somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

পরিবেশ সংরক্ষনে ইসলামে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের গুরুত্বঃ

০৪ ঠা জুন, ২০২১ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

পরিবেশ সংরক্ষনে ইসলামে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের গুরুত্বঃ

সুন্দর নয়নাভিরাম এই বসুন্ধরা, ঘাসফুল কীট পতঙ্গ পাখিদের অবাধ বিচরণ, মেঘেদের শুণ্যে লুটোপুটি খাওয়ার অবাক করা রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি খেলা, নদী নালা পাহাড় ঝর্ণা বিধৌত দিগন্ত বিস্তৃত সহ্যাতুল্য সবুজের সমারোহ আর ততোধিক সুন্দর মনোমুগ্ধকর গাছপালা তরুলতাসুশোভিত প্রকৃতি - এ সবই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দান। এগুলো প্রকৃতির অংশ। এসবের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এই প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা আমাদের দায়িত্ব। প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের অন্যতম নিয়ামক উদ্ভিদ ও গাছপালা। গাছগাছালি, বৃক্ষতরু ও লতাগুল্ম থেকেই আসে আমাদের জীবনধারণ ও জীবন রক্ষার সব উপকরণ। প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরামকে গাছ লাগাতে ও বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ব্যক্তিগত ও সামাজিক বনায়নও করেছেন। নিজে গাছ লাগিয়ে এবং অন্যদের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করেই ক্ষান্ত হননি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বরং তিনি বৃক্ষরোপণকে সদকায়ে জারিয়া তথা স্থায়ী সাওয়াবের উৎস এবং উপকরণের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ, পাখি বা পশু যখন তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন তা তার রোপণকারীর পক্ষে একটি সদকা বা দান হিসেবে পরিগণিত হয়।’ -বুখারি ও মুসলিম

বন ও বন্য পশুপাখি আল্লাহ পাকের দান ও প্রাকৃতিক নেয়ামত। নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগুলোর সংরক্ষণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মক্কাতুল মুকাররমাহ ও মদিনাতুল মুনাওয়ারার বিশেষ এলাকাকে 'হারাম' অর্থাৎ, সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেন। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, মক্কাতুল মুকাররমাহ ও মদিনাতুল মুনাওয়ারার উক্ত বিশেষ এলাকায় গাছপালা কাটা কিংবা সেসব স্থানে পশুপাখি শিকার করা অদ্যাবদি নিষিদ্ধ।

গাছপালা না থাকলে এ জগতে মানুষের বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়তোঃ

গাছপালা, তৃণলতা, উদ্ভিদ জগতের প্রয়োজনীয়তা আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষনায় বিভিন্নভাবে প্রমানিত হয়েছে। গাছপালা এবং বৃক্ষরাজী না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস করার উপায় থাকতো না। বৃক্ষরাজী, উদ্ভিদ, তরুলতা পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসী প্রাণিকুলের টিকে থাকার জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা কুরআনে হাকিমে বারংবার এই বিষয়ক আলোচনার উল্লেখ থেকে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা সম্ভব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,

وَهُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِن طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَجَنَّاتٍ مِّنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ۗ انظُرُوا إِلَىٰ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكُمْ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

‘তিনি আসমান থেকে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর আমি তদ্দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদের অঙ্কুর উদ্‌গম করি, অনন্তর তা থেকে সবুজ পত্র উদ্‌গত করি, তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খর্জূরবৃক্ষে মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি বের করি আর আঙুর, জলপাই-জইতুন ও ডালিমের বাগান সৃষ্টি করি। এগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। লক্ষ করো এর ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং এর পরিপক্বতাপ্রাপ্তির প্রতিও লক্ষ করো। অবশ্যই বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ -সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ৯৯

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً ۖ لَّكُم مِّنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ

‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাকো।’ -সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১০

يُنبِتُ لَكُم بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

তিনি তোমাদের জন্য তা দিয়ে জন্মান শস্য, জইতুন, খেজুরগাছ, আঙুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ -সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১১

وَآيَةٌ لَّهُمُ الْأَرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَاهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ

তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে। -সুরা ইয়া সিন, আয়াত: ৩৩

وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّاتٍ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنَ الْعُيُونِ

আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী। -সুরা ইয়া সিন, আয়াত: ৩৪

لِيَأْكُلُوا مِن ثَمَرِهِ وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ ۖ أَفَلَا يَشْكُرُونَ

যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন? -সুরা ইয়া সিন, আয়াত: ৩৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উদ্ভিদের রয়েছে অসামান্য ভূমিকাঃ

আল্লাহ তাআলা প্রকৃতিকে মানুষের জন্য জীবনধারণের অনুকূল, বাসযোগ্য, সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। গাছপালা ও উদ্ভিদ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অন্যতম প্রভাবক হলো উদ্ভিদ। বৃক্ষের জন্য পানি অপরিহার্য, গাছপালা মাটিতে পানি সংরক্ষণে সাহায্য করে এবং বনবনানী থাকলে সেখানে বৃষ্টিপাত হয়। পানি ও উদ্ভিদ জীবনচক্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاءِ كَيْفَ يَشَاءُ وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ ۖ فَإِذَا أَصَابَ بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ

‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে, অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা পৌঁছান, তখন তারা আনন্দিত হয়।’ -সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪৮

মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আগুনের অন্যতম উৎস বৃক্ষঃ

মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আগুন। আগুনের অন্যতম উৎস বৃক্ষ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ الشَّجَرِ الْأَخْضَرِ نَارًا فَإِذَا أَنتُم مِّنْهُ تُوقِدُونَ

‘যিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে অগ্নি উৎপাদন করে দিয়েছেন, সে মতে তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালিয়ে নিতে পারো।’ -সুরা-৩৬ ইয়াসিন, আয়াত: ৮০

أَفَرَأَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ

‘তোমরা যে অগ্নি প্রজ্বালিত করো, তা লক্ষ করে দেখছ কি?

أَأَنتُمْ أَنشَأْتُمْ شَجَرَتَهَا أَمْ نَحْنُ الْمُنشِئُونَ

তোমরাই কি অগ্নি উৎপাদন বৃক্ষ সৃষ্টি করো, না আমি?

نَحْنُ جَعَلْنَاهَا تَذْكِرَةً وَمَتَاعًا لِّلْمُقْوِينَ

আমি একে করেছি নিদর্শন এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র।’ -সুরা-৫৬ ওয়াকিয়া, আয়াত: ৭১-৭৩

উদ্ভিদ ও বৃক্ষ আমাদের খাদ্যেরও অন্যতম উৎসঃ

উদ্ভিদ ও বৃক্ষ থেকে আমরা খাদ্য পাই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ إِلَىٰ طَعَامِهِ

মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক,

أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبًّا

আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি,

ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا

এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি,

فَأَنبَتْنَا فِيهَا حَبًّا

অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য,

وَعِنَبًا وَقَضْبًا

আঙ্গুর, শাক-সব্জি,

وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا

যয়তুন, খর্জূর,

وَحَدَائِقَ غُلْبًا

ঘন উদ্যান,

وَفَاكِهَةً وَأَبًّا

ফল এবং ঘাস

مَّتَاعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ

তোমাদেরও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপাকারার্থে। -সূরা আল আবাসা, আয়াত ২৪-৩২

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَاءَ إِلَى الْأَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَامُهُمْ وَأَنفُسُهُمْ ۖ أَفَلَا يُبْصِرُونَ

‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদ্‌গত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদিপশু এবং তারা নিজেরা আহার করে। তারা কি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হবে না?’ -সুরা-৩২ সেজদা, আয়াত: ২৭

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করল, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর বিনিময়ে তাকে এই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিফল দান করবেন।’ -মুসনাদে আহমদ

ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়, সকল প্রাণিই তার সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করেঃ

প্রতিটি গাছ আল্লাহর জিকির করে। জিকির করে গাছের প্রতিটি পাতাও। জিকিরের সেই সওয়াব উক্ত গাছ রোপণকারীর আমলনামায় লেখা হয়। বস্তুতঃ আল্লাহর জিকির করে না এমন প্রাণবান কিছুই নেই জগতে। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়, সকল প্রাণিই তার সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করে চলেছে। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَـٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। -সূরা ইসরা, আয়াত ৪৪

মানবসভ্যতায় গাছপালার অবদান অফুরন্তঃ

বনের গাছপালা থেকে আমরা কেবল কাঠ, রাবার, ওষুধ ও ফলমূলই পাই না এগুলো থেকে বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি দ্রব্য ও তেলও পাওয়া যায়। গাছের পরিশুদ্ধ তেল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের সঙ্গে আল্লাহ্‌পাক তার নূরের ইঙ্গিত দিয়েছে। মানুষ চেষ্টা-গবেষণা করলে গাছ থেকেও যে উৎকৃষ্ট ধরনের তেল আহরণ করতে পারে এটা নিঃসন্দেহে সে তথ্যের-ই উপমা বহন করে। আল্লাহ্‌ বলেন,

وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِن طُورِ سَيْنَاءَ تَنبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْآكِلِينَ

এবং আমি সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন। -সূরা মমিনূনঃ ২০

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে গাছের নামে শপথ করেছেন এবং তদানুসারে সুরাটির নামকরণও করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ বলেন,

وَطُورِ سِينِينَ

ত্বিন (এক জাতীয় বৃক্ষ) ও জায়তুন (জলপাই জাতীয় এক প্রকার ফল)-এর শপথ! -সূরা আত ত্বিনঃ১

অতএব গাছপালা, বৃক্ষলতা আল্লাহ্‌ সুমহান কুদরতের অপরূপ নিদর্শন। এর মাঝেই তিনি মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর খাবার প্রস্তুত করে রেখেছেন এবং মানুষকে পরিশ্রম করে সেগুলো সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরশাদ হয়েছে;

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অতঃপর সালাত আদায় শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং তাতে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের সন্ধান কর। -সূরা আল জুমআঃ ১০

অপরিকল্পিত বৃক্ষ নিধন আর নয়ঃ

আমাদের জীবিকার প্রধান উৎস এই গাছপালা ও বনভূমিকে আমরা কারণে-অকারণে অপরিকল্পিতভাবে প্রতিদিন কেটে ফেলে দিচ্ছি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজার হেক্টর বনভূমি এলাকা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলাকা বনভূমি থাকা দরকার। অথচ বাংলাদেশে বনভুমির পরিমাণ মাত্র ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে বৃক্ষাচ্ছাদিত মাত্র ১০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞের মতে, এটা আরও কম, অর্থাৎ, মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে একসময় প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বনভূমি ছিল। দিন দিন অপরিকল্পিতভাবে বনভূমি উজাড় হওয়ায় বর্তমানে দেশে জ্বালানি কাঠের ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৫০ লাখ টনে। দেশে উৎপাদিত খাদ্যের পুষ্টিমানেও দেখা দিয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। তাই আমাদের এখন প্রয়োজন পরিকল্পিত বনায়ন। প্রয়োজন বৃক্ষরোপণ। বনায়নকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা ছাড়া বিকল্প নেই।

চুরি গেলে সেটাও সদকাহ হিসেবে গণ্য হবেঃ

হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এবং তা থেকে যা চুরি যায়, তাও তোমার পক্ষে একটি সদকাহ্‌ হিসাবে পরিগণিত হয়। -মুসলিম শরীফ

বৃক্ষরোপণ ও এর সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝতেন তারাঃ

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রাঃ)-এর একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একদা হযরত আবু দারদা (রাঃ) দামেস্কে একটি বৃক্ষরোপণ করেছিলেন। এমন একটি লোক তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। সে হযরত আবু দারদা (রাঃ)-কে অত্যন্ত মনোনিবেশ সহকারে বৃক্ষরোপণ করতে দেখে একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলঃ আপনি রাসুলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর একজন প্রিয় সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও এ কাজটি করছেন? হযরত আবু দারদা (রাঃ) উত্তরে বললেন, আপনি এমনটি বলবেন না। আমি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষ চারা লাগায়, অতঃপর তা থেকে কোন ফল মানুষ ও পাখি খাদ্য গ্রহণ করে তখন তার জন্য একটি সদকা হিসাবে লেখা হয়। মুসলিম সেনাবাহিনী যুদ্ধে রওনা হওয়ার সময় রাসুলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর অনুসারী পরবর্তী মহান খলিফাগণ যে কোনো অভিযানে প্রেরনের পূর্বে কঠোরভাবে সৈন্যদের নির্দেশ দিতেন তারা যেন বিজিতদের কোন গাছপালা বা শস্যক্ষেত্র ধ্বংস না করে। বৃক্ষরোপণ ও এর সংরক্ষণের প্রতি তারা কতটুকু সজাগ এবং সচেতন ছিলেন এটি তারই প্রমান বহন করে।

আসুন, গড়ে তুলি বাসোপযোগী সুন্দর একটি পৃথিবীঃ

সঙ্গত কারণে আমাদের একান্তভাবে উচিত অধিক পরিমানে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন করার প্রতি মনোনিবেশ করা। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার জন্য বৃক্ষ রোপন এবং বনায়নের বিকল্প নেই। অধিক পরিমানে গাছ লাগাতে হবে, গাছের পরিচর্যা করতে হবে এবং অকারণে বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে একটি পরিপক্ব গাছ কাটার আগে তিনটি বা আরও অধিক চারা গাছ লাগাতে হবে। আসুন, সবাই মিলে গড়ে তুলি সবুজ, শ্যামল এবং নিঃশ্বাস নেয়ার মত স্নিগ্ধ প্রাণবান বাসোপযোগী একটি পৃথিবী।

ছবিঃ অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×