লোহার সন্ধানে কূপ খননের দৃশ্য।
প্রথমেই শুকরিয়া আদায় করছি, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার যিনি এমন সুজলা সুফলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর, নদী-নালা পরিবেষ্টিত, সাগর-পাহাড় ঘেরা, ফুলে-ফলে সুশোভিত, শস্য-শ্যামলিমায় কান্তিময়, উর্বরা পলিখচিত নয়নাভিরাম ভূখন্ড প্রিয় বাংলাদেশকে আমাদের আবাসস্থল হিসেবে দান করেছেন। আমরা এই দেশ নিয়ে গর্ব করি। কবির ভাষায় গানের কথায় অবচেতনে মন গেয়ে উঠে- আল্লাহ এই দেশ তোমারই দান.......
ইতোপূর্বে প্রাকৃতিক গ্যাসই ছিল বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য একমাত্র খনিজ সম্পদ। নতুন আশারা আলো বিস্তার করেছে আবার। বাংলাদেশের মাটির নিচে আবিষ্কার হয়েছে লোহার বিশাল খনি। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপুর গ্রামে লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) এই খনি আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)। দীর্ঘ ২ মাস ধরে কূপ খনন করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর মঙ্গলবার (১৮ জুন ২০১৯) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জিএসবি’র কর্মকর্তারা। ধন্যবাদ জিএসবিকে এই সুসংবাদটি দেশবাসীকে দিতে পারার জন্য।
ইসবপুরে এই লোহার খনি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম লোহার খনি এটিই। এর ব্যাপ্তি রয়েছে ৬-১০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। ১১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও পাওয়া গেছে।
তারা জানান, সেখানে ভূগর্ভের ১ হাজার ৭৫০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার একটি স্তর পাওয়া গেছে। যা দেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং বাংলাদেশে প্রথম আবিষ্কার।
ইসবপুরে আবিষ্কৃত বাংলাদেশের প্রথম লোহার খনি। যার ব্যাপ্তি রয়েছে ৬-১০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। ১১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও মেলে।
মঙ্গলবার দুপুরে খননকাজে নিয়োজিত জিএসবি’র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম জানান, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কার করা হয়েছে, সেসব খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে। আর বাংলাদেশের লোহার ৬৫ শতাংশের উপরে। যার ব্যাপ্তি রয়েছে ৬-১০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রুমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। ১ হাজার ১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও মিলে।
তিনি আরও জানান, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ২০১৩ সালে এ গ্রামের ৩ কিলোমিটার পূর্বে মুর্শিদপুর এলাকায় কূপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছিল। সেই গবেষণার সূত্র ধরে দীর্ঘ ৬ বছর পর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে কূপ খনন শুরু করা হয়।
এরপর ১৩৮০-১৫০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত খননকালে সেখানে আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। এ খবর পেয়ে ২৬ মে জিএসবি’র মহাপরিচালক জিল্লুর রহমান চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে পরিদর্শনে আসেন। এসময় মহাপরিচালক সাংবাদিকদের সুখবর না দিলেও লোহার খনি আবিষ্কার হতে চলেছে এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার ফলে ১৭৫০ ফুট গভীরতা খনন করে লোহার খনির আবিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার আকরিকের এ স্তরটি পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে ৬০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল। সেই কারণে এখানে জমাট বাধা আদি শিলার ভেতরে লোহার আকরিকের এ সন্ধান পাওয়া যায়।
লোহার উপস্থিতি পরিক্ষা করা হচ্ছে।
উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইসবপুর গ্রাম। এ গ্রামের কৃষক ইছাহাক আলীর কাছ থেকে ৫০ শতক জমি ৪ মাসের জন্য ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে খনিজ পদার্থের অনুসন্ধানে কূপ খনন শুরু করে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর।
জিএসবি’র উপ-পরিচালক (ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ার) মাসুদ রানা জানান, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে কূপ খনন শুরু করা হয়। ৩০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ একটি দল ৩ শিফটে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ইসবপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আমরা জানতে পারলাম এখানে লোহার খনি পাওয়া গেছে। এখান থেকে লোহা উত্তোলন করা হলে এখানকার মানুষদের জীবনমান পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে এখানকার মানুষের। দেশের জন্যও লাভজনক হবে। এমনই আশায় বুক বাঁধছেন এখানকার সর্বস্তরের মানুষ। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের কাছে খনি বাস্তবায়নে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদেরও জোর দাবি, কোনো ধরণের অনিয়মের বেড়াজালে যেন আটকে না যায় এই বিপুল সম্ভাবনা। এই খনি থেকে সঠিক পদ্ধতিতে খনিজ সম্পদ আহরণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে।
ধারণা্ করা হচ্ছে, এ অঞ্চলে ৬০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল। সেই কারণে এখানে জমাট বাঁধা আদি শিলার ভেতরে লোহার আকরিকের এ সন্ধান পাওয়া যায়।
ঢাকা ট্রিবিউন, বাংলানিউজ২৪.কম, কালের কন্ঠ ও দৈনিক নয়াদিগন্ত অবলম্বনে।
ছবি: বাংলানিউজ২৪.কম এর সৌজন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:২০