somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

ইসলামে নবজাতকের চুল কর্তন এবং আকীকা করার বিধান

১৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

ইসলামে নবজাতকের চুল কর্তন এবং আকীকা করার বিধান

প্রাককথনঃ

আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার জন্য, যিনি আমাদের জন্য দ্বীন ইসলামকে সহজ করেছেন এবং জীবন চলার গাইডলাইন হিসেবে ইহাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। অসংখ্য অগণিত দরূদ এবং সালাম প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরে। তাঁর পবিত্র বংশধর, পরিবার-পরিজন, ও সম্মানিত সঙ্গী-সাথী সাহাবায়ে কেরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর সকল অনুসারী-অনুগামীদের প্রতি। শান্তির অবিরাম ধারা নিরন্তর বর্ষিত হোক তাদের সকলের উপর।

ইসলাম একটি শান্তিময় জীবন বিধান। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইনতিকালের পূর্বেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দ্বীনকে বিশ্ববাসীর জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। একজন মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম সুন্দর এবং শ্রেষ্ঠতম যত বিধি-বিধান প্রয়োজন, সেগুলোর সবই প্রদান করেছে। একজন নবজাতক, একটি সদ্য ভূমিষ্ট শিশু পৃথিবীর আলো বাতাসের সংস্পর্শে আসার পরে সন্তানের পিতা-মাতা বা তার অভিভাবকের উপর আকীকার বিধান ইসলামের সৌন্দর্যময় বিধানসমূহের মধ্য হতে অন্যতম একটি বিধান। আমরা অত্র নিবন্ধে ইসলামে নবজাতকের চুল কর্তন এবং আকীকা করার বিধান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করার প্রয়াস পাব, ইনশা-আল্লাহ।

ইসলামে নবজাতকের চুল কর্তনের বিধানঃ

সন্তান জন্মগ্রহণের সপ্তম দিনে মাথা মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করা সুন্নাত। হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা এর জন্মের সপ্তম দিনে তাদের চুল কাটার নির্দেশ দেন এবং চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করেন।

ছেলে কিংবা মেয়ে যা-ই হোক জন্মের সপ্তম দিনে চুল কাটা সুন্নাত। সাহাবি সামুরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। অতএব, সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, তার চুল কাটো ও তার নাম রাখ। -আহমদ, তিরমিজি-সহিহ সূত্রে

নবজাতকের চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করা সুন্নত

আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকীকা দিলেন এবং বললেন, ‘হে ফাতিমা, এর মাথার চুল ফেলে দাও এবং তার চুলের ওজনে রুপা সদকা করো। তিনি বলেন, অতঃপর ফাতিমা তা পরিমাপ করলেন, এর ওজন হলো এক দিরহাম বা এক দিরহামের কিছু পরিমাণ।’ -তিরমিযী : ১৬০২; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৫৮৯

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযা‘ থেকে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, নাফে‘কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাযা‘ কী? তিনি বললেন, বাচ্চার মাথার কিছু অংশ মুণ্ডানো আর কিছু অমুণ্ডিত রাখা’। -মুসলিম : ৩৯৫৯; বুখারী : ৫৪৬৫; ইবন মাজা : ৩৬২৭; আহমদ : ৪৯২৮

উদ্দেশ্য, মুন্ডন করতে হবে পুরো মাথাজুড়ে। কারণ, মাথার কিছু অংশ মুন্ডন করা আর কিছু না করা ইসলামী ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী, যার মাধ্যমে একজন মুসলিম অন্য জাতি-গোষ্ঠী থেকে এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী হয়। এই কাযা‘র মাধ্যমে মূলতঃ অন্যান্য জাতির কাজ ও আদর্শের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। আর তাদের সাদৃশ্য ধারণ জায়িয নয়।

হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ থেকে বর্ণিত, মুয়াবিয়া বিন সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যে বছর হজ করেন, তিনি মিম্বরে বসলেন, আমার ভৃত্যের হাতে থাকা চুল থেকে একগুচ্ছ চুল নিলেন এবং বললেন, হে মদীনাবাসী, কোথায় তোমাদের আলিমগণ? (তিনি কি তোমাদের বারণ করেন নি?) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন করা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘বনী ইসরাঈল ধ্বংস হয়েছিল যখন তাদের নারীরা এটাকে (কাযা) ধারণ করেছিল।’ -মুসলিম : ৫৭০০; বুখারী : ৩৪৬৮; আবূ দাউদ : ৪১৬৯

(এ থেকে বুঝা যায়, মাথার চুল কিছু মুণ্ডানো আর কিছু রেখে দেওয়া তাদের শরীয়তে হারাম ছিল।

ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুকে দেখলেন তার (মাথার) কিছু চুল নেড়ে করা হয়েছে আর কিছু অবশিষ্ট রাখা হয়েছে। তাকে দেখে তিনি এ থেকে বারণ করলেন এবং বললেন, তোমরা (মাথা) পুরোটাই মুণ্ডাও অথবা পুরোটাই অমুণ্ডিত রাখো।’ -মুসনাদ আহমদ : ৫৬১৫; আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ১৯৫৬৪১

ইসলামের বিধান কত সুন্দর! জন্মের পর সন্তানের মাথার চুল ফেলে দেয়াটা বাচ্চার জন্য অনেক ধরনের রোগ থেকে হেফাজত করে থাকে।

আকীকার অর্থঃ

ইসলামের পরিভাষায় সন্তান জন্ম গ্রহণ করার পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার শুকরিয়া আদায় ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে পশু জবাই করা হয়, তাকে আকীকা বলা হয়।

আকীকার হুকুমঃ

অধিকাংশ আলেমের মতে সন্তানের আকীকা করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

(من أحب منكم أن ينسك عن ولده فليفعل)

“যে ব্যক্তি তার সন্তানের আকীকা করতে চায়, সে যেন উহা পালন করে”। -আহমাদ ও আবু দাউদ

প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ

(كل غلام رهينة بعقيقته)

প্রতিটি সন্তানই আকীকার বিনিময়ে আটক থাকে”। -আহমাদ, তিরমিজী ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থ

আকীকার বিনিময়ে সন্তান আটক থাকার ব্যাপারে আলেমগণের কয়েক ধরণের বক্তব্য রয়েছে। এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বিন হান্বালের কথাটি সবচেয়ে সুন্দর ও বিশুদ্ধ। তিনি বলেন, কথাটি শাফাআতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ, আকীকা দেওয়া হয়নি, এমন শিশু সন্তান যদি মৃত্যুবরণ করে, কিয়ামতের দিনে সে শিশুর শাফাআত থেকে পিতা-মাতা বঞ্চিত হবে। আর হাদীসে একথা প্রমাণিত আছে যে, মুসলমানদের যে সমস্ত শিশু বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করবে, তারা তাদের মুসলিম পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, সন্তানের আকীকা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। ওয়াজিব বা ফরজ নয়।

আকীকা করার সময়ঃ

আকীকার জন্য উত্তম সময় হলো সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিবস। সপ্তম দিনে আকীকা দিতে না পারলে ১৪ তম দিনে, তা করতে না পারলে ২১ তম দিনে আকীকা প্রদান করবে। সপ্তম দিনে আকীকা করার সাথে সাথে সন্তানের সুন্দর নাম রাখা, মাথার চুল কামানো এবং চুল এর সমপরিমাণ ওজনের রৌপ্য ছাদকাহ করাও মুস্তাহাব। -তিরমিজী

বিনা কারণে আকীকা দেওয়াতে বিলম্ব করা সুন্নাতের বিরোধিতা করার অন্তর্ভুক্ত। দারিদ্র বা অন্য কোন কারণে যদি উল্লেখিত দিনগুলোতে আকীকা করতে অক্ষম হয়, তবে সন্তান ছোট থাকাবস্থায় যখনই অভাব দূর হবে, তখনই আকীকা করতে হবে। অভাবের কারণে যদি কোন লোক তার শিশু ছেলে-মেয়েদের আকীকা করতে না পারে, তাহলে সন্তান বড় হওয়ার পর যদি তার আর্থিক অবস্থা ভাল হয়, তখন আকীকা করলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে এবং পিতা- মাতা সাওয়াব পাবে, ইনশাআল্লাহ। এমনকি কারও পিতা-মাতা যদি আকীকা না করে, সে ব্যক্তি বড় হয়ে নিজের আকীকা নিজে করলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। আনাছ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত,

(أن النبي صلى الله عليه وسلم عق نفسه بعد البعثة)

“প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত পাওয়ার পর নিজের আকীকা নিজে করেছেন”। -বায়হাকী

এ হাদীস থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর নিজের আকীকা নিজে দেওয়া বৈধ হওয়ার উপর সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায়।

কোন ধরণের পশু দিয়ে আকীকা করতে হবে? সংখ্যা কয়টি?

আকীকার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, ছেলে সন্তান হলে দু‘টি দুম্বা বা ছাগল আর মেয়ে সন্তান হলে একটি দুম্বা বা ছাগল দিয়ে আকীকা করা। কেননা প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(عن الغلام شاتان مكافئتان وعن الجارية شاة)

“ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দু‘টি সমবয়সের ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে হবে। -আহমাদ ও তিরমিজী

যে ধরণের ও বয়সের ছাগল বা দুম্বা কুরবানীর ক্ষেত্রে বৈধ, তা দিয়েই আকীকা করতে হবে। অর্থাৎ, কুরবানীর পশু যে সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হওয়া শর্ত, আকীকার ছাগল-খাসী বা দুম্বাও সে সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে যদি ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দু‘টি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে না পারে, তবে একটি দিয়ে আকীকা দিলেও চলবে। কেননা প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা দিয়ে আকীকা করার কথাও প্রমাণিত আছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত,

(أن رسول الله صلى الله عليه وسلم عق عن الحسن والحسين كبشا كبشا)

প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান এবং হুসাইসের পক্ষ হতে একটি করে দুম্বা আকীকা করেছেন। -আবু দাউদ

তবে সামর্থবান ব্যক্তির পক্ষে একটি ছাগল দিয়ে ছেলে সন্তানের আকীকা করা উচিৎ নয়। মোট কথা, ছেলে সন্তানের আকীকার জন্য দু‘টি ছাগল বা দুম্বা হওয়া জরুরী নয়; বরং মুস্তাহাব।

আকীকার পশুর গোশতের বিধানঃ

আকীকার গোশত কুরবানীর গোশতের মতই। তা নিজে খাবে, আত্মীয় স্বজনকে খাওয়াবে এবং গরীব-মিসকীনকে ছাদকা করবে। তবে যেমনভাবে কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ ছাদকা করা এবং এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদীয়া হিসাবে দান করা জরুরী নয়, ঠিক তেমনিভাবে আকীকার গোশতও উক্ত নিয়মে তিন ভাগ করা জরুরী নয়। আকীকার গোশত যদি সম্পূর্ণটাই রান্না করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যান্য মুসলমানদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায় তাতেও যথেষ্ট হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যে, কোনক্রমেই যাতে হাদিয়া ও উপহারের আশায় শুধুমাত্র ধনী ও সম্মানী লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে দরিদ্র ও অভাবী ব্যক্তিদেরকে প্রত্যাখ্যান না করা হয়, যা আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। তবে সন্তানের জন্ম তারিখে কিছু মানুষ যে অনুষ্ঠান করে থাকে বা প্রতি বছর সন্তানের জন্ম দিবস পালন করে থাকে এবং এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান করে থাকে, তা সম্পূর্ণ বিদআত। এ সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তে কোন দলীল নেই। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

(من أحدث فى أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد)

যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মাঝে এমন বিষয় তৈরী করল, যা আমাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখাত”। -বুখারী

শুধু বিদআতই নয় বরং তা অমুসলিম ইহুদী-খৃষ্টানদের অনুসরণও বটে। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

(من تشبه بقوم فهو منهم)

“যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুস্মরন করবে, সে উক্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। -আবু দাউদ

[sbপ্রসঙ্গতঃ জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনে ইসলামের বিধানঃ

ইসলামে কারো জন্মদিসবস, মৃত্যু দিবস ইত্যাদি পালন করা শরিয়ত সম্মত নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ধর্মের নামে এগুলো চালু করা হলেও এসব আনুষ্ঠানিকতা পালনে ইসলামের কোন অনুমোদন কিংবা সমর্থন কোনটাই নেই। আমাদের সমাজে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, সন্তান-সন্ততি, নেতা-নেত্রীর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী নানান প্রকারের আনুষ্ঠানিকতাসহ অত্যন্ত জমজমাটভাবে পালন করা হয়ে থাকে। সেসবে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে বিশাল খাবার-দাবারের আয়োজনও করা হয়ে থাকে। কিন্তু নিতান্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমরা ক'জনই বা জানি বা জানার চেষ্টা করি যে, জন্মবার্ষিকীর নামে আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা, কেক কেটে বার্থ ডে উদযাপন করা অথবা, মৃত্যুবার্ষিকীর নামে বিশেষ রীতিতে পুষ্পস্তবক ইত্যাদির ব্যবহারে শোক পালন করা, ইত্যাদি সবই ইসলামি চেতনা ও বিশ্বাস পরিপন্থী।
জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবস কেন্দ্রিক আচার অনুষ্ঠান খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের ধর্মীয় রীতি। তাই এগুলো মুসলিমদের জন্য সন্দেহাতীতভাবে পরিত্যাজ্য। বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান আপাতঃদৃষ্টিতে যত ভালোই মনে হোক না কেন, কখনো তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। কারণ, পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদের অনর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।”

বস্তুতঃ প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় ওয়াহী দিবস, কুরআন নাযিল দিবস, পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ) এর জন্ম বা মৃত্যু দিবস, মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর জন্ম বা মৃত্যু দিবস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে কোন নবীর স্মরণে বা কোন সাহাবার শাহাদাত দিবস অথবা কোন জিহাদের দিবস পালন করেননি এবং পালন করার জন্য কোনো নির্দেশও প্রদান করেননি। তিনি বরং বলে গেছেন, আমার পরে আমার শরীআ’তের মধ্যে যেসকল নতুন কাজকর্ম আবিষ্কার হবে, আমি তা হতে সম্পর্কহীন এবং ঐসকল কাজকর্ম মারদূদ তথা, পরিত্যাজ্য ও ভ্রষ্ট। -বুখারী, মুসলিম, মিশকাত

অতএব, কোন জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে বিদ’আত তথা মনগড়া কাজ। আর ইতিহাসের আলোকে বিবেচনা করলে এগুলো ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপুজকদের অন্ধ অনুসরণ তথা ইসলামবিরোধীদের কাজ। সঙ্গত কারণে এসব জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালন করার যেহেতু কোন প্রকার বৈধতা ইসলামে নেই, সুতরাং এগুলো থেকে অবশ্যই প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্যই বিরত থাকা জরুরি।

আকীকার ক্ষেত্রে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসঃ

কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, সন্তানের পিতা-মাতা এবং যে সন্তানের আকীকা দেওয়া হলো, সে সন্তান আকীকার গোশত খেতে পারবে না। এটি একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস। এ মর্মে কোন দলীল-প্রমান নেই। পূর্বেই বলা হয়েছে, আকীকার গোশত কুরবানীর গোশতের মতই। পরিবারেই সবাই খেতে পারবে।

আকীকা দিতে অক্ষম হলেঃ

পূর্বেই বলা হয়েছে, দারিদ্রতার কারণে আকীকা দিতে অক্ষম হলে, আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। যখনই সামর্থবান হবে, তখনই আকীকা করবে। আর যদি আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হয় এবং আকীকা দিতে না পারে, তাহলে কোন গুনাহ হবে না। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেনঃ

لايكلف الله نفسا إلاوسعها

“আল্লাহ তা‘য়ালা কারও উপর সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেননা। -সূরা বাকারা-২৮৬

আল্লাহ তা‘য়ালা আরও বলেনঃ

(وما جعل عليكم فى الدين من حرج)

“আল্লাহ তা‘য়ালা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিন বিষয় চাপিয়ে দেননি। -সূরা হজ্জঃ৭৮

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

(فاتقوا الله ما استطعتم)

”তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী”। -সূরা তাগাবুন-১৬

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

إذاأمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم وإذا نهيتكم عن شيئ فاجتنبوه

“যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেই, তখন সাধ্যানুযায়ী তোমরা তা পালন কর। আর যখন কোন কাজ হতে নিষেধ করি, তখন তা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাক”।

উপরোক্ত দলীলগুলোর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, আকীকাসহ যে কোন আমলই হোক না কেন, অক্ষমতার কারণে পালন করতে না পারলে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু নিষিদ্ধ বিষয়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ। সব ধরণের নিষেধ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। কারণ, নিষেধ থেকে বিরত থাকতে কোন কষ্ট হয় না বা আর্থিক সচ্ছলতারও প্রয়োজন পড়ে না।

আকিকার কিছু উপকারিতাঃ

(ক) এতে আছে সন্তানের মুক্তি এবং তার বিনিময় প্রদান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইসমাঈল আ.কে যবেহের বিনিময়ে ভেড়া কুরবানী দিয়ে দেন। নবী সা আমাদের জানিয়ে দেন যে, নবজাতকের জন্য যা-ই যবেহ করা হবে তা হতে হবে কুরবানী ও হজের হাদীর মতো ইবাদত হিসেবে। তিনি বলেন,

‘যে তার সন্তানের জন্য কোনো কুরবানী দিতে চায়, তবে যেন পুত্র হলে দুটি সমবয়সী ছাগল এবং কন্যা হলে একটি ছাগল গিয়ে ইবাদত (তথা আকীকা) করে।’ -নাসায়ী : ৪২২৯; শরহু মা‘আনিল আছার : ১০১৫

অর্থাৎ তিনি এটাকে কুরবানী হিসেবে করতে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যেটাকে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্য কুরবানী ও বিনিময় হিসেবে দিয়েছিলেন। আর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে অসম্ভব নয় যে তিনি সন্তানের জন্য, তার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও দীর্ঘায়ু জন্য এ বিধান দিয়েছেন। যাতে ওই যবেহকৃত পশুর প্রতিটি অঙ্গ এ শিশুর বিনিময় হয়।

খ) সন্তান দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। কেননা, সন্তানই অন্যতম সেরা নেয়ামত। আর এ সন্তান হলো পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা…।’ -সূরা আল-কাহফ: ৪৬

আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে এ প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে সে সন্তান ভূমিষ্ট হলে আনন্দিত হয়। তাই মানুষের কাছে তার স্রষ্টা ও দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশই কাম্য।

গ) এ কথার সংবাদ ও ঘোষণা দেয়া যে এ ব্যক্তি সন্তানের পিতা হয়েছে এবং সন্তানের নাম অমুক রেখেছে। ফলে তার পরিজন, প্রতিবেশি ও বন্ধ-বান্ধব এ সংবাদ জানবে এবং তাকে মোকারকবাদ দিতে আকীকায় উপস্থিত হবে। এতে করে মুসলিম ভাইদের মাঝে সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হবে।

ঘ) এতে ইসলামের সামাজিক দায়িত্বগুলোর একটি প্রকারের চর্চা হয়। কেননা, যিনি তার সন্তানের জন্য আকীকা হিসেবে পশু জবাই করেন এবং তা বন্ধ-বান্ধব, প্রতিবেশি ও গরীব-মিসকীনদের জন্য পাঠিয়ে দেন বা তাদের দাওয়াত করেন। আর এটি গরীবদের অভাব মোচন ও দারিদ্র হ্রাসে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে।

শেষের কথাঃ

আলোচনান্তে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সন্তানের জন্য আকীকা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত আমল, নিজের আনন্দ ও খুশির বহিঃপ্রকাশের পাশাপাশি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে উত্তম একটি ইবাদতও এটি। তাই সামর্থ্যবান ব্যক্তিমাত্রেরই এটি নিয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে গুরুত্বের সাথে নিজে এই আমলটি করেছেন এবং করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদেরও উচিত আকীকার আমলটি সেভাবেই গুরুত্বের সাথে পরিপালন করা। পরিশেষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দরবারে কায়োমনোবাক্যে সিজদাবনত প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটি যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক প্রদান করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:৪৪
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×