দুধে পানি মেশানো কি না, ল্যাকটোমিটার ব্যবহার করে তা বুঝবেন যেভাবে:
দুধের উপকারিতা সর্বজনবিদিত:
দুধের পুষ্টি গুন নতুন করে বলার বোধ করি প্রয়োজন নেই। প্রচুর পুষ্টি-উপাদানে সমৃদ্ধ দুধ একটি আদর্শ খাদ্য এবং পানীয়। সকল প্রকারের খাদ্য গুনের সমাহার থাকায় কেবল দুধ পান করেই শিশুদের বেঁচে থাকা সম্ভব হয়। ক্যালসিয়াম ছাড়া দুধের মধ্যে ফসফরাস, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণও অনেক বেশি থাকে। দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ক্লান্তি দূর করতে একগ্লাস গরম দুধ খুবই উপকারী। গরম দুধ ক্লান্ত পেশি সতেজ করতে সাহায্য করে।
তবুও কি বিশ্বাস রাখার আছে কোনো উপায়?
কিন্তু এতসব গুনের আধার দুধের উপরেও আজ আর বিশ্বাস রাখার উপায় নেই। অসাধু লোকেরা ভ্যাজাল মিশাচ্ছে দুধেও। গরুর দুধে পানি মিশিয়ে, পাউডার পানিতে গুলিয়ে ইত্যাদি নানান উপায়ে নকল দুধ বানিয়ে বাজারে বিক্রি করছে খাঁটি গরুর দুধ বলে। টাকা পয়সা খুইয়ে নকল দুধ কিনে প্রতিনিয়ত: এদের হাতে নাকাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।
দুধের আরও কিছু উপকারিতা:
দুধ খেলে শরীরে মেলটনিন ও ট্রাইপটোফ্যান হরমোন নিঃসৃত হয়, এই হরমোনগুলো ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে। দুধে রয়েছে পটাশিয়াম যা হৃদপিণ্ডের পেশির সুস্থতা বজায় রাখে। তাছাড়া এর খনিজ উপাদান হৃদপিণ্ড সতেজ রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। এতে আছে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা চুলের জন্য খুব উপকারী। তাছাড়া দুধের ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের জন্যও জরুরি।
দুধে পানি মেশানো কি না তা বোঝার উপায়:
দুধের যতখানি উপকারিতা তা পাওয়া যাবে যদি দুধ খাঁটি হয়। কিন্তু বর্তমানে অধিক লাভের জন্য দুধের সাথে পানি মিশিয়ে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। পানি মিশ্রিত ভেজাল দুধ খেলে উপকার মিলবে না তেমন। তাই জেনে নেয়া প্রয়োজন গরুর দুধে পানি মেশানো আছে কি না তা বোঝার উপায়-
সাধারণত: এটি বুঝতে পারা কঠিন, দুধে অন্য কোনো পদার্থ মিশ্রিত রয়েছে কি না। তবে এটি পরিমাপ করার জন্য একটি যন্ত্র আছে যাকে বলে ল্যাক্টোমিটার। এই যন্ত্রটির ব্যবহারে আপনি দুধের সঠিকত্ব যাচাই করার সুবিধা পাবেন।
ল্যাক্টোমিটার যেভাবে ব্যবহার করতে হবে:
ল্যাক্টোমিটার পানি এবং দুধের সঠিক ঘনত্ব পরিমাপ করে। ল্যাক্টোমিটার খুবই উপকারী একটি যন্ত্র। এই পরিমাপক যন্ত্রের মধ্যে লাল রেখা দেখা যায় যেখানে পরিমাপের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নম্বর দেয়া থাকে।
যখন এই লাল রেখা ৩০ নম্বরে থাকে তার মানে হচ্ছে দুধে অন্যান্য পদার্থের মিশ্রণ খুব কম। যদি এই দাগ ৩০ এর উপর যায় তাহলে পরিমাপক যন্ত্র অনুযায়ী ১/৪ পানি, আরো উপরে গেলে অর্ধেক পানি অর্ধেক দুধ। লাল রেখাটি এর থেকেও উপরে যদি উঠতে থাকে তাতে বুঝা যাবে অল্প দুধ আর বাকিটুকু মিশ্রিত পানি।
ধরুন আপনি একটি দুধের পাত্রে ল্যাক্টোমিটার যন্ত্রটি প্রবেশ করালেন যদি লাল রেখাটি ৩০ এর ঘরে থাকে তাহলে দুধে পানির পরিমাণ খুব সীমিত অথবা নেই। এ থেকেই বোঝা যায় দুধটি খুব শুদ্ধ এবং শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত।
পরিশেষে:
মনে রাখতে হবে, নিয়মিত দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারদ্রব্য গ্রহণ করলেই দুধের উপকারিতা পাওয়া সম্ভব নয়। দুধের সঠিক উপকারিতা পেতে প্রয়োজন খাঁটি গরুর দুধ। তাই সবার আগে খাঁটি দুধ খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। সচেতনতা তৈরি করতে হবে সকলের ভেতরে। দুধের ভ্যাজালরোধে, খাঁটি দুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এই ছোট্ট যন্ত্রটি আজই সংগ্রহ করে রাখুন না।
ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৩