছে আরামদায়ক নিঃশ্বাসের মত মনে হল। সেদিন বিকেলেই হাবিব আলী বাড়ির ছাদে বাংলাদেশের একটি পতাকাও উড়িয়ে দিল। মানুষের প্রিত অনুভব এতে আরও বেড়ে গেল। কিন্তু সেটা বিশ্বকাপ শুরুর দ্বিতিয় দিন পর্যন্ত! কারন তৃতীয় দিনেই অর্থাৎ ষোল মে সকালে হাবিব আলী তার দীর্ঘ দিন লালিত শখ পুরন করে ফেল্ল!

সেদিন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং পাকিস্তানের খেলা। এই সুজুগে হাবিব আলী তার পেয়ারা পাকিস্তানের পতাকা বাংলাদেশের পতাকার ঠিক পাশেই উড়িয়ে দিল। বিদেশী পতাকা উড়ানোতে উস্তাদ মানুষের জন্য এই ঘটনা তেমন বিকারের নয়। কিন্তু এখানে এটি দৃষ্টি আকর্ষন করল। কারণ পাকিস্তানের পতাকার পাশে বাংলাদেশের পতাকা! তাও আবার প্রায় একহাত ওপরে থাকা পাকিস্তানী পতাকাটা দৃষ্টিকটুই ঠেকছিল।

হাবিব আলী পাকিস্তানী পতাকা ওড়ানোর পরেই প্রস্তুতি নিয়েছিল যেকোন রকম পরিস্তিতি মোতাবেলার। কিন্তু অবাক হয়ে গেল সে! পতাকার ব্যাপারে কথা বলার জন্য কেউ এলনা! দু’দিন পার হল, কেউ আসেনা। হাবিব আলী আবারও নিজেকে গালমন্দ করে। কেন সে এতদিন ভয় পেল! কেন ওড়ালোনা পেয়ারা পাকিস্তানের পতাকা!

বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে বেশ ক’দিন হয়ে গেল। বর্ষার বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে বাজে রঙে লেখা বিশ্বকাপে বঙ্গশার্দুল ব্যানার। বাংলাদেশের পতাকাও উড়ছে শোচনীয় অবস্থায়। আর কী আশ্চর্য পাকিস্তানী পতাকাটা এখনও টিকে আছে সকল সজিবতা নিয়ে! হাবিব আলী এখন এখন প্রায়ই উদাস হয়ে যায়। তার চেহারায় লেপ্টে থাকে বিষাদ। কিন্তু সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। বিষাদমাখা মুখটায় হাসি ফুটে উঠে। হাবিব আলী অপার্থিব এক ভালোলাগায় নতজানু হয় চাঁদতারা খচিত পতাকার সামনে।

___________________________________________________
এই গল্পটা লিখেছিলাম ১৯৯৯ সালে। ছাপা হয়েছিল প্র.আ. বন্ধুসভায়। আরও অনেক লেখার মত এটিও হারিয়ে গিয়েছিল। পরশু রাতে পুরনো কাগজের স্তুপ থেকে এর মূল কপি বেরিয়ে আসে। পড়ে মনে হল এখনও এই গল্পের দিন শেষ হয়ে যায়নি। কিছুটা বদলে দিয়ে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০০৭ রাত ১২:৩৮
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×