আজকের পত্রিকার শীর্ষ খবর -"পরীক্ষায় ফেইল করে আত্মহত্যা করলো দুই কলেজছাত্র !" । নাহ । খবরটা ঠিক নেই পুরোপুরি । ছোট একটা ভুল আছে । আসলে আত্মহত্যা করেছে তিনজন । দুইজন দেহত্যাগ করেছে , তাই দুইজনের খবর পত্রিকাতে এসেছে । তৃতীয় জন দেহত্যাগ করেনি , শুধু কলেজছাত্র হিসেবে নিজেকে মেরে ফেলেছে । তাই খবরে তার কথা আসেনি । আসবেই বা কেন ? এসব তো মনের খবর , অন্তরের খবর । অন্তরের খবর কখনও পত্রিকায় কখনও ছাপা হয়না । অন্তরের খবর সবাই তাই জানতে পারেনা । আমি এই তৃতীয় জনের কথা জানি , কারণ এই তৃতীয় ছাত্রটা আর কয়েক ঘন্টা আগে আমার ভেতরেই বেঁচে ছিল । আর যে দুইজনের কথা পত্রিকাতে এসেছে ওরা ঐ তৃতীয় ছাত্রের বন্ধু ।
তৃতীয় এই ছাত্রের নাম কাব্য । কাব্য , ফয়সাল আর রবি তিনজন খুব ভালো বন্ধু ছিল । জিগার কা দোস্ত যাকে বলে তা-ই । একসাথে দশ বছরের স্কুলজীবন পার করে কলেজেও একইসাথে ভর্তী হয়েছিল । আর জীবনের শেষ ফেইলটা একসাথে করে একসাথেই মরবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । মরেছেও একসাথে । কাব্য শুধু দেহটা ত্যাগ করতে পারেনি । দেহের ভেতরেই লাশ হয়ে আছে ।
শেষবার ওরা দাঁড়িয়ে ছিল হাতিরঝিলের একটা ব্রীজের উপর । তিনজনের কেউই সাঁতার জানতো না । তাই হাতিরঝিলের পানিতে ডুবে মরাটা তুলনামূলক সহজ ছিল ওদের কাছে । একসাথে তিনজন লাফ দেবে , তারপর ডুবে মরে যাবে -এই ছিল তাদের সহজ পরিকল্পনা । কাব্যটা শেষ ধাপে গিয়ে লাফ দেবার সাহস হারিয়ে ফেলেছিল । তাই লাফ দিতে পারেনি । কিন্তু মরতে ভয় পায়নি কাব্য । তাইতো এই দেহে ঘটলো দ্বিতীয় আরেকজনের অনুপ্রবেশ । এই দ্বিতীয় জনটাই আমি । ফায়সাল আর রবি লাফ দেবার প্রায় সাথে সাথেই আমার জন্ম হয় এই দেহে । এই দেহটা আসলেই খুব কাজের । একইসাথে আমাকে আর কাব্যের লাশটাকে বয়ে চলছে ।
আমি এখন গতিশীল এক ট্রেনের ছাদে বসে আছি । মনে হচ্ছে , ট্রেনটা আমাকে নিয়ে থেমে আছে , আর বাকি সবকিছু উল্টোদিকে প্রচন্ড গতিতে দৌড়াচ্ছে । আসলে তো ট্রেনটা আমাকে পিঠে নিয়ে ছুটছে । গন্তব্য জানা নেই , পথঘাট চেনা নেই -তবু চলছি এই ট্রেনের চাকার উপর ভর করে ।
আমার পাশেই মোবাইল হাতে ছেঁড়া শার্ট আর লুঙ্গি পড়া এক লোক বসে আছে । তার মবাইলে গান বাজছে । বাতাসের সাথে মিশে অদ্ভুতভাবে গানটা আঘাত করছে আমার হৃদয়ে । আমিও গান ধরলাম মোবাইলের সাথে সাথে-
তোমার ঘরে বাস করে কারা
ও মন জাননা
তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা. . ..।