আজ আব্দুল্লাহর বিয়ে, আমিনা বিনতে ওহাবের সাথে, বনি জুহরাহ গোত্রের মেয়ে আমিনা। আব্দুল মুত্তালিব তার ছেলে নওজোয়ান আব্দুল্লাহর হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, বনি জুহরাহের পথে রওনা হতে হবে শীঘ্রই। যাওয়ার সময় পথে বনি আসাদের বাড়ি হয়ে যেতে হবে।
বনি আসাদ গোত্রের যুবতী ক্বোতাইলাহ তার ঘরের সামনে দাড়িয়ে ছিল, ওরাক্বাহর বোন ক্বোতাইলাহ, মহাসমারোহে বরযাত্রা দেখার উদ্দেশ্যে। কোরাইশ বংশের অসম্ভব হ্যান্ডসাম নওজোয়ান আব্দুল্লাহর বিয়ে, আব্দুল মুত্তালিবের মত মক্কার সম্মানিত লোকের ছেলে। তাই সবার মধ্যে আগ্রহ এ বিয়েকে ঘিরে।
বরযাত্রীদের ক্বোতাইলাহর ঘরের দোর থেকে দেখা যাচ্ছিল, ক্বোতাইলাহ তন্ময় দৃষ্টিতে আব্দুল্লাহর দিকে তাকিয়েছিল। এত সুন্দর কোন পুরুষ হয়? ক্বোতাইলাহ জানত আব্দুল্লাহর পৌরুষদীপ্ত সৌন্দর্য্যের কথা, সারা মক্কায় আব্দুল্লাহর মত কোন সুন্দর পুরুষ ছিলনা, সবাই বলত আব্দুল্লাহর সৌন্দর্য্য নবী ইউসুফের মত।
কিন্তু ক্বোতাইলাহ তন্ময় হয়ে আব্দুল্লাহকে দেখার পেছনে শুধু আব্দুল্লাহর পৌরুষদীপ্ত সৌন্দর্য্য না, অন্য একটা কারন ছিল। আব্দুল্লার চোখে-মুখে একটা অপরগাজতিক আলোক খেলা করছিল। এ আলোকের রহস্য কি? ক্বোতাইলাহর হঠাৎ মনে হল আব্দুল্লাহই কি তবে সেই প্রতিক্ষীত নবী? মক্কা-মদীনায় খ্রিস্টান ইহুদীরা অপেক্ষা করছিল এক নবীর, অনেকেই বলেছে এসময়েই সে নবী আসবেন। তাহলে আব্দুল্লাহই কি সে নবী? নাহয় তার চোখেমুখে এ পবিত্র আলোকের উৎস্য কি? কি পাগল করা সৌন্দর্য্য সে আলোর!
ক্বোতাইলাহর তন্ময়তা কাটেনি তখনো, বরযাত্রীরা তার ঘরের দোর অতিক্রম করেছে মাত্র। হঠাৎ কি হল ক্বোতাইলাহর, খুব তরিঘরি করে ব্যাকুলভাবে ডাকল, "ও আব্দুল্লাহ?"
আব্দুল্লাহ থতমত খেয়ে ফিরে তাকাল, ক্বোতাইলাহ ব্যাকুলতার সাথে জিজ্ঞেস করল, "কোথায় যাচ্ছ আব্দুল্লাহ, কোথায় যাচ্ছ তুমি?"
আব্দুল্লাহ একটু অবাক হল, মক্কার সবাই জানে সে বিয়ে করতে যাচ্ছে, ক্বোতাইলাহ তার দূর সম্পর্কের কাজিন লাগে, সে না জানার কথা না। থতমত খেয়ে বলল, "আমি তো বাবার সাথে যাচ্ছি।"
"না, তুমি আমাকে বিয়ে কর, এক্ষুনি, তোমার বাবা তোমার জন্য যত উঠ ক্বোরবানি দিয়েছে, আমি তার থেকে ঢের বেশি উঠ দিব তোমাকে। প্লিজ আমাকে বিয়ে কর। বিয়ে করবে আমাকে?" কন্ঠে তার অসম্ভব ব্যাকুলতা, তার হৃদয়ের সবটুকু আশা নিয়ে, চোখেমুখে কেমন জানি উন্মত্ততা নিয়ে আব্দুল্লাহর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল।
আব্দুল্লাহ খুবই অবাক হল, বলল, "আমি তো আমার বাবার সাথে যাচ্ছি, তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি কিছু করবনা।"
বিয়ে হয়ে গেল আব্দুল্লাহর, আমিনার সাথে। শ্বশুর বাড়িতে বেশ কয়েকদিন থাকল আব্দুল্লাহ, বিয়ের পরে।
কয়েকদিন পর আব্দুল্লাহ তার বাড়ি থেকে কিছু একটা আনার জন্য যেতে হল। শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে যাওয়ার পথে আবার দেখা হল ক্বোতাইলাহর সাথে। ক্বোতাইলাহ এবারও প্রচন্ড ব্যাকুলতার সাথে আব্দুল্লাহর চোখেমুখে কি যেন খুঁজছিল। তার এ কান্ড দেখে আব্দুল্লাহ থামল ক্বোতাইলাহর সামনে, ভাবল ক্বোতাইলাহ নিশ্চয়ই কিছু বলবে।
কিন্তু ক্বোতাইলাহ তন্ময় হয়ে আব্দুল্লাহর চোখেমুখে শুধু তাকিয়েই থাকল, কিছুই বললনা। অবাক হল আব্দুল্লাহ, জিজ্ঞেস করল, "কি, সেদিনের মত আজকে কিছু বলতে চাওনা?"
"না, কিছু বলার নেই। সেদিন তোমার চোখেমুখে যে অপরজাগতিক আলোক ছিল, সে আলোক আজ আর নেই।" কেমন জানি দুঃখভরা কন্ঠে বলল ক্বোতাইলাহ, "তোমার মুখের সে আলোক আজ নেই আব্দুল্লাহ, চলে গেছে সে আলো। তাই তোমাকে আমার আর প্রয়োজন নেই।"
****এর কয়েকদিন পরই সিরিয়ায় বাণিজ্যে গিয়েছিল আব্দুল্লাহ, এবং সেখান থেকে আর জীবিত ফিরেনি। শুধু আলোকটাকে পৃথিবীতে বহন করার জন্যই তার প্রয়োজন ছিল। তার কাজ শেষ, আলোক এখন আমিনার গর্বে। তাই আব্দুল্লাহর পৃথিবীতে থাকার প্রয়োজনও আর নেই।****
(মার্টিন লিংসের মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনি Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources বইয়ের ভাবগত অনুবাদ, পৃষ্ঠা ১৮-১৯। এস্টেরিস্কের মধ্যে শেষ দুই লাইন আমার নিজের।)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৫০