somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের জন্য কল্যাণকর আল্লাহর অপার নিআমত

০৩ রা মে, ২০২১ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে ইউনেস্কোর বিশেষ ঐতিহ্য ঘোষিত স্পেনে মুসলিম সভ্যতার যুগে প্রতিষ্ঠিত আল হাকাম লাইব্রেরি, যা সেই আমলে তৎকালীন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ৪,০০,০০০ মূল্যবান পুস্তকের সমাহারে আলোকোদ্ভাসিত ছিল। ছবিঃ অন্তর্জাল।

প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের জন্য কল্যাণকর আল্লাহর অপার নিআমত

বর্তমান পৃথিবী প্রযুক্তি নির্ভর। মানুষ সভ্যতা, আধুনিকতা এবং উন্নতির চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে। গোটা পৃথিবীটা এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। পৃথিবীকে বৈশ্বিক গ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এটা বলা সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানের ক্রমাগত নিত্যনতুন আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের ফলে। বস্তুতঃ প্রযুক্তি বিজ্ঞানের আবিষ্কার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নির্ভর করে তার ব্যবহারকারী তথা পরিচালকের ওপর। পৃথিবীর প্রতিটি আবিষ্কার উদ্ভাবনকে যেমন ভালো কাজে ব্যবহার করা যায় তেমনি মন্দ কাজেও ব্যবহার করা যায়। ভালো ও মন্দ কাজে ব্যবহার ব্যক্তির জ্ঞান, বিশ্বাস এবং সর্বোপরি তার পরিচালনার ওপরই নির্ভর করে। মানুষের কল্যানে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অসাধারণ একেকটি নিআমত। পবিত্র কুরআনের প্রথম কথা 'পড়ুন'। জ্ঞান বিজ্ঞানকে ইসলাম যে সবার উর্ধ্বে স্থান দেয় কুরআনুল কারিমের সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত থেকেই তা অনুমেয়। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা, অনুশীলন এবং গবেষনা করতে বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এসব বিষয়ে কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন স্থানে বারংবার উৎসাহিত করা হয়েছে। এক আয়াতে জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা সম্পর্কে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন-

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَـٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

‘নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানসম্পন্ন লোকদের জন্যে। যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।’ -সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯০-১৯১

কুরআনুল কারিম জ্ঞান-বিজ্ঞানে আলোচনায় ভরপুর। যার আবিষ্কার মুসলিমরা না করলেও অনেকেই কুরআনের গবেষণায় নিয়োজিত। বিশ্বনবির মেরাজ ও ওহি নাজিলের বিষয়টি গবেষণা করেই বর্তমান সময়ের উচ্চ যোগাযোগ ব্যবস্থার সব প্রযুক্তি আবিষ্কৃত।

প্রযুক্তির কল্যাণেই সারা পৃথিবী একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। হাতের মুঠোয় পুরো বিশ্ব। প্রযুক্তির কল্যাণে নিমিষেই সারা বিশ্বের যে কোনো খবর পৌছে যায় মানুষের কাছে। হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থানকারী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।

বিজ্ঞানের সব আবিষ্কারগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি মানুষের জন্য মহান আল্লাহ তাআলা বিশেষ নেয়ামত। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এসব আবিষ্কার মানুষের জন্য হারাম বা অভিশাপ নয়। এগুলোর মানুষকে উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে তা সবার জন্য হয়ে ওঠবে কল্যাণকর। সে কারণে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা মানুষের জন্য খুবই জরুরি। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করতেও শিখিয়েছেন-

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

‘যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে (নিআমত) আরও বৃদ্ধি করে দিব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ -সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার শুকরিয়া আদায় করার সর্বনিম্ন স্তর হলো- বিজ্ঞানের কল্যাণে আবিষ্কৃত সব জিনিসকে আল্লাহর নিআমত মনে করে তা সঠিক স্থানে, সঠিকভাবে ব্যবহার করা। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অবাধ্যতায় এবং মানবতার ক্ষতির কাজে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।

বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে হারাম বলা মূর্খতাঃ

মূর্খতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে মুসলিমদের। কিছু লোক এখনও ধর্ম বিশ্বাসের নামে মিথ্যে এবং অন্ধ কিছু বিশ্বাসকে লালন করে ধর্মের নামে কলঙ্ক ছড়ান। যদিও ইসলাম ধর্মে কোনো প্রকার কূপমন্ডুকতা স্থান নেই এবং অন্ধ বিশ্বাসেরও সুযোগ নেই। অতএব, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা, নীতি এবং আদর্শ না জেনে, জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকিত পথ থেকে দূরে সরে থেকে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারকে ইসলামের বিপরীতে দাড় করানোর পায়তারা নিছক মূর্খতা এবং সেগুলো ব্যবহার করা হারাম বলে তা থেকে পিছিয়ে থাকার প্রচেষ্টা অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই নয়। বস্তুতঃ বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কারকে হারাম বলার কোনো সুযোগ নেই বরং এগুলোকে আল্লাহর নিআমত মনে করে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

যুগে যুগে সব নবি-রাসুলরাও তাদের সময়ে সেরা সেরা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। তাদের দাওয়াতি কাজ থেকে শুরু করে দুনিয়ার সব কাজেই তারা পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। সুতরাং এ কথা বলা চলে যে, প্রযুক্তি ইসলাম ও মুসলমানসহ সমগ্র মানবজাতির জন্য কল্যাণকর।

কুরআনুল কারিমের এ আয়াতের দিকে একটু গভীর মনোযোগী হলেই সব মানুষের চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوا شُيُوخًا ۚ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّىٰ مِن قَبْلُ ۖ وَلِتَبْلُغُوا أَجَلًا مُّسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

‘তিনিই সেই মহান সত্ত্বা, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। অতপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর জমাট রক্ত থেকে, তারপর তোমাদেরকে (দুনিয়াতে) বের করে আনেন শিশুরূপে। অতপর (এক সময়) তোমরা যৌবনে পৌঁছে যাও, অতপর (সময়ের ব্যবধানে) বার্ধক্যে উপনীত হও। (আবার) তোমাদের কারও কারও এর আগেই মৃত্যু ঘটে যায় এবং তোমরা (কেউ কেউ) নির্ধারিত আয়ুষ্কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকো। যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার।’ -সুরা মুমিন : আয়াত ৬৭

এ আয়াত নিয়ে চিন্তা করলেই মানুষ বুঝতে পারবে মহান আল্লাহ কত বড় বিজ্ঞানী। তার জ্ঞানের পরিধি কথা সীমাহীন। যিনি এক ফোঁটা পানি থেকে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে ধারাবাহিকভাবে শিশু, কিশোর, যৌবন ও বার্ধক্য দান করেন এবং সবশেষ মৃত্যু দান করেন।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াত রয়েছে। আর তা প্রমাণ করে যে ইসলাম কখনো জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে মানুষকে নিরুৎসাহিত করে না। বরং এর সঠিক ও সুন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত করে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিভিন্ন বিষয়ে উন্নত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যবহার করছেন। ইসলামের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ গাজওয়ায়ে আহজাব তথা খন্দকের যুদ্ধে তিনি পারসিক কৌশল ব্যবহার করেছেন। যা আরবদের কাছে ছিল অপ্রচলিত প্রযুক্তি। আরবরা এ কৌশল কখনো চিন্তাই করেনি।

এ ছাড়া যুগে যুগে মুসলিম মনিষীরাও বিজ্ঞানের নানান আবিষ্কার মানুষকে উপহার দিয়েছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন বিশ্বব্যাপী। মুসলিম রাজা-বাদশাহদের পরিচালিত স্পেন ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের শীর্ষে।

মুসলিমদের কিছু আবিষ্কার-

মুসলিম মনিষীদের আবিষ্কার থেকে বাদ যায়নি- রসায়ন, চিকিৎসা, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য-বিচার ব্যবস্থা ও সমাজ বিজ্ঞান। মুসলিমদের কিছু আবিষ্কার-

রসায়নের আবিষ্কারক : জাবের বিন হাইয়ান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে : আল-রাজি, জাহরাভি ও ইবনে সিনা।
ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানে : আল-ফারগানি।
সমাজ বিজ্ঞানে : ইবনে খালদুন।
ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিচার ব্যবস্থাপনায় : ইবনে বতুতা। এবং
গণিত, ভূগোল ও জ্যোতির্ময় বিজ্ঞানে : আল-খোয়ারিজমি।

মনে রাখা প্রয়োজনঃ

জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে কোনো আবিষ্কার তথা প্রযুক্তি কোনোটিই খারাপ নয়। তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে চাইলে যে কেউ এসব আবিষ্কার বা প্রযুক্তি সঠিক কাজে লাগাতে সক্ষম। আবার চাইলে মন্দ কাজেও ব্যবহার করতে সক্ষম।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নে চিন্তা ও গবেষণা সবার জন্যই অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-

أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا فِي أَنفُسِهِم ۗ مَّا خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُّسَمًّى ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ لَكَافِرُونَ

তারা নিজেরা কি ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথরূপে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতে অবিশ্বাসী।’ -সুরা রূম : আয়াত ৮

কেননা আল্লাহ তাআলা বিশ্ব জগত এমনি এমনি সৃষ্টি করেননি। সৃষ্টি গুরুত্ব উপলব্ধি করতেই আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টি জগত ঘুরে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ۚ ثُمَّ اللَّهُ يُنشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।’ -সুরা আনকাবুত : আয়াত ২০

সুতরাং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের জন্য কল্যাণকর। এর চিন্তা-ভাবনা-গবেষণাও কল্যাণকর। এর সঠিক ব্যবহারও কল্যাণকর। প্রযুক্তিকে মানুষ যখনই কল্যাণমূলক কাজ তথা সঠিক কাজে ব্যবহার করবে তখনই এটি মানুষের জন কল্যাণকর হবে। ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

প্রযুক্তি আল্লাহর অপার নিআমতঃ

প্রযুক্তি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিয়ামাত। সমগ্র বিশ্ব এমন একটি সময় অতিবাহিত করছে যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া জীবন ধারণ সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করছে। বিশ্বব্যাপী গবেষকরা গবেষণা করে নতুন নতুন আবিষ্কারাদি আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে।

সমুদ্রের সৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনে এসেছে,

وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাংস খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযান সমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর। -সুরা নাহল : আয়াত ১৪

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ তাআলা সমুদ্র সৃষ্টি করে তাকে অসংখ্য মঙ্গলের ও উপকারের জন্য বৃহৎ ও প্রশস্ত করেছেন। সমুদ্র থেকে আমরা অনেক কিছু পেয়ে থাকি। এরপর আল্লাহ তাআলার নিপুন হিকমত দ্বারা মনি-মুক্তাকে মানুষের ব্যবহারের জন্য গভীর পানিতে ঝিনুকের গর্ভে সৃষ্টি করে রেখেছেন।

অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ

‘উভয় দরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় মোতি ও প্রবাল।’ -সুরা রহমান : আয়াত ২২

আলোচ্য আয়াতে যে প্রবালের কথা বলা হয়েছে এ সম্পর্কে কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক বলেন যে, এটিও একপ্রকার মনি-মুক্তা, যা মুক্তা থেকে হালকা ও ক্ষুদ্রাকার হয়ে থাকে।

আজকের পৃথিবীতে বিজ্ঞানীদের সমূদয় আবিষ্কার হচ্ছে কোরআনের ম্যাসেজের ফলাফল মাত্র। আমরা কোরআন পড়ি না বলেই এসব আবিষ্কারাদি আমাদের কাছে নতুন নতুন মনে হচ্ছে। কুরআন পড়লেও এর ভেদ-রহস্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির, উপলব্দি করার চেষ্টা করি না। যার ফলে প্রযুক্তি থেকে বিশ্ব মুসলিম এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

কোরআন যে বিজ্ঞানময় তার প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ বলেন,

وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ

বিজ্ঞানময় কোরআনের কসম।` -সুরা ইয়াসিন : আয়াত ২

অথচ এই বিজ্ঞানময় কোরআন নাজিল হয়েছে মুসলমানদের ওপর কিন্তু মুসলমানরাই কুরআনকে রিসার্চ না করার ফলে তারা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আল্লাহ বলছেনে, ‘তিনি আকাশকে খুলে দিবেন।’ তাই যারা এ কথার মর্ম বুঝতে পেরেছে তারা তার সদ্ব্যবহার করেছে। যারা বুঝেনি তারা অন্ধকারে পড়ে রয়েছে।

বর্তমানে আমরা শুধু তোতা পাখির মত কোরআন মুখস্ত করছি কিন্তু কোরআনের মূল বাণী, ভেদ-রহস্য, শিক্ষা সম্পর্কে গাফেল রয়েছি। যেহেতু আমরা কোরআনের শিক্ষাকে কাজে বাস্তবায়ন করছি না তাই আমরা অন্যান্য জাতি-ধর্ম থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা মুসলিম উম্মাহকে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির পথে ধাবিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। গোড়ামি, কূপমন্ডুকতা এবং অন্ধ অনুসরণের বিপথগামী পথ পরিহার করে মানবতার কল্যাণে তাদেরকে কাজ করার হিম্মত ও সাহস দান করুন। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং আবিষ্কার-উদ্ভাবনে বিশ্বমন্ঞ্চে তাদের হারানো গৌরবময় আসনে পুনরায় অধিষ্ঠিত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২১ দুপুর ১২:৫৪
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×