somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

রমজানুল মুবারকের শেষ দশকের অন্যতম আমল ইতিকাফ এবং এর বিধিবিধান

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

রমজানুল মুবারকের শেষ দশকের অন্যতম আমল ইতিকাফ এবং এর বিধিবিধান

শাব্দিক অর্থে ইতিকাফঃ

‘ইতিকাফ’ অর্থ অবস্থান করা, আবদ্ধ করা, আবদ্ধ হওয়া বা আবদ্ধ রাখা।

পরিভাষায় ইতিকাফঃ

পরিভাষায় ইতিকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা। যিনি ইতিকাফ করেন, তাঁকে ‘মুতাকিফ’ বলে।

ইতিকাফ কাকে বলে?

ঘর বাড়ির আরাম আয়েশ পরিত্যাগ করে, পার্থিব কোলাহল মুক্ত হয়ে, সকল কিছুর আকর্ষণ এবং ভালোবাসা ভুলে, আত্মীয়তার বন্ধন ও প্রিয় মানুষদের প্রেম, মুহাব্বত এবং স্নেহ মমতার টানকে উপেক্ষা করে একান্তভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সান্নিধ্যলাভের প্রত্যাশায় মসজিদের নির্জন ও নিরিবিলি পরিবেশে একান্তে অনবরত অব্যাহতভাবে দিন রাত তাঁর ইবাদত বন্দেগী করে যাওয়ার নাম ইতিকাফ।

ইতিকাফ এর উল্লেখ পবিত্র কুরআন মাযিদেও রয়েছে। যেমন- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন,



‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। -সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫

প্রিয় নবীজীর নিয়মিত আমল ছিল ইতিকাফঃ

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজীবন রমজান মাসের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের (আগে) পরেও তাঁর বিবিগণ (ঘরে) ইতিকাফ করতেন। -বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯

ইতিকাফ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদতঃ

ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমাদান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। আর কেউই আদায় না করলে সবাই সুন্নাত তরকের দায়ে দায়ী থাকবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।

ইতিকাফের কিছু জ্ঞাতব্যঃ

দশ দিনের কম যেকোনো পরিমাণ সময় ইতিকাফ করলে তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে। নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নেক আমল; তাই সম্পূর্ণ সুন্নাত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যত দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি; রমাদানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। নফল ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময়ই করা যায়। ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত; কিন্তু স্বল্প সময় (এক দিনের কম সময়) ইতিকাফ করলে তার জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। নফল ইতিকাফ (রোজাসহ কমপক্ষে এক দিনের জন্য) মান্নত করলে বা আরম্ভ করে ছেড়ে দিলে, তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এর জন্য রোজা শর্ত এবং এটি এক দিনের (২৪ ঘণ্টা) কমে হবে না। যেকোনো দিন সূর্যাস্তের পূর্ব হতে পরের দিন (রোজাসহ) সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করলে পূর্ণ এক দিন ইতিকাফ হয়।

আরও কিছু জ্ঞাতব্যঃ

সাধারণত পুরুষদের মসজিদে ইতিকাফ করতে হয়; মহিলাগণ নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষে ইতিকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত বিশেষ জরুরত ছাড়া ওই ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। অজু ইস্তিঞ্জা বা পাকপবিত্রতার জন্য বাইরে বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না বা সালাম কালাম করবেন না। কেউ সালাম দিলে তার জওয়াবও দেবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন। ইতিকাফ কক্ষে এমন কেউ অবস্থান করতে পারবেন, যাঁরা ইতিকাফ করছেন না। ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যে কেউ অবস্থান করেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন; তবে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ; এর দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইতিকাফের সময় ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে (বা নির্দিষ্ট স্থানে)। -সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭

ইতিকাফকারী অনেক সাওয়াবের অধিকারী হবেনঃ

ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী ফরজ ইবাদতের বাইরে কোনো নফল ইবাদত না করলেও ইতিকাফের সওয়াব পাবেন। তবে অতিরিক্ত নফল ইবাদত করলে আরও বেশি ফজিলতের অধিকারী হবেন। যেমন কোরআন কারিম তিলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া, কাজা নামাজ আদায় করা, দোয়াদরুদ পাঠ করা, জিকির আসকার করা, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করা, জিকির আসকার ও তাওবাহ ইস্তিগফার করা। এ ছাড়া দীনি কথাবার্তা ও ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করাও সওয়াবের কাজ। যেমন কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, তাফসির ইত্যাদি পাঠ করা ও তালিম করা।

ইতিকাফ অবস্থায় এমন সব কথা বলা ও কাজ করা বৈধ, যাতে কোনো গুনাহ নেই। প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথাবার্তা বলতেও নিষেধ নেই; তবে অহেতুক অযথা বেহুদা অনর্থক কথাবার্তা বলা যাবে না। ইতিকাফকারী মসজিদে বা ইতিকাফের স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন এবং মাথায়, দাড়িতে ও চুলে তেল লাগাতে পারবেন। মাথার চুলে ও দাড়িতে চিরুনিও ব্যবহার করতে পারবেন। -খোলাসাতুল ফিকহ

যিনি নিয়মিত যে আমল করেন অথবা কোনো নেক আমলের নিয়ত করেন, বিশেষ কোনো ওজরের কারণে তা করতে না পারলেও তার সওয়াব পাবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মসজিদে ইতিকাফ করতে না পারলে, নির্দিষ্ট স্থানে অনুরূপ অবস্থান করলেও বিশেষ সওয়াবের আশা করা যায়।

প্রশ্নোত্তর আকারে ইতিকাফঃ

প্রশ্ন ১ : ই‘তিকাফ কী? এর হুকুম কী?

উত্তর :
দুনিয়াবী সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করাকে ই‘তিকাফ বলা হয়ে থাকে।
ইতেকাফ করা সুন্নাত।

প্রশ্ন ২ : ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য কী?

উত্তর :
দুনিয়াদারীর ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া, বিনয় নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমপর্ণ করা এবং বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করাই ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ৩ : ই‘তিকাফের জন্য কী কী শর্ত পূরণ আবশ্যক?

উত্তর :
(ক) মুসলমান হওয়া, (খ) জ্ঞান থাকা, (গ) বড় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা, গোসল ফরয হলে গোসল করে নেয়া। (ঘ) মসজিদে ই‘তিকাফ করা। কাজেই কাফির-মুশরিক, অবুঝ শিশু, পাগল ও অপবিত্র লোক এবং হায়েয-নিফাস অবস্থায় নারীদের ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন ৪ : ই‘তিকাফের রুকন কয়টি ও কী কী?

উত্তর :
এর রুকন ২টি : (ক) নিয়ত করা, (খ) মাসজিদে অবস্থান করা, নিজ বাড়ীতে বা অন্য কোথাও ই‘তিফাক করলে তা শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন ৫ : মেয়েরা কি নিজ বাসগৃহে ই‘তিকাফ করতে পারবে?

উত্তর :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় নারীরা মসজিদে ই‘তিকাফ করতেন।

প্রশ্ন ৬ : ই‘তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ নিষিদ্ধ?

উত্তর :
তাহল : (১) স্বামী স্ত্রীর মিলন, স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা, (২) মাসজিদ থেকে বের হওয়া। বেচাকেনা, চাষাবাদ, এমনকি রোগীর সেবা ও জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্যও মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ইতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ৭: বিশেষ প্রয়োজনে ই‘তিকাফ অবস্থায় মাসজিদ থেকে বের হতে পারবে কি?

উত্তর :
মাসজিদের গণ্ডির মধ্যে ব্যবস্থা না থাকলে শুধুমাত্র মানবিক প্রয়োজনে প্রস্রাব-পায়খানা, খাওয়া- দাওয়া ও পবিত্রতা অর্জনের জন্য মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয আছে, দলীল : তবে মাসজিদে এসব ব্যবস্থা থাকার পর যদি কেউ বাইরে যায় তাহলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। ই‘তিকাফ অবস্থায় এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী সাফিয়া রাদ্বি আল্লাহু আনহা কে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। -বুখারী

প্রশ্ন ৮ : কী কী কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়?

উত্তর :
নিচে বর্ণিত যে কোন একটি কাজ করলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। ১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে ২. কোন শির্ক বা কুফরী কাজ করলে। ৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে। ৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে। ৫. স্ত্রীসহবাস বা যে কোন প্রকার যৌন সম্ভোগ করলে।

প্রশ্ন ৯ : ই‘তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ করা বৈধ অর্থাৎ মুবাহ?

উত্তর : ই‘তিকাফকারীদের জন্য নিুোক্ত কাজ করা বৈধ :
১. একান্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা।
২. চুল আঁচড়ানো, মাথা মুণ্ডানো, নখ কাটা, শরীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করা, এবং সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করা।
৩. মসজিদের ভিতরে পানাহার করা, ঘুমানো এবং বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহের কাবিননামা ও ক্রয়- বিক্রয়ের চুক্তিও সম্পাদন করা যাবে।

প্রশ্ন ১০ : ই‘তিকাফকারীর দায়িত্ব ও করণীয় কাজ কী কী? এবং তাঁর কী ধরনের ইবাদত করা উচিত?

উত্তর : উত্তম হল নফল ইবাদত বেশী বেশী করা। যেমন সলাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা, যিক্র-আযকার ও তাসবীহ, তাহলীল করা অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, তাওবাহ-ইস্তেগফার, দু‘আ, দুরূদ ইত্যাদি ইবাদতে সর্বাধিক সময় মশগুল থাকা। তাছাড়া শরীয়া বিষয়ক ইলম চর্চা করা। পার্থিব ব্যাপারে কথাবার্তা বলা, অনর্থক গল্পগুজব ও
আলোচনা থেকে বিরত থাকা উচিত, তবে পারিবারিক কল্যাণর্থে বৈধ কোন বিষয়ে অল্পস্বল্প কথাবার্তা বলার মধ্যে কোন দোষ নেই।

প্রশ্ন ১১ : ই‘তিকাফের জন্য কোন্টি উত্তম সময়?

উত্তর : রমযান মাস হচ্ছে ই‘তিকাফের উত্তম সময়। আরো উত্তম হচ্ছে রমযানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা।

প্রশ্ন ১২ : সর্বনিম্ন কী পরিমাণ সময় ই‘তিকাফ করা যায়?

উত্তর : এটি একটি মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। শাইখাইনের মতে ই‘তিকাফের ন্যূনতম সময়সীমা ১দিন। কেননা, হানাফী মতে ই‘তিকাফের জন্য রোযা শর্ত। আর রোযা ১ দিনের কমে পূর্ণ হয় না।

প্রশ্ন ১৩ : ই‘তিকাফ কখন শুরু ও শেষ করব?

উত্তর : ফযরের সলাত আদায় করে বা সূর্যাস্তের পর ই‘তিকাফে প্রবেশ করা সুন্নাত/মুস্তাহাব। আর শেষ করবে ঈদের চাঁদ দেখা গেলে।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করতেন।

প্রশ্ন ১৪ : রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ই‘তিকাফ করেছেন?

উত্তর :
প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ই‘তিকাফ করেছিলেন ২০ দিন। এভাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোন বছরই তিনি ই‘তিকাফ থেকে বিরত থাকেননি। -বুখারী

প্রশ্ন ১৫ : ই‘তিকাফ কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর:
ইসলামী শরীয়তে ই‘তিকাফ ৩ প্রকার।
(ক) ওয়াজিব ই‘তিকাফ : ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে ওয়াজিব ই‘তিকাফ হলো মানতের ই‘তিকাফ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে।” -সূরা হাজ্জ : ২৯
(খ) সুন্নাত ই‘তিকাফ : যেমন : রমযানের শেষ ১০ দিনের ই‘তিকাফ। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
(গ) মুস্তাহাব ই‘তিকাফ : উল্লেখিত দু’প্রকার ব্যতীত বাকী সব মুস্তাহাব ইতেকাফ।

ইতেকাফ সংক্রান্ত ফজিলতঃ-

আল কোরআনুল কারিমে বিভিন্নভাবে ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে ইরশাদ হয়েছে : 'এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো। ' -সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫

আবু হুরাইরা (রা) বলেন : 'রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান। ' -বুখারি : ১৯০৩

রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : 'আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ পছন্দ করে, সে যেন ইতিকাফে বসে। ' -মুসলিম : ১৯৯৪

ইতিকাফকারী এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
'নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে এবং নামাজ তাকে আটকে রাখবে, তার পরিবারের কাছে যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া
করতে থাকবে। ' -মুসলিম : ৬০১১

অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইতেকাফ করলো সে ১)১০ টা দিন আল্লাহর জন্য ব্যয় করলো। ২)১০ টা দিন মাসজিদে আল্লাহর জন্য সব সময় ইবাদত করার সময় পেলো। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআ'লা কোন সময় মানুষের দোয়া কবুল করেন তা মানুষ বলতে পারে না। তাই ১০ দিনের মধ্যে একটা দিন আপনার দোয়া কবুল হলে আপনি পাপ মুক্ত হবেন। ৩) আর সেই দিন যদি শবে কদর হয়। তবে হাজারো মাসের চেয়ে উত্তম যে রাত সেই রাতে আপনি আল্লাহর ঘরের মেহমান!! কি মহাসৌভাগ্যের ব্যাপার! আল্লাহু আকবার! এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে!! আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ইতেকাফ এ বসার তাওফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×