ধন্যবাদ ট্রাম্প, অভিনন্দন জো বাইডেন!
অঘটনের শঙ্কা একেবারেই যে ছিল না- তা নয়, ট্রাম্পের হুমকি ধমকি সত্বেও মার্কিন নাগরিকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো অঘটন ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠানের বিশাল কর্মযজ্ঞটি সুসম্পন্ন হয়েছে এই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়কালে, তারই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে। তার একরোখা আচরণে আমেরিকানরা তো বটেই, সারা বিশ্বের মানুষের চোখে মুখে ছিল এক প্রকার শংসয় এবং আতঙ্ক- না জানি কখন কি হয়ে যায়! 'হেরে গেলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করব না', 'আদালতে যাব' - ট্রাম্পের ইত্যাকার নানান উক্তি মানুষের শঙ্কা-আশঙ্কা-উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেকে আশান্বিত ছিলেন যে, ভোট গণনার শেষের দিকে এসে ট্রাম কার্ড জাতীয় কিছু একটা দেখাতে সক্ষম হবেন হয়তো ট্রাম্প। কিন্তু না, সকল জল্পনা কল্পনার প্রায় অবসান হয়ে আসার পরেও সেরকম কোনো লক্ষন আর নেই বলা চলে। তাই ধরে নেয়ার সময় সম্ভবতঃ এসে গেছে যে, সবকিছু ছাপিয়ে ট্রাম কার্ড শেষমেষ ট্রাম্পের নিজেরই দেখতে হচ্ছে....। তবু ধন্যবাদ ট্রাম্পকে, তিনি দাঙ্গা হাঙ্গামার আশঙ্কাকে আশঙ্কার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
কারণ, ৫৩৮ টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন ইতোমধ্যেই ২৬৪ টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ২১৪ টি ইলেকটোরাল ভোট। ২৭০ টি নিশ্চিত করে প্রেসিডেন্ট হতে জো বাইডেনের প্রয়োজন আর মাত্র ৬ ইলেকটোরাল ভোট।
ইতোমধ্যে সুইং স্টেট (দোদুল্যমান) উইসকনসিনের পর মিশিগানেও জয় পেয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন। এই অঙ্গরাজ্যের ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাচ্ছেন তিনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন ও এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মিশিগানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয় পেয়েছেন বাইডেন।
সিএনএন তাদের সর্বশেষ খবরে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে অঘোষিত ৬ টি অঙ্গরাজ্য (অ্যারিজোনা, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আলাস্কা) এর মধ্যে নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। তিনি ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, বিপরীতে ট্রাম্পের ভোট ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ৬ টি। ফলে এই ভোটগুলো পেলেই হোয়াইট হাউজে যাওয়ার টিকেট নিশ্চিত হয়ে যাবে জো বাইডেনে
অন্যদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ২১৪ টি ইলেকটোরাল ভোট। যদিও ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই অনেকটা আজগুবি কায়দায় নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এমনকি ভোট গণনা বন্ধে তিনি সুপ্রিমকোর্টের দারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছিলেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়াতে ভোট গণনা বন্ধের দাবিতে মামলা করেছে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা শিবির। ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ অবশ্য অনুমিতই ছিল। কারণ, শুরু থেকেই তিনি আইনি লড়াইয়ের হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
তবে নিজেকে এখনই বিজয়ী বলতে নারাজ বাইডেন। ভোট গ্রহণ শেষে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে দেওয়া আনুষ্ঠানিক এক ভাষণে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বলেন, ‘আমি এখানে বিজয় ঘোষণা করতে আসিনি। কিন্তু বলতে এসেছি, ভোট গণনা শেষ হলে আমার বিশ্বাস আমরাই জিতব।’
বাইডেনের বিজয়ের স্বপ্নে ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
এদিকে, ভোটপ্রাপ্তির দিক দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও ছাড়িয়ে গেছেন একই দলের প্রার্থী জো বাইডেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামা ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়েছিলেন। গণনাকৃত ভোটের চিত্রে দেখা গেছে, জো বাইডেন ইতোমধ্যেই ৭ কোটি ১৬ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এত বেশি সংখ্যক ভোট পেয়ে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। অভিনন্দন জো বাইডেন।
উৎসর্গঃ চাঁদগাজী ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। তার কাজের দায়িত্ব তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই নিতে হচ্ছে। যদিও তার মত করে অল্প কথায় অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তবে প্রত্যাশা, তিনি এই পোস্টে আসবেন এবং তার মূল্যবান অভিমত, ভোটদানের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি শেয়ার করবেন, যাতে ব্লগারগণের পক্ষে নির্বাচনের খুটিনাটি জানার সুযোগ হয়ে ওঠে। অভিনন্দনসহ তার প্রতি উৎসর্গ করছি এই পোস্ট।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৫০