somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

মনে হয় যেন আমিও রয়েছি প্রতিটি কাফেলার সাথে...

২৫ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মসজিদুল হারাম, পবিত্র মক্কাতুল মোকাররমা।

মনে হয় যেন আমিও রয়েছি প্রতিটি কাফেলার সাথে...

আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন ওয়াচ্ছালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিহিল কারিম। ওয়া আ'লা আ-লিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈ-ন।

সময়ের আবর্তনে বছর ঘুরে আসে হজের মওসুম। প্রতিবছর পালিত হয় পবিত্র হজ। চেনা পৃথিবীর জানা অজানা হাজারও জনপদের লক্ষ লক্ষ বাইতুল্লাহর মুসাফিরের মিলনমেলা বসে মক্কাতুল মোকাররমায়। মদিনাতুল মোনাওওয়ারায়। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে বিগত দুই বছর প্রায় বন্ধ থাকার পরে এ বছর আবার সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো হজের আনুষ্ঠানিকতা। বরাবরের মত বিশ লক্ষাধিক হাজী সাহেবানগণ হজ করতে না পারলেও অর্ধেক, অর্থাৎ, আল্লাহর ঘরের প্রায় দশ লক্ষাধিক মেহমান এ বছর সমবেত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন বাইতুল্লাহর পবিত্র আঙিনায়। পৃথিবীর নানান দেশ, ভাষা ও বর্ণের দশ লক্ষাধিক হাজী সাহেবানের খোশ কিসমত নসিব হয়েছে পবিত্র হজব্রত পালনের।

হজের এই সময়টা এলেই মনটা অস্থির হয়ে ওঠে। উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। আকুলিবিকুলি আর হাহাকারের স্পষ্ট ক্রন্দনগুলো আওয়াজ করে ওঠে বুকের ভেতরটায়। এমন পাগলপারা কেন হয় মন? এমন ছুটোছুটি অস্থিরতা কেন বুকের পাঁজরে? এমন কান্নার অস্ফুট ধ্বনিদের আনাগোনা কেন এই সময়টায়? চোখের কোনে অশ্রুর প্লাবন কেন বয়ে যায় অনন্য এই মুহূর্তগুলোয়? এই সময়ে হাজীদের 'লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক' ধ্বনি শ্রবনে হতচকিত হয়ে ওঠে হৃদয়। নিজের অজান্তেই অন্তর ছুটে যায় প্রিয়তম রবের ঘরের পানে। মক্কাতুল মোকাররমায়। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতিধন্য মদিনাতুল মোনাওওয়ারায়। বরকতপূর্ণ এই হারামাইন শরীফাইনে মন অবশ্য পড়ে থাকে সারাক্ষণই। সারা বছরজুড়েই। কিন্তু হজের সফরের সময়টা কেমন যেন সম্পূর্ণই ভিন্ন। স্মৃতির পাতাগুলো একে একে খুলে যেতে থাকে এই সময়ে। চোখের সামনে থেকে সরে যেতে থাকে অদৃশ্য অন্তরালগুলো। মনে হয় যেন আমিও রয়েছি হজের প্রতিটি কাফেলার সাথে। হাজী সাহেবানদের মুঠি মুঠি দয়া কুড়িয়ে নেয়ার অনন্য সফরে। আমিও তাওয়াফ করছি হাজীদের সাথে বাইতুল্লাহর চত্বরে। আমিও সায়ী করছি সাফা মারওয়ার আলো ঝলমলে প্রান্তর ছুঁয়ে। আমিও প্রতিনিয়ত সিজদায় মস্তক অবনত করছি বাইতুল্লাহর সামনে। আমিও অশ্রুর নজরানায় নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করছি মাকামে ইবরাহিমের পাশে। আমিও নিজের ভেতরে নিজেকে ভেঙ্গেচূড়ে একাকার করে চলেছি অবিরাম - প্রিয়তম রবের একান্ত সান্নিধ্য আর নৈকট্যপ্রাপ্তির প্রত্যাশায়।

মনে হয় একেকটি তাওয়াফ শেষে হাজী সাহেবানদের সাথে আমিও যেন বুভূক্ষু তৃষ্ণার্ত! তৃষ্ণার্ত চাতকের মত আমারও যেন কতকালের প্রতীক্ষা জমজম পান করার! অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে অবশেষে! পেটপুরে পান করার সৌভাগ্য লাভ করছি জগতের শ্রেষ্ঠ সুমিষ্ট পানীয় জমজম! আমারও তিরোহিত হচ্ছে শারীরিক সব ধকল আর অবসন্নতা! ক্ষুধা পিপাসা একইসাথে নিবারণের এমন দুর্লভ পানীয় পৃথিবীতে আর কোথাও আছে কি? নেই। নেই, বন্ধু নেই। তাওয়াফ শেষে এই পানীয় পান করার প্রশান্তি আর পরিতৃপ্তি ব্যক্ত করার মত নয়। হৃদয় মন জুড়িয়ে যাওয়া সেই অনুভূতি বোঝানোর ভাষাও হয়তো আমার জানা নেই।

মসজিদে নববী, মাদিনাতুল মোনাওওয়ারাহ।

আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অপরিসীম দয়া এবং মেহেরবানিতে বাইতুল্লাহর মুসাফির হওয়ার তাওফিকপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। কত বছর পূর্বে! সেই ২০১৭ সালে! কিন্তু প্রিয়তম রবের ঘরের চৌকাঠ ছোঁয়ার সেই স্মৃতিগুলো আজও অমলিন! সেই স্মৃতিগুলো প্রতিনিয়ত নিজেকে টেনে নিয়ে যায় প্রিয় বাইতুল্লাহর শহর মক্কাতুল মোকাররমায়, প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতিঘেরা মসজিদে নববীর আলো ঝলমলে প্রাঙ্গণে, মদিনাতুল মোনাওওয়ারায়। হজের সফর শেষে ফিরে এসেছি সেই কবে, কিন্তু মন পড়ে আছে আজও সোনালি সেই সফরের স্মৃতিময় বিমুগ্ধতায়! মন বলে ওঠে, আবার যদি যেতে পারতাম একবার! হৃদয় হাহাকার করে ওঠে, আরও কিছুটা সময় যদি হেটে আসতে পারতাম মক্কার অলিতে গলিতে! আরও ক'টা দিন যদি কাটিয়ে আসতে পারতাম রওজায়ে আতহারের নিবিড় সান্নিধ্যে!

মিনা, মুযদালিফা, আরাফাতের আলোকিত প্রান্তরে! আরও কিছুটা সময় যদি ঘুরে আসার সুযোগ পেতাম! আবারও যদি হাজিরা দিয়ে আসতে পারতাম জান্নাতুন মা'লা, জান্নাতুল বাকির আলোকিত কবরগাহে! শারে' ইবরাহিম, শারে হিজরাহ - ইবরাহিম আলাইহিস সালাম রোড, হিজরাহ রোড ধরে ধরে আনমনে হেটে চলার সে কি হৃদয় ছোঁয়া মুগ্ধতা! হাটছি এই সময়ে অথচ মন পড়ে আছে ১৪০০ বছরের পুর্বেকার আলোকিত সেই ক্ষণে! প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেটে চলেছেন সন্তর্পনে! ধীর পদবিক্ষেপে! মদিনার পানে! রাতের আঁধার চরাচরে, চারদিকে! সঙ্গী একমাত্র প্রিয় সহচর আবু বাকার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু! প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস আর মহান আল্লাহ তাআ'লার রহমতের উপরে পূর্ণ ভরসায় দু'জনের দৃপ্ত পদচারণা। আমিও যেন সঙ্গ দিচ্ছি আনমনে! চলতে চলতে গারে সাওরের নির্জন গুহাভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণ!

মন কেঁদে ওঠে, জাবালে নূর, জাবালে রহমতের পবিত্রতার ছোঁয়ায় আবারও যদি সিক্ত করতে পারতাম! আরও কিছুটা সময় যদি হেটে আসতে পারতাম রক্তঝড়া স্মৃতিময় তায়েফের পথে প্রান্তরে! আরও কিছুটা সময় যদি দাঁড়াতে পারতাম মা হালিমা সাদিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার মায়াময় সেই ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরের পাশে! যে ঘরের পাশেই রয়েছে সবুজাভ চমৎকার ছোট্ট একটি মাঠ! আশেপাশে সারি সারি কাঁটাযুক্ত বাবলা গাছের সমারোহ! বাবলার ছায়াঘেরা সেই মাঠেই তো খেলা করতেন পিতৃহীন শিশু মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

উহুদ! প্রিয় জাবালে উহুদ! এই উহুদের এক পাশেই তো শুয়ে আছেন বীরকেশরী নবীজীর প্রিয় পিতৃব্য একান্ত বিশ্বস্ত সহচর সাইয়িদুশ শুহাদা, শহীদদের সর্দার আমির হামযা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু! যদি সৌভাগ্য হতো তাঁর শাহাদাতগাহের পাশে আরও কিছুটা সময় দাঁড়ানোর! এই তো সেই উহুদ! যেখানে দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর! তাঁর পবিত্র দান্দান মোবারক শহীদ হওয়ার হৃদয় ভাংচূর করা সেই উহুদ! এই উহুদেই তো রক্তাক্ত এবং আহত হয়েছিলেন প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

জানি না, কবে আবার যেতে পারবো প্রিয় নবিজীর দেশে, কবে সাগরের অথৈ সলিলের উষ্ণ পরশে সিক্ত হবে হৃদয়ের সরোবরে কুলুকুলু রবে বয়ে যাওয়া অবিরাম স্বপ্নের এ ঝর্ণাধারা। অন্তরের গহীনে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট প্রত্যাশারা কবে ডানা ঝাপটে উঠবে, পূরণ হবে বাইতুল্লাহর পানে ছুটে যাওয়ার জমিয়ে রাখা প্রত্যয়- কিছুই জানা নেই।

প্রিয়তম রব্বে কারিম, মহান মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার একান্ত করুণাই শুধু ভরসা।

সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য এবং সালাত ও সালাম তাঁর প্রিয়তম রাসূলের প্রতি। শুরুতে এবং শেষে। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন ওয়াচ্ছালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিহিল কারিম।

জাবালে নূর এর গারে হেরা বা হেরা গুহা। এখানেই ধ্যানমগ্ন থাকাবস্থায় সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআনের ঐশীবাণী অবতীর্ণ হয় প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৩২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×