ফিলিস্তিন! হায় ফিলিস্তিন!
রক্ত ঝড়া আর কত প্রভাত উপহার দেবে তুমি আমাদের!
আর কত নিস্পাপ শিশুর ক্ষত বিক্ষত লাশ তুলে দিবে আমাদের কোলে?
আর কত মায়ের বুক খালি হলে
রক্ত ঝড়ার তোমার এই বিভীষিকাময় সময়গুলো পাল্টে যাবে?
আর কত শিশু পিতৃ মাতৃহীন হলে তুমি শান্ত হবে?
আর কত? আর কত? আর কত? প্রিয় ফিলিস্তিন!
ফিলিস্তিন! একদা তোমার বুকে স্নিগ্ধ মুগ্ধ শান্তির পরশ ছিল!
নিঃশ্বাস নেয়ার তোমার গায়ে শান্ত, সুশীতল সমীরণ ছিল!
তোমার প্রশান্ত, প্রাণবন্ত পথ প্রান্তর ছিল।
সবুজের সমারোহপূর্ণ বাগ বাগিচা ছিল।
কিশোর কিশোরীদের মিষ্টি চপলতায়
তোমার আঙিনাগুলো আনন্দে মো মো করতো।
ঘুম পাড়ানি গানে আরব মাতা নিজ নিজ শিশুদের নিশ্চিন্তে শুইয়ে দিতেন।
তোমার বুকজুড়ে আরব দুহিতার নির্বিঘ্ন অবাধ চলাফেরায় তুমি গর্ববোধ করতে।
তোমার সেই দিনগুলো আজ কোথায় হারিয়ে গেল?
সাঁঝের বেলা তোমার কোলে ফিরে আসা পাখিদের
নিশ্চিন্তে দু'দন্ড ঘুমানোর জন্য পাখিদের কোনো ক্লেশ ছিল না।
কষ্ট ছিল না।
যন্ত্রনা ছিল না।
শব্দের ঝনঝনানি ছিল না।
বোমা বারুদের বিভৎসতা ছিল না।
ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে তোমার মাটিগুলোর পুড়ে যাওয়ার ভয় ছিল না,
তোমার মসজিদে গুলির তান্ডব ছিল না,
তোমার বাজারে, তোমার লোকালয়ে বিমানের হামলা ছিল না,
বোমার আঘাতে তোমার গাছগাছালির ছাই ভস্ম হওয়ার শঙ্কা ছিল না।
তোমার ইমারতগুলোর ধ্বসে যাওয়ার ইতিহাস ছিল না।
তোমার পানিগুলোর রক্ত বর্ণ হওয়ার নজির ছিল না।
তোমার আকাশ-বাতাস-ইথারজুড়ে কান্নার শব্দ ছিল না।
ফিলিস্তিন!
তোমাকে ক্ষত বিক্ষত করার হিংস্রতা প্রত্যক্ষ করেও আমরা যারা নিশ্চুপ,
তোমার কান্নাভেজা রক্তাক্ত অবয়ব দেখেও আমরা যারা নিশ্চিন্ত, নির্ভার এবং পুলকিত,
তোমার খুবলে খাওয়া পোড়া মাটি ও মানুষ দেখে,
তোমার শিশুদের সার সার মৃত লাশ দেখে,
তোমার মায়েদের ইজ্জতহানি দেখে,
তোমার স্তন্যদায়িনী মাতৃ জননীদের কোলের সন্তানদের
হত্যা করার বিভৎস উল্লাস দেখে,
আমরা যারা দাঁত কেলিয়ে হাসি-
তোমার পাহাড়ে,
তোমার খামারে,
তোমার নগরে,
তোমার বাজারে,
তোমার অস্তিত্বের প্রতিটি কনায় কনায়,
প্রতি ইঞ্চি মাটির কোনায় কোনায় সেই আমাদের জন্য
ঘৃণার উদগীড়ন ঘটাও,
আমাদের প্রতি ছিটিয়ে দাও তোমার ছুঁড়ে ফেলা প্রতিবারের সবগুলো থুথু,
তোমার ভেতরে তুমি জেগে ওঠো আরেকবার!
তুমি মরতে মরতে জাগো!
মরার মত মরো!
তুমি শেষ শয়ানে যাওয়ার আগে-
জানোয়ারের হিংস্র থাবা থেকে তোমার শেষ শিশুটিকে রক্ষা করার জন্য
শেষবারের মত তুমি আরেকটিবার কোমর বেঁধে নামো
ফিলিস্তিন, তুমি ধরে নাও, তুমি তো মরেই গেছ,
মৃত্যু যখন তোমার অবধারিত,
কাপুরুষের মউত তোমার মানায় না!
হে বীর প্রসূতি ফিলিস্তিন!
মরার আগে আগে তুমি আরেকটিবার ভাবো,
আবারও স্মরণ করো,
আরেকবার চিন্তা করো-
বীরেরা, মৃত্যুঞ্জয়ীরা, দেশপ্রেমিকরা কেমন করে মরে থাকে!
কিভাবে তারা মরেও চির অমর হয়ে থেকে যায় ইতিহাসের পাতায় পাতায়!
প্রিয় ফিলিস্তিন! আরেকবার তুমি জাগো!
তোমার শরীরকে খুবলে খাওয়া হায়েনাদের রুখে দিয়ে
দ্রোহের বারুদে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করো,
মোড়ল রাষ্ট্র,
উন্নত বিশ্ব আর তথাকথিত মুসলিম বিশ্বসহ আমাদের মত
অন্যায়ের প্রতিবাদহীন
নিরব দর্শকদের,
বিশ্বাসঘাতকদের,
মানবতাবিসর্জনকারী অনুভূতিহীন
পাষন্ড হৃদয়ের আধুনিক সভ্য দাবিদার
রোবট মানবদের জন্য শোকের আয়োজন করো,
ফিলিস্তিন!
তুমি তো মরার পথেরই যাত্রী!
মরতে মরতে তুমি আমাদের জন্য
এই আয়েঅজনটুকু অন্ততঃ করে যাও!
দোহাই তোমার! ফিলিস্তিন!
এটুকু কৃতজ্ঞতা আমাদের প্রতি প্রকাশ করা থেকে
তুমি তোমার মৃত্যুর প্রাক্কালে বিরত থেকো না!
আর কিছু না হলেও 'আমাদেরকে প্রতিবাদহীন তথাকথিত ভদ্র' মনে করে
তোমার জীবনের শেষ দায়িত্ব হিসেবে
এই কাজটুকু অন্ততঃ করে যাও!
করে যাও!
আর তা যদি না পারো-
তাহলে অন্ততঃ শেষবারের মত আরেকটিবার তুমি-
তুমি দ্রোহের আগুন জ্বালো,
বিসুভিয়াসের লাভার মত অগ্নুৎপাত করো,
অগ্নুদগীড়ন করো,
লেলিহান শিখায় ছেয়ে ফেলো আকাশ বাতাস,
তোমার পুড়ে যাওয়া প্রতিটি শিশুর ছাই অঙ্গার
উড়িয়ে দাও আকাশে বাতাসে পাহাড়ে কন্দরে নদীতে বন্দরে,
পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে ছড়িয়ে পড়ুক সেই শিশুরা,
প্রতিটি ঘরে জন্ম নেয়া শিশুদের নাকে এসে পৌঁছে
তোমার শিশুদের পুড়ে যাওয়ার অসহনীয় উৎকট গন্ধ,
যেন বিশ্বের প্রতিটি শিশু বেড়ে ওঠে তোমার শিশুদের
নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার দুর্বিসহ চিত্র দেখে দেখে!
যেন প্রতিবাদের বারুদে আগুন জ্বেলে তারাও
এক দিন স্মরণ করতে পারে তোমার লাশ হয়ে যাওয়া এসব শিশুদের!
ফিলিস্তিন!
তুমি হুংকার ছাড়ো,
গর্জনে গর্জনে তব্দ-স্তব্ধ করে দাও রক্তপিপাসু হায়েনাদের,
কেড়ে নাও দুর্বৃত্তের শ্রবনেন্দ্রিয়ের সবটুকু শক্তি,
নাস্তানাবুদ করে দাও উম্মাদদের অবৈধ ঝুপড়িগুলো,
ভোঁতা হয়ে যাক ওদের অবৈধ অস্ত্রগুলো,
এটা করো অবৈধভাবে জন্ম নেয়া নব্য খুনি দখলদারদের
তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফিলিস্তিনের পবিত্র মাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আগেই!
ছবিটিতে দেখানো হয়েছে পর্যায়ক্রমে যেভাবে প্রায় পুরো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ধাপে ধাপে দখলে নিয়েছে ইসরায়েল। অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত
এই বিষয়ক কিছু সংবাদ দেখতে পারেন নিচের লিঙ্কগুলো থেকে-
ইসরায়েলের বোমায় ফিলিস্তিনের ৩১ স্কুল ধ্বংসস্তূপ
গাজায় রাতভর হামলা
গাজায় রাতভর হামলা-বিস্ফোরণ, নিহত ৪২
ইসরায়েলের হামলার ছবি, বাংলা ট্রিবিউন থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৩৫