সন্তানের আকিকার গোশত বাবা মা খেতে পারবেন? সাত ভাগের কম হলে কুরবানি সহীহ হয় না - কথাটা কতটুকু সঠিক? এবং কুরবানির পশুর গোশত তিন ভাগে বন্টন প্রসঙ্গে
ভাগে কুরবানির ক্ষেত্রে সাত ভাগের কম হলে কুরবানি সহীহ হয় না - কথাটা কতটুকু সঠিক?
গরু কিংবা মহিষ জাতীয় পশু কুরবানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত ভাগ এবং এর নিম্নে যে কোনো পরিমান অংশীদার মিলে কুরবানি বা আকীকা ইত্যাদি করা জায়েয। তবে শর্ত হচ্ছে, কারো ভাগে এক সপ্তমাংশের কম যেন না হয়। কারো ভাগের পরিমান এক সপ্তমাংশের কম হলে কোনো অংশীদারের কুরবানিই সহীহ হবে না। আর এ ধরনের পশুতে মৃত ব্যক্তির জন্যও ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে অংশ নেওয়া যাবে এবং এই অংশ সদকা করা জরুরি নয়। বরং এর হুকুম নিজের সাধারণ কুরবানির মতই। তা থেকে নিজেরাও খেতে পারবে এবং সদকাও করতে পারবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৭৪,৮৭৪; রদ্দুল মুহতার ৬/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৩১, ৩১৬, ৩৩৫
সন্তানের জন্য দেয়া আকিকার পশুর গোশত বাবা মা খেতে পারবেন?
আকীকা করা মুস্তাহাব। পুত্রসন্তানের জন্য দুটি ছাগল আর কন্যার জন্য একটি ছাগল। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ছেলের পক্ষ থেকে দু'টি ছাগল আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৩
আর কুরবানির পশুতে আকীকার নিয়তে শরিক হওয়াও জায়েয। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আকীকা ও কুরবানির কোনো অংশ পশুর এক সপ্তমাংশের কম না হয়।
আকীকার গোশত সন্তানের মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ধনী-গরীব সকলেই খেতে পারবে। আকীকার গোশতের বণ্টন ও ব্যবহার কুরবানির মতোই। কিছু গোশত নিজেদের জন্য রাখা, কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং কিছু গোশত গরীবদেরকে সদকা করা উত্তম। -আততালীকুল মুমাজজাদ ২৮৯, ২৯০; ইলাউস সুনান ১৭/১১৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; আলমুসতাদরাক লিল হাকিম, হাদীস : ৭৬৬৯
কুরবানির পশুর গোশত নিজের, আত্মীয়স্বজনের এবং গরিব মিসকিনদের জন্য তিন ভাগে ভাগ করে বন্টন করা না হলে কি কুরবানি সহি হবে?
কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে আর এক ভাগ ফকীর মিসকীনকে দেওয়া মুস্তাহাব। তবে এভাবে তিন ভাগে বণ্টন করা জরুরি নয়। কেউ পুরো গোশত নিজের জন্য রেখে দিলেও তার কুরবানি আদায় হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে নিজে না রেখে সব গোশত দান করে দিলে তাতেও কুরবানি আদায়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন। আরেক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক ভাগ ভিক্ষুক ও অসহায়দের দান করতেন। -আল মুগনী ১৩/৩৭৯
উল্লেখ্য, এ বণ্টন উত্তম জরুরি বা আবশ্যক নয়। তেমনি একেবারে ওজন করে তিন ভাগ করাও আবশ্যক নয়। বরং কুরবানিদাতার জন্য এতে তারতম্য করার অবকাশ অবশ্যই রয়েছে। তবে এটি যেহেতু একটি মুস্তাহাব এবং উত্তম আমল তাই সামর্থ্যবানদের এর উপর আমল করা উচিত। কিন্তু কারো পরিবারের সদস্য সংখ্যায় বেশি হলে কিংবা নিজেদের বেশি গোশতের প্রয়োজন থাকলে সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রয়োজন পরিমাণ গোশত রাখতে পারবে, এটা তাদের জন্য অনুত্তম হবে না। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৩৭; বযলুল মাজহূদ ১৩/৪৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৬; ইলাউস সুনান ১৭/২৬২
এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানির গোশত বণ্টন সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখতেন, এক ভাগ গরীব প্রতিবেশীকে দিতেন আর এক ভাগ অন্যান্য গরীব-মিসকীনকে দান করতেন। -আল ওযায়েফ, আবু মুসা আলআসবাহানী, মুগনী ইবনে কুদামা ১৩/৩৭৯-৩৮০
আরেক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরবানির গোশত যে পরিমাণ ইচ্ছা খাও, অন্যদেরকে খাওয়াও এবং যতটুকু ইচ্ছা জমা করে রাখ। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ১৫১০
শেষোক্ত হাদিসের দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, কুরবানির গোশত বণ্টনের বিষয়টি কুরবানিদাতার ইচ্ছাধীন। অন্যকে না দিলেও গুনাহ হবে না। আর প্রথম হাদীসে কুরবানির গোশত বণ্টনের উত্তম পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। তাই উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭২; মুয়াত্তা, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ২৮১-২৮২; হিদায়া ৪/৪৫০; উমদাতুল কারী ১০/৫৭-৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৭-৩২৮
وَالْأَفْضَلُ أَنْ يَتَصَدَّقَ بِالثُّلُثِ وَيَتَّخِذَ الثُّلُثَ ضِيَافَةً لِأَقْرِبَائِهِ وَأَصْدِقَائِهِ وَيَدَّخِرَ الثُّلُثَ؛ وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا، وَلَوْ حَبَسَ الْكُلَّ لِنَفْسِهِ جَازَ لِأَنَّ الْقُرْبَةَ فِي الْإِرَاقَةِ وَالتَّصَدُّقِ بِاللَّحْمِ تَطَوُّعٌ (رد المحتار، كتاب الاضحية-9/474، زكريا، بدائع الصنائع-4/224، زكريا، الفتاوى السراجية-389
ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৮