somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশরীরী

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সিরিয়াস টাইপ একটা বই পড়ছিলো মিলি। বিষয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। বিষয়টা একটু প্যাঁচালো, বুঝতে সময় লাগছে। যেই মুহূর্তে কিছুটা বুঝে উঠতে শুরু করেছে ঠিক সেই মুহূর্তে বিশ্রীভাবে সেলফোনটা বেজে উঠলো। মিলির মনে হলো, ভুলটা ওরই। বই খুলে বসার আগে ফোনে সাইলেন্ট মুড অন করা উচিৎ ছিলো। এখন হয় ফোন রিসিভ করতে বই ছেড়ে উঠতে হবে অথবা এই বিরক্তিকর শব্দ আরো কিছুক্ষণ সহ্য করতে হবে।
ফোনদাতার ধৈর্য অসীম। পরপর তিনবার ফোন বেজে গেলো। চতুর্থবার আর সহ্য করা গেলো না। অনিচ্ছা স্বত্ত্বে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ফোনের দিকে হাত বাড়ালো। নম্বরটা অপরিচিত।
রিসিভ করে ভয়েজ চেনার পর বিরক্তির মাত্রা আরো চার ধাপ বাড়লো। বছর চারেক আগে যে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে আজকের এই মুহূর্তে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের কঠিন টপিক ছেড়ে সেই ন্যাকা ন্যাকা সময়ের দিকে ফিরে দেখতে কারই বা ইচ্ছে হবে। যতটা বিরক্ত তার থেকে বেশী বিরক্ত কন্ঠে মিলি বললো, “কি চাই তোমার? আর কতবার বললে তুমি বুঝবে ! আমায় ফোন করাটা বন্ধ করবে !”
ওপাশের ব্যক্তি খুব সাবধানে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো । একটু সময় নিয়ে বললো ,
- আজকের পর আর বিরক্ত করবোনা কথা দিচ্ছি। একটাবার বারান্দায় আসবে প্লিজ। তোমায় দেখতে ইচ্ছে হলো হঠাৎ। নিজেকে সামলাতে পারলাম না।
কিছু একটা ছিলো ওর বলায়। অন্যসময় হলে মিলি কখনোই ওর কথামতো বারান্দায় যেত না।
সে দাঁড়িয়ে ছিলো জবুথবু। এই চার বছরেও একটু চেইঞ্জ হয়নি লোকটা আশ্চর্য। সেই কোচকানো বেঢপ সাইজের পাঞ্জাবী, এলোমেলো একমাথা চুল। ল্যাম্পপোস্টের ঠান্ডা আলোর নীচে ওকে আরো খানিকটা রোগা আর লম্বা লাগছিলো। অজান্তেই মিলির মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, এতো রোগা হলে ক্যানো?
ও ক্যামন গোঙানির মতোন করে হাসলো। তারপর বললো, আসছি। তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। এরপর আর দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নিয়ে বসার কোনো মানে নেই।

বাইরে ঠান্ডা বাতাস ছাড়ছে। বৃষ্টি নামবে হয়তো। খিচুড়ি রান্না করা যেতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতে রিনঝিন করে কলিংবেল বাজলো। দরজা খুলে দেখে টকটকা লাল গোলাপের একটা বড় বুকে নিয়ে একমুখ দাঁত বের করে হাসিব দাঁড়িয়ে আছে।
কি হলো, এইরকম ক্যালাচ্ছো ক্যানো? আর এই ফুল?
আরেহ! আজকে আমাদের বিয়ের চার বছর হইলো ভুইলা গ্যালা নাকি তুমি?
ওহ! আমার মনেই ছিলো না, আজ আমাদের বিয়ের চার বছর পূর্তি। হাসিব বললো, “ঝটপট রেডী হও। দেরী করবা না একদম। বাইরে খাবো দাবো ঘুরবো অনেকক্ষন। তারপর তাড়াতাড়ি আবার বাসায় ও ফিরতে হবে”
-ক্যান? তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে ক্যান?
- ওমা! তাড়াতাড়ি ফিরবো নাতো কি! সারারাত বাইরে ঘুরবো নাকি! চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আমার বৌ টারে একটু বেশী বেশী আদর করতে হবেনা” হাসিবের মুখে দুষ্টু দুষ্টু হাসি ।

একটু বেশী রাতে ওরা ফিরলো। এতক্ষনে সন্ধ্যার সেই ঘটনা মিলি ভুলেই গেছে। রাতে বিছানায় হাসিব যখন ওকে কাছে টানলো ঠিক সেই মুহূর্তে মিলির মনে হলো ওর ঘাড়ের কাছেই অন্য একজন কেউ নিঃশ্বাস ফেললো। মিলি চমকে ফিরে তাকাল, নাহ! কেউ না!
হাসিব বিরক্ত মুখে বললো, কি হইছে?
না কিছু না !
কিন্তু আবারও হাসিবের দিকে ফিরতেই মিলি স্পষ্ট টের পেলো একটা নিঃশ্বাস ওর ঘাড় ছুঁয়ে গেলো। এই নিঃশ্বাস টা মিলির চেনা, অনেক দিনের চেনা।
হাসিব একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলো কিন্তু মিলি জেগে রইলো পুরোটা রাত। সারা রাত ই ওর মনে হলো , সে এখানেই কোথাও লুকিয়ে তাকে দেখছে। অথবা সে হয়তো দাঁড়িয়ে আছে ল্যাম্পপোষ্টের নীচে... সেই বেঢপ সাইজের পাঞ্জাবী, এলোমেলো চুল... মিলির হঠাৎ খুব ভয় লাগতে থাকে। একবার মনে হয় হাসিব কে ডেকে তোলে কিন্তু বেচারা মাত্রই ঘুমিয়েছে ডেকে তোলা ঠিক হবেনা ভেবে আর ডাকলো না । খুব পানির পিপাসা পেয়েছে কিন্তু পানি খেতে উঠতেও ভয় লাগছে। এক একবার ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো কিন্তু অসহ্যরকম এই রাত শেষ ও হচ্ছেনা... আর ঘুমাতেও দিচ্ছেনা মিলিকে।

আজকের পত্রিকার হেডলাইন “আবার ও ব্লগার হত্যা” তিনদিন নিখোঁজ থাকার পরে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে সুপরিচিত এই ব্লগারের গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারনা করা হচ্ছে, তাকে তিনদিন আগেই হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা করেছে সে ব্যাপারে প্রশাসন জোর তদন্ত চালাচ্ছে।
হাসিব অবাক হয়ে দেখলো নিউজ পেপার পড়তে পড়তে মিলির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে। ক্যামন যেন উদভ্রান্তের মতো কাঁপছে ও, মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে এক্ষুনি পরে যাবে। হাসিব ডাকলো বেশ কয়েকবার ... সে ডাক মিলির কানে পৌছুলো না। ওর কেবল মনে হচ্ছে... কে এসেছিলো কাল সন্ধ্যায় তাহলে! হাসিব যখন ওকে আদর করছিলো কে তাহলে অমন করে তাকিয়ে ছিলো ... বারবার নিঃশ্বাস ফেলছিলো মিলির ঘাড়ের কাছে ... কে!

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:১৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×