somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশের বাঁশির রুপ-রস-কষ

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আর্ন্তজাতিক ম্যাচ থেকেই রসিকতার শুরু। এডেন পার্কে মুখোমুখি হয় দুই তাসমানিয়ান প্রতিবেশী। কিউইরা ফিল্ডিংয়ে নামে পরচুলা আর ঠোঁটে নকল গোঁফ লাগিয়ে। মনে পড়ে ? শেষ বলে দরকার ৪৫ রান, উইকেটে কিউইদের শেষ জুটি ; গ্লেন ম্যাকগ্রা তাই স্পিনার ! না, মাঠে ম্যাকগ্রা এমনিতে ভীষন সিরিয়াস কিন্তু সেদিন একটু কৌতুকের শখ জেগেছিল। আর তাই শেষ ডেলিভারিতে ম্যাকগ্রা ফিরিয়ে এনেছিলেন ট্রেভর চ্যাপেলের কুখ্যাত ‘আন্ডারআর্ম’ স্মৃতি। গ্যালারীতে হাসির রোল পড়লেও আম্পায়ার বিলি বাউডেন ভীষন করিৎকর্মা লোক। তার পকেট থেকে বের হলো লাল কার্ড! ম্যাকগ্রা হেসে কুটিকুটি। এই ছিলো টি২০ !
শুরুতে ছিল স্রেফ বিনোদন, এখন সঙ্গে রজত মুদ্রার ঝলকানি ; মিলিয়নইয়ার হতে মাত্র কয়েক ম্যাচ ! এগারো বছর পর সত্যিই পাল্টে গেছে টি২০। এখন বেশিরভাগই ভীষন সিরিয়াস। আর তাই টেস্ট ছেড়ে টি২০ ধরার সংখ্যাটা ক্রমেই উর্দ্ধমুখী। ভ্রুকুটির কিছু নেই। দর্শক যেখানে যাবে খেলোয়াড়েরা তো সেখানেই থাকতে চাইবে ?
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট এর আলাদা ঐতিহ্য আছে। গত ‘বক্সিং ডে’ টেস্টেও প্রথম দিনে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের দর্শকসংখ্যা ছিলো ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি। তার একদিন আগে বিগব্যাশে ‘মেলবোর্ন ডার্বি’র দর্শকসংখ্যা আশি হাজারের ওপরে ! বিগব্যাশ চলাকালিন দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড রোমাঞ্চকর টেস্ট সিরিজও ভুগেছে দর্শকখরায়। অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ হলে তো কথাই নেই। গ্যালারী যেন শুনশান মৃত্যূপুরী। কিন্তু সেই একই ভেনুতে টি২০ টুর্নামেন্টের আয়োজন করুন ; টুইটম্বুর গ্যালারী নিশ্চিত। কারণটা ফরম্যাটটির শিরোনামেই পরিষ্কার-টি২০ ; ‘টি’-তে ’টাইম’ অর্থাত্ সময়।
দর্শকদের চাহিদা পরিষ্কার— কম সময়ে যত বেশি বিনোদন। টেস্ট একে পাঁচদিনের, সঙ্গে থেকে যায় ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র’য়ের শঙ্কা। ওয়ানডে ১০০ ওভার দৈর্ঘ্যর হলেও দলগুলোর ইনিংস গড়তে দেখাটা অনেকক্ষেত্রেই বিরক্তিকর, অন্তত অধৈর্য্য দর্শকদের কাছে তো বটেই। শুধু টি২০ ক্রিকেটই পারে তিন ঘন্টা সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টাটকা গতিময় বিনোদন দিতে। প্রথম থেকেই চার-ছক্কা রোমাঞ্চের পসরা। হয় মারো নয় মরো, ব্যাটসমানেরা উইকেট বিলোচ্ছেন কিংবা আউট হচ্ছেন মুড়ি-মুড়কির মতো ! এ যেন বাটিভর্তি দুধ থেকে শুধু সরটুকু শুষে তুলে নেয়ার স্বাদ ! বাটিতে যে শ্বেত-শূ্ভ্র তরল অংশটুকু একলা পড়ে থাকে আদতে সেটাই এখনকার টেস্ট ক্রিকেট, যার পুষ্টিমান চিরকালীন কিন্তু রসিক কয়জন ?
সময়ের স্রোতে ভেসে চলা রসিকজন মাত্রই বিনোদনলোভী। এই যুগে কে, পাঁচ দিন টিভিতে চোখ সেঁটে ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র দেখার ঝুঁকি নেবে ? লম্বা সময় ধরে একজন ব্যাটসম্যানের ইনিংস গড়া, কিংবা বোলারের ফাঁদ পাতা ; এসব মুহুর্তের মহিমা দেখার ধৈর্য্যটা হারিয়ে খুঁজছে ক্রিকেটমোদীরা। টেস্ট ক্রিকেট এখনও খোঁজার সে পথটা তৈরি করে দিতে পারেনি, কিংবা এভাবেও বলা যায়-বিনোদনপটীয়সি টি২০’র বিস্ফোরণ ঢলে আটক টেস্ট। কিন্তু তারপরও ভ্রুকুটির কিছু নেই। কারণ খেলাটা নিজেই ব্যাটসম্যানদেও পক্ষে। ভেবে দেখুন ২০ ওভারে ১০ ব্যাটসম্যান ; এর বিপরীতে টেস্টের তুলনায় ২৫ মিটার ছোট সীমানায়, ৯ ফিল্ডার ৫ বোলার। পুরুত্বেও দিক থেকে ব্যাটেও বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন ব্যাটসম্যানেরা। আর তাই গোটা তিন ঘন্টাই নিখাদ মারকাটারি বিনোদন। বাউন্ডারির বাইরে বল আছড়ে পড়তে দেখার মজাই আলাদা। কিন্তু মনে তেমন দাগ কাটেনা বলে এটা শুধুই তিন ঘন্টার ‘বিনোদন বিস্ফোরণ’। সময়টা সংক্ষিপ্ত বিধায় ম্যাচের আগে-পরে দৈনন্দিন ব্যস্ততায় তাল মেলাতে সমস্যা হয়না। টেস্ট ক্রিকেট তার বিপরীত। এ ফরম্যাটের বিলুপ্তপ্রায় রসিকজনেরা ‘পূর্ণ মনোযোগি’ এবং সবুরে বিশ্বাসি।
আর তাই শুধু ‘বিনোদন’ দিয়েই টি২০ এখন বিশ্বব্যাপি ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন। আইসিসির সবগুলো পূর্ণ সদস্য দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে একটি করে টি২০ লিগ প্রচলিত। আর্ন্তজাতিক ময়দানে আছে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, আর বিশ্বকাপ। এবারের আসর বসছে এমন এক দেশে, যেখানে ক্রিকেট প্রায় ধর্মের সমান ! সত্যিকারের ‘ইট ক্রিকেট, ড্রিংক ক্রিকেট, স্লিপ ক্রিকেট’-এর দেশ। বিনোদন-পাতির খরচাটা তাই একটু বেশি। এটা প্রায় সবাই জানে যে, টেস্ট থেকে আইপিএলে আয়ের সুযোগ অনেক বেশি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো আরও অনেক দেশের খেলোয়াড়ই আইপিএলে খেলতে ছাড়তে পারেন জাতীয় দল পর্যন্ত ! সেই আইপিএলের দেশ ভারতে যেহেতু বসছে টি২০ বিশ্বকাপ, তাই বাজিকরদের মতো আয়োজকদেরও পোয়াবারো। বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপের আগে-পরের সময় মিলিয়ে বিজ্ঞাপনখাতে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি রুপি লগ্নি করবেন বিনিয়োগকারীরা। সম্ক্রচার স্বত্ত্ব কিনে নেয়া স্টার গ্রুপের সম্ভাব্য আয়ের অংক ৬০০ কোটি রুপি।
যেহেতু ক্রিকেটের বাণিজ্যিকীকরণ নীতির বাস্তবায়ন প্রসূত ধারণা টি২০, তাই খেলাটার বিজ্ঞাপনেও টি২০’র পেছনে টেস্ট। আইসিসির সহকারি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বাইরে অনেকেই উঠে আসার চেস্টা করছে ক্রিকেটে। এদের মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র আর ইউরোপের বেশকিছু দেশ। ক্রিকেটে তাদের আগ্রহের নেপথ্য কারণ টি২০—অনেকটা ফুটবলের মতোই, সময় কম কিন্তু বেশি বেশি উত্তেজনা। সেই উত্তেজনার খোরাক যোগাতেই খেলোয়াড়েরা এখন টেস্ট ছেড়ে ক্রমেই টি২০মুখী। মাইকেল হোল্ডিং একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, টেস্টের ভবিষ্যত শঙ্কায় থাকাটাই স্বাভাবিক। এখনকার কিশোররা ‘বেসিক’ না শিখেই টিভিতে দেখা শট রপ্ত করার চেস্টা করে থাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পেশাদারী মঞ্চে টি২০ ঢুকে পড়ায় টেস্টের ভবিষ্যত হুমকির সম্মুখিন।’
টি২০ দাঁড়িয়ে টেস্টের ঠিক বিপরীতে—ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার হাতিয়ার। তাতে হয়তো খসে পড়তে পারে টেস্টের, সুগভীর সৌন্দয্য-আব্রু। কিন্তু খ্যামটা নাচে তো আর ঘোমটা চলেনা ? ক্রিকেটের সেরা বিপননের দেশে উঠোন পাতাই আছে, এখন শুধু ঘুঙুর পরে খেলাটির রুপ-রস, আর পয়সার কষ মিলে মিশে একাকার হওয়ার অপেক্ষা !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×