somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদ্র ঋণ বাস্তবায়নজনিত সমস্যা নিয়ে কয়েক নোক্তা -০১।

২৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈধ বয়সসীমা অতিক্রম করায় ডঃ ইউনুসকে গ্রামীন ব্যাংকের এমডি পদ থেকে শেখ হাসিনা সরকারের (প্রতিহিংসাবশত) রিমুভ করার চেষ্টা এবং এর পরে এ বিষয়টি আদালতে গড়ানো, আদালতে ইউনুসের হেরে যাওয়া, পরাশক্তির মাধ্যমে ইউনুস হুমকি-ধামকি দিয়ে হাসিনাকে "শিক্ষা" দেওয়া, ইউনুসের বাংলাদেশের আইনব্যবস্থার প্রতি আস্থা না থাকা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাংগুলি দেখানো, কিছু পত্রিকার ইউনুসের পক্ষ নেয়া আবার কিছু ইউনুস-বিরোধী হওয়া, এসব বিষয় নিয়ে সরগরম অনেকদিন হচ্ছে। এই বিষয়টা ত্যানা পেঁচাইতে পেঁচাইতে একদম ত্যানা ছিড়ে যাওয়ার অবস্থা বলা যায়। কিন্তু আসলে এই ইস্যুটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা কিভাবে হওয়া উচিৎ বা আদৌ ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম থাকা উচিৎ কিনা সেসব বিষয়ে সিরিয়াস আলোচনা হওয়া। তবে স্বীকার করি যে এই ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়টা ইউনুস-হাসিনার দ্বৈরথের মত অত স্ক্যানডালাস না, এখানে টিপিকাল বাঙালি টাইপ মজা লুটার সামগ্রী নাই। কাঁদা ছুড়াছুড়ি করে বিকৃত আনন্দ নেয়ার সুযোগ নেই-ই বলতে গেলে। ইউনুস-হাসিনা আর ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ফেইসবুকে অনেকের সাথে কথা বলেছি, তর্ক করেছি। ব্লগারদের মধ্যে শূণ্য আরণ্যক, বড়ভাই জ্বিনের বাদশার সাথে লম্বা কথোপকথন হয়েছে, কিন্তু সেসব কথার পিঠে কথা বলার মত, কোন অর্থবহ আলোচনা না। আমার এই লেখাটায় ইউনুস-হাসিনা প্রসংগ নেই, একজনকে মহামানব বানিয়ে আরেকজনকে ভিলেইন বানানোর চেষ্টা বা অপচেষ্টা নেই। আমি বরং বিরক্তিকর কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের বাস্তবায়ন যেভাবে হচ্ছে সেটা ঠিক কিনা, না হলে কিভাবে হওয়া উচিৎ, আদৌ হওয়া উচিৎ কিনা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যারা ডেনস লেখা পড়তে চান তারা বদরুদ্দিন ওমরের এ বিষয়ে লেখা আছে, সেসব পড়তে পারেন। সেখানে সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভংগী থেকে কেন মাইক্রো-ক্রেডিট আর ডঃ ইউনুস সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিনিধিত্ব করেন সেসব বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষনা আছে। আমার সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে অত আগ্রহ নেই, সব বিষয়কেই আমি সাম্রাজ্যবাদে নিয়ে গিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করিনা, কনসপিরেসি খুঁজতে ভাল লাগেনা। অর্থনৈতিক দিক নিয়ে যারা জানতে চান তারা আনু মুহাম্মদের এ বিষয়ে লেখা পড়তে পারেন। আমি বরং খোলা দৃষ্টিতে অর্থনীতির জটিল সুত্র না এনে সাদামাটাভাবে আমার নিজের দৃষ্টিভংগী আলোচনা করব। কিন্তু যেহেতু বিষয়টা কিছুটা অর্থনীতির সাথে যুক্ত তাই সহজ ভাষায় সবাই বুঝতে পারবে এভাবে আমি কিছু অর্থনীতির কনসেপ্ট ব্যাখ্যা করেছি, কিন্তু সেসব না বুঝলেও লেখার মূল সুর ধরতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

তাহলে চলুন ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে আরো কিছুক্ষণ ত্যানা পেঁচায়। এ বিষয়ে তেমন ত্যানা পেঁচানো হয়নিই বলতে গেলে!

১। ক্ষুদ্র ঋণ কোন চ্যারিটি না!

বর্তমান ধারায় প্রচলিত (ডঃ ইউনুস কর্তৃক প্রবর্তিত এবং চ্যাম্পিয়নকৃত) ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সমালোচনা করলেই ডঃ ইউনুস নিজে এবং তাঁর গুণমুগ্ধরা সবচাইতে প্রথমে যে ইস্যুটা নিয়ে আসেন তা হল ক্ষুদ্র ঋণ একটা ব্যবসা, এটা চ্যারিটি না। তাই ঋণ আদায় না হলে ঘরের ঢেউটিন টেনে নিয়ে যাবেই, ব্যবসা তো লসে চলতে পারেনা। ঋণ আদায়ের ব্যাপারটায় পরে আসা যাবে, এখন "ব্যবসা" ধারণাটাতে প্রথমে একটু আসা যাক। দারিদ্র্য দূরীকরনের ব্যবসা, কি মহৎ ব্যবসা! ব্যবসায়ে লাভ হবে, দারিদ্র্য দূরীকরন হবে, গরীব মানুষও লাভ করবে, দেশেরও উন্নতি হবে। সব লাভে-লাভ। সবার জন্য উইন-উইন সিচুয়েশান। কি ফর্মূলা বাবা! হোয়েন সামথিং সাউন্ডস টু গুড টু বি ট্রু, ইট প্রবেবলি ইজন'ট। ব্যবসার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা করা। যারা ইকনমিকস/ফাইন্যান্স পড়েছেন তারা বলবেন শেয়ারহোল্ডারস' ওয়েলথ ম্যাক্সিমাইজেশান। টেকনিকালিটিতে না গিয়ে আমরা মুনাফা অর্জনকেই ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্য ধরব। আমি সমাজতান্ত্রিক না, (যদিও পুঁজিবাদীও না, আমি কল্যান অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি, সেটাও এখানে প্রাসংগিক না!) তাই ব্যবসা বা কর্পরেইটিজম নিয়ে আমার তেমন চুলকানি নাই। ন্যায়সংগতভাবে মুনাফা অর্জন করতে পারলে মুনাফা করা উচিৎ, সেটা দেশের-দশের সবার জন্যই ভাল (জ্যাক ওয়েলচের "উইনিং" পড়তে পারেন)। কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবসাতে সমস্যা অন্যজায়গায়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসাতে লাভ করার জন্য মোটামোটি দুটো উপায়। পণ্যসামগ্রীর টোটাল ইউনিট অনেক বেশি বিক্রি করা কম লাভে বা ইউনিট প্রতি বেশি দাম রাখা বেশি লাভ করার জন্য, তবে সেক্ষেত্রে ম্যক্সিমাম রেভিনিউ নাও হতে পারে। যদি একচেটিয়া ব্যবসা হয়, তাহলে দুটাই একসংগে করা যায়, যদিও ইকনমিকসে সেক্ষেত্রেও কন্ডিশান আছে, সেখানে যাচ্ছিনা। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে পণ্যসামগ্রী হচ্ছে ক্ষুদ্র-ঋণ। পণ্য না বলে সেবা বলাই উচিৎ, টেকনিকালিটি এড়ানোর জন্য পণ্যই বলছি। গ্রাহক বা ক্রেতা হচ্ছেন গরীব মানুষ। এই পণ্যের বেশিবিক্রি করার জন্য যতবেশি সংখ্যক গরীব মানুষ থাকে ততই ভাল, তাহলে সেলস ভলিউম অনেক বেশি হবে, লাভ বেশি হবে। ক্ষুদ্র-ঋণ যেহেতু ব্যবসা, এই ব্যবসা টিকে থাকার জন্য যত বেশী সংখ্যক গরীব লোক যত বেশি সময়ের জন্য গরীব থাকবে ততবেশি সময় ক্ষুদ্র-ঋণের চাহিদা থাকবে, বাজার থাকবে। তার মানে গরীব লোক না থাকলে এই ব্যবসা টিকবেনা! দারিদ্র্য না থাকলে এই ব্যবসা লাটে উঠবে। তাই এই ব্যবসার সারভাইভালের জন্য মানুষকে যতবেশি দারিদ্র্যের মধ্যে রাখা যায় ততই ভাল। তাহলে কি দাঁড়াল? দারিদ্য দুরীকরণ ব্যবসা দারিদ্র্য দূর হলে মাইর খাবে। তাই দারিদ্র্য দূরীকরন ব্যবসাকে তার নিজের স্বার্থেই দেখতে হবে দারিদ্র্য যেন দূর না হয়! তার মানে দারিদ্র্য দূরীকরন ব্যবসা কখনই চাইবেনা দারিদ্র্য দূর হোক, কারন এটা ব্যবসার উদ্দেশ্য, তথা মুনাফা অর্জনের পরিপন্থী। তাহলে কি করতে হবে? লোকজনকে দারিদ্র্য দূর করার কথা বলেই ঋণ দিতে হবে, কিন্তু এই ঋণ যাতে এরা পরিশোধ করতে না পারে বা যাতে তারা কোনমতেই দারিদ্র্য থেকে উঠতে না পারে সেটা দেখতে হবে। সেজন্য তাদের কাছ থেকে খুবই উচ্চহারে সুদ নিলে তাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবেনা, এছাড়া আরো উপায় আছে যা নিচে আসবে। আবার কেউই যদি দারিদ্র্য দূর করতে না পারে, তাহলে দরিদ্র লোকেরা ক্ষুদ্র ঋণ নিবেনা, সেটাও ব্যবসার জন্য ক্ষতি। শুধু তাই নয় কারো দারিদ্র দূর না হলে আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের যারা এনজিওদেরকে টাকা দিয়ে বিশ্বের গরীবদের জন্য কিছু করছি এরকম মানসিক শান্তিটা পেতে চায় তাদের প্রতিক্রিয়া হবে যদি তাদেরকে উদাহরণ দেখানো না যায়। তাহলে কি করা যায়? দেখতে হবে কিছু সংখ্যক লোক যাতে দারিদ্র্য দূর করতে পারে যাদেরকে উদাহরণ হিসেবে রাখা যাবে আর বাকিরা যেন দারিদ্র্য দূর না করতে পারে যাতে বাজারটা ধরে রাখা যায়। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল। এজন্যই হয়ত শতকরা ৫-১০% লোক (খুব বেশি হলে ৫%, আমার ধারণা এটা ২% এর বেশি হবেনা) দারিদ্র্য থেকে ক্ষুদ্র-ঋণের মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত হবে যাতে তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে রেখে, কুমিরের ছানার মত বারবার দেখিয়ে ক্ষুদ্র-ঋণের বিজ্ঞাপণ দেয়া যায় আর বাকি ৯০% যাতে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি না পায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। আর যে ৯০%কে দরিদ্র রাখা হবে তাদের ক্ষুদ্র-ঋণের মাধ্যমে সাফল্য না পাওয়ার জন্য তাদের অভ্যাস বা তাদেরকে বিভিন্নভাবে দায়ী করা হবে, গরীব মানুষরা অলস, তাদের দারিদ্রের জন্য একমাত্র তারাই দায়ী এরকম কথা তো এম্নিতেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মেরুদন্ডহীনরা বলেই। তাহলে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য বাহবা পাওয়া যাবে, প্রচুর মুনাফা আসবে, ব্যবসাটা যাতে দীর্ঘদিন টিকে থাকে সে ব্যবস্থা করা যাবে। এর চেয়ে ভাল ব্যবসার কনসেপ্ট কি আর হতে পারে? বুঝা যাচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরন ব্যবসা কখনই বড় আকারে দারিদ্র দূরীকরণ হোক সেটা চাইবেনা, কারন আমরা প্রমাণ করেছি সেটা তার ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। পাগল না হলে কোন ব্যবসায়ী তার ব্যবসা লাটে উঠুক সেটা চায় না, পাগলরাও চায় না।

২। মহাজনি সুদের হার

এবার আসি হট-টপিকে! যারা ইউনুস-বিরোধী তারা ইউনুসকে রক্ত-চোষা সুদখোর হিসেবে জানেন। আমাদের প্রধাণমন্ত্রী লাগাম-ছাড়া কথা বলেন, যার বেশিরভাগই প্রধাণমন্ত্রী-সুলভ না। শি উইয়ারস হার হার্টস অন হার স্লিভস! তিনিও ডঃ ইউনুসকে গরীবের রক্ত-চোষা বলেছেন। তবে তিনি এসব অপ্রধাণমন্ত্রী-সুলভ কথাবার্তা বললেও তার এসব কথাবার্তার অনেকগুলিই কিন্তু সত্যি। আপনি চেক করে দেখতে পারেন, যাই হোক আমি হাসিনার ভক্ত না। তাছাড়া সে বিষয় এখানে অপ্রাসংগিক। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোন ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হয় মোটামোটি কয়েকটা নিক্তিতে।
ক) ডিফল্ট রিস্ক, মানে ঋণ নিয়ে গ্রহীতা ফেরত দিতে পারবেনা তার সম্ভাবনা বা ঝুঁকি কতটুকু। যত বেশি রিস্ক তত বেশি সুদ হবে। যত কম রিস্ক তত কম সুদ।
খ) ইনফ্লেশান রিস্ক, মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস পাবে, এই ঝুঁকি। ১০০ টাকার দাম ১ বছর পর সাধারণত ১০০ টাকা থাকেনা, অন্যকথায় ১০০ টাকা দিয়ে আমি আজ যা কিনতে পারব একবছর পর তার থেকে কম পরিমাণ জিনিস কিনতে পারব, এটাকে বলা হয় ইনফ্রেশান। যে অর্থনীতিতে মুদ্রা অবমূল্যায়নের হার যত বেশি সেখানে সুদের হার ততবেশি। উল্লেখ্য তাত্ত্বিকভাবে মুদ্রা অধিমূল্যায়নও (ডিফ্লেশান) হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য সেটা প্রযোজ্য না। তাই ইনফ্লেশান রিস্ক থেকেই যায়।
গ) রিস্ক-ফ্রি প্রিমিয়াম/টাইম-ভ্যালু অফ মানি, এটা হচ্ছে জনগণ ভবিষ্যতের কোন সময় ভোগ করার চেয়ে বর্তমানে ভোগ করাকে প্রাধান্য দেয়, তাই তার কাছ থেকে টাকা ধার নিলে সে যে বর্তমানে ভোগ না করে ভবিষ্যতে ভোগ করবে সেই ত্যাগের জন্য তাকে একটা প্রিমিয়াম দিতে হবে। এটাকে টাইম-ভ্যালু অফ মানি বলে। রিস্ক-ফ্রি প্রিমিয়াম হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইস্যুকৃত সন্ঞয়পত্রে যে সুদ দিতে হয় সেটা। কেন্দ্রীয়-ব্যাংক কখনো ঋণ-খেলাপ করেনা, তাই তার ডিফল্ট-রিস্ক নেই বলে, এ সন্ঞয়পত্রের বাৎসরিক সুদের হারকে রিস্ক-ফ্রি প্রিমিয়াম বলে। অবশ্য খুব রেয়ার কয়েকটা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীর ব্যাংকও ডিফল্ট করেছে, সেসব তাত্ত্বিক আলোচনায় নাইবা গেলাম এবং তা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য না।

উপরে উল্লেখিত মোটামোটি এই তিনটা নিক্তি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সুদের হার নির্ধারণ করে। রিস্ক-ফ্রি প্রিমিয়াম আর টাইম-ভ্যালু অফ মানি মোটামোটি একই জিনিস। আমি সুদ হালাল না হারাম, এটার দরকার আছে কিনা এসব বিষয়ে যাচ্ছিনা কারন সেটা ভিন্ন আলোচনা। আমরা বরং বাস্তবতা বিবেচনা করেই কথা বলি। আমার বাংলাদেশে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে আস্থা নেই, তাই সে প্রসংগ এখানে অবান্তর। বাংলাদেশে সুদকে লিগ্যাল করা হয়েছে, এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিতে যেভাবে মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলিত সেখানে সুদ ছাড়া বাস্তবতা অকল্পনীয়। তাই সুদের বাস্তবতা ধরে নিয়েই এই তিন নিক্তি ব্যবহার করে চলুন আমরা বাংলাদেশে ক্ষুদ্র-ঋণের বাৎসরিক সুদের হার কত হওয়া উচিৎ সেটার একটা তাত্ত্বিক মান নির্ধারণ করি। গ্রামীন ব্যাংকের লোন-রিকভারির হার ৯৮%! তার মানে ঋণ-খেলাপীর হার খুবই খুবি কম। ২% এর মত লোক ঋণ খেলাপ করে, তাই ডিফল্ট রিস্কের প্রিমিয়ামও হবে খুব কম। ধরুন ৩% (এটা অনেক বেশি ধরেছি!)। বাংলাদেশে গত দশ বছরে ইনফ্লেশান রেইট মোটামোটি গড়ে ৫-৬%। তাই ইনফ্লেশান প্রিমিয়াম ৬% ধরলাম। রিস্ক-ফ্রি প্রিমিয়াম কত আমি নিশ্চিত না, তবে ৩-৪%এর বেশি হওয়ার কথা না। ধরলাম ৫%। তাহলে সব মিলিয়ে হয় ১৫% এরও কম, তাও সেটা বেশি ধরলেই হয়। উল্লেখ্য ঋণের মুনাফা টাইম-ভ্যালু অফ মানিতেই অন্তর্ভুক্ত। কোনমতেই ন্যায়সংগতভাবে ভাল মুনাফা ধরেও ক্ষুদ্র ঋণের বাৎসরিক কমপাউন্ড সুদের হার ১৫% এর বেশি হতে পারেনা। লোন রিকভারির হার বেশি হওয়াতে ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদের হার থেকেও অনেক কম হওয়া উচিৎ। সেখানে দারিদ্র্য দূরীকরনের মত মহান উদ্দেশ্য থাকলে তো আরো কম হওয়ার কথা। অথচ কয়দিন আগে ব্লগার আরিফ জেবতিক ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় গ্রামীণের ক্ষুদ্র ঋণের কথা গ্রামীণেরই এক কর্মচারীর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ১০০০০ টাকা ঋণ নিলে প্রতি সপ্তাহে ২৫০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয় একবছর সেটা শোধ করার জন্য। আমি ইফেক্টিভ এন্যুয়াল ইন্টারেস্ট রেইট হিসেব করে দেখেছি এটা ৭০%!!! উল্লেখ্য ডিফল্ট রিস্ক মোটামোটি নন-এক্সিসটেন্ট হওয়ার জন্য গ্রামীন ব্যাংকের সুদ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে তুলনা করলেও ১৫-১৭% এর বেশি হওয়া কোনমতেই উচিৎ না। সেখানে তথাকথিত দারিদ্র্য দূরীকরণের নাম দিয়ে, মহান সেজে, গরীবদেরকে ৭০% বাৎসরিক সুদ হারে ঋণ ব্যবসা করলে সেরকম ব্যবসাকে অনেক লাভজনক ব্যবসা বলা যায়, কিন্তু কোনমতেই দারিদ্র্য দূরীকরন ব্যবসা বলা যায়না। কেউ যদি এরককম ব্যবসায়ীকে রক্তচোষা বলে, তাতে তাকে কি খুব দোষ দেয়া যায়? ক্ষুদ্র ঋণ যাদেরকে দেয়া হয় তাদের যে ধরণের ব্যবসা সেখানে শ্রম ও সময় বাদ দিয়ে গড়ে ১০% মুনাফা থাকে কিনা সন্দেহ আছে। তাহলে তারা কিভাবে ৭০% বাৎসরিক সুদ হারে কিস্তি ফেরত দিবে? উল্লেখ্য গ্রামীণব্যাংক বা অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান কাগজে কলমে বলে যে তাদের সুদের হার ২০-৩০% এরকম, বাস্তবে সেটা সত্যি না। যারা দেশে আছেন তারা ঢাকার বাইরে গ্রাম এলাকায় খোঁজ নিতে পারেন, আমার কথার সত্যতা পাবেন।


(পরের পর্বে সমাপ্য..............)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১২:২৬
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×