somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের সংখ্যা এবং কুরআন হাদিসে বর্ণিত সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ মর্যাদা...

০৬ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের সংখ্যা এবং কুরআন হাদিসে বর্ণিত সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ মর্যাদা...

সাহাবায়ে কেরাম এর পরিচয়ঃ

যাঁরা ঈমানের সঙ্গে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের সাহাবি বলা হয়। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আল-ইসাবা ফী তাময়ীযিস সাহাবা ’গ্রন্থে সাহাবীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘সাহাবী সেই ব্যাক্তি যিনি প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমানসহকারে তাঁর সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপর ইন্তিকাল করেছেন। সাহাবিরা যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁরা সত্য ও ন্যায়ের মাপকাঠি। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি তাঁদের একনিষ্ঠ ভালোবাসা, ইসলামের জন্য ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ তাঁদের চির স্মরণীয় করে রেখেছে ইতিহাসের পাতায়। তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য তারকাতুল্য, অনুসরণীয় এবং অনুকরনীয়।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের প্রকৃত সংখ্যা...

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবির কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আরবিতে বলা হয় 'আশারায়ে মুবাশশারা'। 'আশারা' মানে, 'দশ', আর 'মুবাশশারা' অর্থ, 'সুসংবাদপ্রাপ্ত'। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা জানি যে, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য্যধন্য সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা লক্ষাধিক কিংবা তারও অধিক। এত সংখ্যক সাহাবায়ে কেরামের ভেতরে মাত্র ১০ জন সাহাবিকেই কি তিনি জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন? বাকিদের কেন দিলেন না? অথবা, বাদবাকি সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও তো অনেক সাহাবিই প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অতি প্রিয়পাত্র ছিলেন। একান্ত কাছের জন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য প্রাণোৎসর্গকারী এসব সাহাবায়ে কেরামের জান্নাতপ্রাপ্তির বিষয়টি কি তাহলে অনিশ্চিত ছিল? নাউযুবিল্লাহ।

বস্তুতঃ এটা নিছকই কারো কারো ধারণা যে, সকল সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কেবলমাত্র ১০ জন সাহাবি জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছেন, যাদেরকে আশারায়ে মুবাশশারা বলা হয়। প্রকৃত কথা হচ্ছে, যে ১০ জন সাহাবিকে 'আশারায়ে মুবাশশারা' এর অন্তর্ভূক্ত গণ্য করা হয়ে থাকে, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা নিঃসন্দেহে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তির যোগ্য। কিন্তু এর সাথে সাথে যে কথাটি বুঝা প্রয়োজন তা হচ্ছে, আশারায়ে মুবাশশারা খ্যাত উক্ত ১০ জন ব্যতিত বাকি অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামগণের প্রত্যেকেও এই সম্মান এবং মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য এবং উপযুক্ত। অতএব, এ ধারণা সঠিক নয় যে, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র ১০ জন সাহাবিকেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। বরং এই মহান ১০ সাহাবি ছাড়া আরো বহু সাহাবি প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে বলা যেতে পারে, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাতি হাসান-হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা জান্নাতে যুবকদের সর্দার হবেন এবং তাঁদের মা ফাতেমা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা জান্নাতে নারীদের সর্দার হবেন। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, আজ রাতে একজন ফেরেশতা অবতরণ করেছে, যে আর কখনো আসে নাই। সে আমাকে সুসংবাদ শুনিয়েছে, ‘ফাতেমা হবে জান্নাতি নারীদের সর্দার আর হাসান-হুসাইন হবে জান্নাতের যুবকদের সর্দার।’ -সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৮১

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, একদিন জিবরিল আলাইহিস সালাম প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ওই যে খাদিজা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা একটি পাত্রে তরকারি অথবা খাবার বা পানি নিয়ে আপনার কাছে আসছেন। যখন তিনি আপনার কাছে আসবেন আপনি তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতে একটি মুক্তা-প্রাসাদের সুসংবাদ দেবেন; যেখানে না আছে কোনো শোরগোল, না আছে কষ্ট-ক্লান্তি।’ -সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৮২০

বদর যুদ্ধের শহীদ হারেসা ইবনে সুরাকা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর ব্যাপারে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল ফিরদাউসের সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আরে সে তো জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে।’ -সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৮২

প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি জান্নাতে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি।’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৫৮

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ইহুদি পণ্ডিত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর একবার প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ব্যাপারে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সে জান্নাতে।’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৮৩

কোনো কোনো গবেষকের অনুসন্ধানমতে এ রকম সহিহ হাদিসেই ২৮ জন সাহাবির কথা পাওয়া যায়, যাঁদের ব্যাপারে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। এ ছাড়া আরো ২০ জন সাহাবির নাম পাওয়া যায়; কিন্তু সেগুলোর সূত্র নির্ভরযোগ্য নয়। -মান বুশশিরা বিল জান্নাহ মিন গাইরিল আশারাহ, পৃষ্ঠা ১০৫

তবে আশারায়ে মুবাশশারা নামে যে ১০ জন সাহাবি প্রসিদ্ধ প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিশে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং তাঁরা প্রথম সারির সাহাবি, ফলে তাঁদের বিষয়টি খুব বেশি প্রসিদ্ধ হয়েছে। ফলে কিছু মানুষের মাঝে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল এই ১০ জন সাহাবিকেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

আল কুরআনের বর্ণনায় সাহাবায়ে কেরাম এর মর্যাদাঃ

সাহাবায়ে কেরামের সুউচ্চ মর্যাদা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এমনভাবে আলোকপাত করা হয়েছে যাতে এ কথা দিবালোকের মত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে যে, তারা ছিলেন উত্তম আদর্শের ধারক ও বাহক এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী। কিছু আয়াত উল্লেখ করছি-

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি:

মুহাম্মদ ইবনে কাব আল কুরাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সবাই জান্নাতবাসী হবেন- যদিও দুনিয়াতে তাঁদের কারো দ্বারা ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকে। লোকটি জিজ্ঞেস করল, এ কথা আপনি কোথা থেকে বলছেন? তখন তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন,

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথমে ঈমান এনেছে এবং যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যানরাজি তৈরি করে রেখেছেন, যার তলদেশে নহর বহমান। তাতে সর্বদা থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।’ -সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০০; মাআরিফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৯১

আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট :

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা নিজেকে রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবির জন্য যথেষ্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

‘হে নবী, আপনি এবং যেসব মুসলমান আপনার সঙ্গে রয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট।’ -সুরা আনফাল, আয়াত : ৬৪

পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি :

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সাহাবিদের পরস্পরের অন্তরে প্রীতির সঞ্চার করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,

وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ۚ لَوْ أَنفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَّا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

‘তিনি তাঁদের হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। তুমি যদি পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদও ব্যয় করতে, তাহলে তাঁদের হৃদয়ে এই সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতে না। কিন্তু তিনি তাঁদের অন্তরগুলো প্রতি সঞ্চার করেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।’ -সুরা আনফাল, আয়াত : ৬৩

মর্যাদায় তারতম্য :

কুরআনুল কারিমে সাহাবিদের দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এক. যাঁরা মক্কা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, দুই. যারা এর পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। প্রথম শ্রেণির সাহাবিদের মর্যাদা তুলনামূলকভাবে বেশি। কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে,

لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ ۚ أُولَـٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا

‘তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের আগে ব্যয় করেছে এবং জিহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বেশি তাদের অপেক্ষা, যারা (মক্কা বিজয়ের) পরে ব্যয় করেছে এবং জিহাদ করেছে।’ -সুরা হাদিদ, আয়াত : ১০

সাহাবিদের প্রশংসা :

সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসায় কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে,

مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ا

‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদের রুকু ও সিজদারত দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সিজদার চিহ্ন।’ -সুরা ফাতাহ, আয়াত : ২৯

পরস্পর মিত্রতার বন্ধন সৃষ্টিকরণঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সাহাবিদের পরস্পরের মধ্যে মিত্রতার বন্ধন সৃষ্টি করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে,

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

‘আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধরো; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কোরো, যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়েছ।’ -সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩

কল্যাণের নিশ্চয়তা :

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা চার শর্তে সাহাবিদের সফলতার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এক. প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি ঈমান আনা, দুই. তাঁর শ্রদ্ধা ও সম্মান রাখা, তিন. তাঁকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা, চার. কোরআন অনুযায়ী চলা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنزِلَ مَعَهُ ۙ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

‘সুতরাং যেসব মানুষ তাঁর (নবীর) ওপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে জ্যোতির অনুসরণ করেছে যা তার সঙ্গে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধু তারাই নিজেদের সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।’ -সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭

হাদিসের আলোকে সাহাবিদের মর্যাদাঃ

সাহাবিদের মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আলোচনার কলেবর বৃদ্ধি না করার সুবিধা বিবেচনায় তা হতে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করছি। আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ‘তোমরা আমার সাহাবীগণকে গাল-মন্দ করো না। কেননা, তারা এমন শক্তিশালী ঈমান ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী যে, তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ (৩ ছটাক প্রায়) কিংবা অর্ধমুদ যব খরচ এর সমান সাওয়াবে পৌঁছুতে পারেনা। -সহিহ বুখারি : হাদিস নং ৩৩৯৭

হযরত জাবির রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নামের আগুন সে মুসলমানকে স্পর্র্শ করতে পারে না, যে আমাকে দেখেছে। অর্থাৎ আমার সাহাবীরা কিংবা আমাকে যারা দেখেছে তাঁদেরকে দেখেছে। অর্থাৎ তাবেয়ীরা।’ -তিরমিজি : হাদিস নং ৩৮০১

আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে আমার সাহাবীদেরকে কষ্ট দিল সে যেন আমাকে কষ্ট দিল; যে আমাকে কষ্ট দিল সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল। যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’ -মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং ১৯৬৪১

হযরত জাবির রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জের দিন আরাফাতের ময়দানে রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাসওয়া উটের উপর আরোহী অবস্থায় উপদেশ দিতে শুনেছি। তিনি বলেন, হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের মাঝে এমন দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি যার অনুসরণ ও অনুকরণ করলে তোমরা অবশ্যই পথহারা হবে না। তা হলো, আল্লাহ তাআ'লার কিতাব ও আহলে বাইত রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম। -তিরমিজী

শেষের কথাঃ

সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমগণ ছিলেন জগতের শ্রেষ্ঠতম মহামানব প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের অবিকল নমুনা। তাঁর সংসর্গ, সাহচর্য্য এবং ভালোবাসাধন্য। গোটা মানবজাতির জন্য হেদায়েতের অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তাদের দেখানো পথে, তাদের শেখানো মতে, তাদের ধারণকৃত পাহাড়সম বিশ্বাসের অতলান্তিকতায়, তাদের আচরিত কর্মের অবিকল সাধনায় নির্লিপ্ত থেকে আমাদেরও প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয়ভাজন হওয়ার তাওফিক দান করুন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সাহাবিদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের তাওফিক আমাদেরকে দান করুন। তাদেরকে অধিষ্ঠিত করুন জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×