somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস জাফর ইকবালকে কিভাবে বিচার করবে?

১৪ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পোস্ট জাফর ইকবালের "ঐতিহাসিক বিচার" নিয়ে আলোচনা।
...............................................................................

বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে মনিকা লুইনস্কি ছাড়াও আরো অনেক মেয়েকে ধর্ষণ বা শারিরীক অনাচারের অভিযোগ ছিল। হিলারি ক্লিনটন তখন এসব মেয়েদেরকেই আক্রমণ করত, তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করত। হিলারি ক্লিনটনের এ ভূমিকাকে বলা হয় এনেইবলারের (enabler) ভূমিকা। এনেইবলারের কাজ হলো যে অন্যায় করছে তাকে পরোক্ষভাবে সে অন্যায় করতে দেয়া, অন্যায়ে পরোক্ষভাবে সহায়তা করা। এটা সমাজে প্রায়ই দেখা যায়। অন্যায় জারি থাকার জন্য যারা অন্যায় করে তাদের চেয়েও এনাইবলারদের ভূমিকা অনেক বেশি। এনেইবলার ছাড়া কোন অন্যায় সামাজিকভাবে বেশিদিন চলা কঠিন।

এরকম এনেইবলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হল ইন্টেলেকচুয়াল এনেইবলার (intellectual enabler)। যখন রাষ্ঠ্র কোন চরম অন্যায়ের দিকে যায়, তখন এরকম ইন্টেলেকচুয়াল এনেইবলাররা সেরকম অন্যায়ের একটা বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা (intellectual legitimacy) দেয়, তারা যুক্তি দেয় অন্যায়কে সমর্থন করে, বা যারা সে অন্যায়ের বিপক্ষে তাদেরকে নানারকম কুযুক্তি দিয়ে আক্রমণ করে। অনেক সময় এনাইবলাররা নানা যুক্তি দিয়ে বা আবেগের ব্যবহার করে অন্যায় নিয়ে যথেষ্ট পরিমান মতভিন্নতা, সন্দেহ, বা জল ঘোলা করে। এই সন্দেহের ঘোলা জল তখন অন্যায়ের একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে, ক্রমান্বয়ে অন্যায়ের ন্যারেটিভটাই পোক্ত হয়, অন্যসব আলোচনা হারিয়ে যায়। এরকম দেখা গেছে নাৎজি জার্মানির ক্ষেত্রে, হিটলারের হলোকাস্টকে জায়েজ করার জন্য প্রচুর ইন্টেলেকচুয়াল খাড়া ছিল, তারা হিটলারের কাজকে বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দিয়েছিল, এজন্যই জার্মানির সাধারণ মানুষও হিটলারের ঘৃণ্য গনহত্যায় সায় দিছিল, অংশগ্রহণও করেছিল। সেরকম সম্প্রতি ইরাকে যুক্তরাষ্ঠ্রের আক্রমণ এবং গনহত্যাকে জায়েজ করার জন্যও যুক্তরাষ্ঠ্রের মূলধারার মিডিয়া ইন্টেলেকচুয়াল এনাইবলার হিসেবে কাজ করেছে। মৌলবাদি নাস্তিক হিচেনস, স্যাম হ্যারিস এরাও উচ্চস্বরে এহেন ঘৃণ্য আগ্রাসন আর গণহত্যার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য ইন্টেলেকচুয়াল এনাইবলার হিসেবে কাজ করেছে। তেমনি আফগানিস্তানে দখল জারি রাখা এবং হত্যা চালু রাখার জন্য অনেক নারীবাদিরা এনাইবলার হিসেবে কাজ করেছে।

বাংলাদেশে জাফর ইকবালের সবচেয়ে বড় সমালোচনা আমার চোখে এই যে তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস, প্রতিষ্ঠানসমূহকে অকার্যকর, শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে জলান্জলি, এবং শাসকশ্রেণীর রাষ্ঠ্রীয় ডাকাতি, অরাজকতা, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ারবাজার ডাকাতি ইত্যাদি অপরিসীম অন্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দেন। এটা না যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এসব অন্যায়কে সমর্থন করেন, কিন্তু তার মত লোকের সরকারকে মোটাদাগে বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দেওয়ার জন্য এসব অন্যায় জারি থাকে। অনেক সময় এরকম ইন্টেলেকচুয়াল এনাবলাররা কিছুটা সমালোচনাও করেন, তবে সে সমালোচনাতেও প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় থাকে, জাফর ইকবালও সেরকম কদাচিৎ সরকারের মৃদু সমালোচনার মাধ্যমে নিজের লেজিটিমেসি বজায় রাখেন এবং শাসকগোষ্ঠীকে তাদের অনাচার করার কাজেও পরোক্ষভাবে মদদ যোগান। তাই শাসকগোষ্ঠীর সমস্ত অন্যায়, সেটা হোক ত্বকী হত্যার মত ব্যক্তিক অপরাধ, বা সমষ্টিক অনাচার যেমন শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস, ব্যাংক ডাকাতি, গণতন্ত্র ধ্বংস, যাই উল্লেখ করেন না কেন, সবকিছুর ভার জাফর ইকবালের উপর বর্তায়, তিনিও এসবের জন্য দায়ী, কারন তিনি এসবকে এনেইবল করছেন।

এজন্য জাফর ইকবালকে চেতনার কারবারীরা যতই সালাম করুক না কেন, তিনি ক্রমান্বয়ে অপাংক্তেয় হয়ে যাবেন, ইতিহাসের ভুল সাইডে তিনি থাকবেন, তাঁকে লোকে একসময় খুব ঘৃণা করবে, ইতিহাস তাঁকে আস্তাখুড়ে নিক্ষেপ করবে। তবে সেসব অনেক দেরী আছে, তার আগেই জাফর ইকবাল এবং তার মত যারা রাষ্ঠ্রীয় অনাচারকে বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দেয় তাদের দ্বারা রাষ্ঠ্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যাবে, অথবা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। জাফর ইকবাল দেশকে পজিটিভ কিছু দিয়েছেন কিনা জানিনা, তবে একসময় তাঁর বই পড়ে টীনএইজ বয়সে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক আনন্দ পেয়েছি। কিন্তু সে এন্টারটেইনারের ভুমিকায় পজিটিভ কিছু থেকে থাকলেও তার বর্তমান ইন্টেলেকচুয়াল এনাবলারের ভূমিকার কাছে সেসব বিনোদনের মূল্য কিছুই না। এটা খুবই দুঃখজনক, কেননা জাফর ইকবালের সুযোগ ছিল আলোর দিশারী হওয়ার, কিন্তু তিনি বেঁচে নিলেন অন্ধকারের কান্ডারী হওয়াটাকেই।

উল্লেখ্য তাঁর এহেন ঘৃণ্য ইন্টেলেকচুয়াল এনাইবলার হওয়ার ভূমিকার স্বাভাবিক "ঐতিহাসিক" বিচার হওয়া জরুরী, কিন্তু তাঁকে শারীরিক কোন আক্রমণ করার বা এমনকি তাঁর বাকস্বাধীনতায় কোনরকম হস্তক্ষেপ করা সমর্থন করছিনা, সেটা বলাই বাহূল্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ২:০৯
২৪টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×