somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

অভূক্ত কুকুরের নিরব যাতনা এবং এক ব্যথিত হৃদয়ের বোবা কান্না

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অভূক্ত কুকুরের নিরব যাতনা এবং এক ব্যথিত হৃদয়ের বোবা কান্না

ছবিঃ অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

কুকুর। তুচ্ছ একটি প্রাণী। হ্যা, তুচ্ছই বলছি। কুকুরকে 'তুচ্ছ' বললে কুকুরদের কোন প্রতিক্রিয়া হয় না হয়তো। তুচ্ছ হলেও কুকুরদেরও রয়েছে কিছু নিয়ম নীতি আদর্শ। এই তো সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা। কুয়াশাভেজা এক সকালে এলাকার এক চা দোকানী কথায় কথায় জানালেন কুকুর নিয়ে তার কিছু অভিব্যক্তি। কারও কাছে তার কথাগুলো আজব কিংবা হাস্যকর মনে হলেও আমার কিন্তু হৃদয় ছুয়ে গেছে। আমার সামনেই একটি অভুক্ত কুকুরকে পরম মমতায় তিনি নিজের দোকানের তাজা রুটি প্যাকেট থেকে বের করে খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন যে, 'কুকুরদেরও এলাকা ভাগ করা আছে। এই যে দেখেন কুকুরটা, এটা কিন্তু মারাত্মক ভদ্র। ক্ষুধা পেলে সে আমার কাছে আসবেই। এসেও কোন ধরনের অভদ্রতা করবে না। শান্তশিষ্টভাবে বসবে। অপেক্ষা করবে। খাবারের জন্য আমার দিকে তাকাবে। বাড়াবাড়ি করে না কখনও।'

'আবার খাবার দিলে তা এলোমেলোও করবে না। কিছুটা খেয়ে বাকিটা ফেলে রেখেও যাবে না। বরং খুব যত্ন এবং আগ্রহের সাথে শেষ পর্যন্ত সবটুকু খাবার খেয়ে তবেই যাবে।'

তার ভাষায়, 'এমন ভদ্র কুকুর আমি আর দেখিনি। খাবারটা দিলে সাথেসাথেই সে খাওয়া শুরু করবে না। প্রথমে গোটা খাবারটা মুখে কামড়ে ধরে বহন করে তা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবে। তারপর খাবার সামনে নিয়ে চার পা বিছিয়ে দিয়ে বুকের উপরে শোয়ার মত করে খুব আয়েশ করে আরামে খাবে। এর সিস্টেমটা বড়ই চমৎকার। আগেই বলেছি, ক্ষুধা পেলে ও আমার কাছে আসবেই। আর এই কুকুরটা জানে যে, আমার কাছে এলে সে খাবার পাবেই।'

তিনি বলতে থাকেন। বলতে বলতে তার গলা যেন ভারী হয়ে আসে। তিনি বলেন, 'জানেন, কুকুরের কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। এই কুকুরটা কাউকে কামড়ায় না। বিরক্তও করে না। অন্যান্য কুকুর এলেও সবসময়ই দেখেছি, সেগুলোর সাথে মিলেমিশেই থাকে। দেখে মনে হয় যেন, ওদেরও সমাজ রয়েছে। মহল্লা বা পাড়া রয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা ওরাও বুঝে। শান্তিতে থাকা ওদেরও পছন্দ।'

আমি বললাম, 'তা মনে হলো কীভাবে?'

'এই ধরেন, এই মহল্লার এই কুকুরটাসহ যতগুলো কুকুর রয়েছে, সবগুলোকে দেখি এরা এই মহল্লায়ই থাকে। অন্য মহল্লায় এরা তেমন যায় না। গেলে সেই মহল্লার কুকুররা ক্ষেপে যায়। বাধা দেয়। কামড়েও দেয় কখনও কখনও। আবার অন্য মহল্লার কুকুরও এই মহল্লায় তেমন একটা আসতে সাহস পায় না। বলতে পারেন, আসতে পারেই না। এলে এরাও ঘাড় মটকে দিতে ভুল করে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অন্য কুকুরদের তাড়িয়ে দিলেও নিজেরা কিন্তু কখনও মারামারিতে লিপ্ত হয় না। অসম্ভব মিল নিজেদের মধ্যে।'

আমি তার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনেই যাচ্ছিলাম। তিনি আরও জানালেন যে, 'তিনি কুকুরকে খাবার দেন, আদর যত্ন করেন- এই কারণে তাকে কেউ একজন না কি বলেছেন, কুত্তা পালে কুত্তায়।'

শুধু তাই নয়, কুকুর তার পিছু নেয় বলে লোকসমাজেও তাকে না কি হেয় করার চেষ্টা করে থাকেন সেই লোক।

তাকে শান্তনা দিতে কুকুর নিয়ে আমার কিছু চিন্তা ভাবনা ইসলামের আলোকে তার সাথে শেয়ার করলাম। বললাম যে, হাদিসে তো গোটা বিশ্ব জাহানকে মহান আল্লাহ তাআলার বৃহৎ পরিবার এবং সমগ্র সৃষ্টিনিচয়কে সেই পরিবারের সদস্য সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং একথাও সেখানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার সুবিশাল এই পরিবারের সদস্যদের প্রতি যে যত বেশি দয়াশীল হবে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও তার প্রতি তত বেশিই দয়া প্রদর্শন করবেন।

অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়াপরবশ হও, তাহলে আসমানওয়ালা অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলাও তোমাদের প্রতি দয়া বর্ষন করবেন।

মাখলূকাতের ভালোবাসাই তো দ্বীন এবং ধর্ম। কুকুরকে তো আল্লাহ তাআ'লা আমাদের উপরে নির্ভরতাপূর্ণ অন্যরকম পরাধীনতার এক জীবন দান করেছেন। পরের দয়ায়, আরও স্পেসিফিকভাবে বললে মানুষের দয়ায়ই বেচে থাকতে হয় তাকে। স্বাদ জাগলেও নিজের ইচ্ছায় সে কোন খাবার তৈরি করে খেতে পারে না। কোন খাবারের আইটেম বানিয়ে বা তৈরি করে খাওয়ার সাধ্য আদৌ নেই। পোলাও কোর্মা, গোশতো বিরিয়ানি কত কিছুই তো আমরা খেয়ে থাকি। যখন যা মনে চায় সেটাই তৈরি করে বা কিনে খেতে পারি। কিন্তু এই যে কুকুর। অবলা প্রাণী। তার কি সেই শক্তি আছে? তাকে তো সৃষ্টিকর্তা মহান মালিক আল্লাহ তাআ'লা সেই শক্তি, সেই বুদ্ধি, সেই কৌশল, সেই সামর্থ্য কোনোটাই দেননি। তাকে তো তিনি আমাদের অধীন করে দিয়েছেন। আমাদের দয়ার ভিখারী করে দিয়েছেন। আহ, পরনির্ভরতার কী কঠিন জীবন একটি কুকুর যাপন করে।

তার জীবনের কোনো একটি দিনও এই কথাটিও তার জানার সুযোগ থাকে না যে, আগামীকাল তার পেটে কোন ধরণের খাবার জুটবে, অথবা আদৌ জুটবে কি না, তাও তার জানা থাকে না। কতজন তাকে অবজ্ঞা অবহেলাই শুধু করে না, ক্ষুধার যন্ত্রণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থায় সে যখন খাবারের আশায় কারও কাছে গিয়ে বিরক্ত করে, কখনও কখনও তখনই তার কপালে জোটে নির্মম লাঠি কিংবা ইটের টুকরোর কঠিন আঘাত। হৃদয় বিদীর্ণ করা তীক্ষ্ণ কান্নার শব্দ করতে করতে সে তখন খাদ্যের পরিবর্তে রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসে। অতএব, এসব কুকুরকে খাওয়াবেন না, তো কাকে খাওয়াবেন? এইভাবে আরও কিছু কথা তাকে শুনালাম।

তিনি কথাগুলো শুনে এতটাই আনন্দিত হলেন যে, নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বারবার যেন তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিল।

এই যে একজন হতদরিদ্র, অভাবী মানুষ, যার সংসার চলে টেনেটুনে কোনরকমে। কিন্তু প্রাণীর প্রতি দয়ায় হৃদয়টা ভরপুর- এমন মানুষই তো আমরা চাই। এমন হৃদ্যতায় উচ্ছল, প্রাণপ্রাচুর্য্যে আলো ঝলমল, প্রাণের প্রতি প্রাণের টান যদি আমাদের প্রত্যেকেরই কিছুটা হলেও থাকতো তাহলে পথের পাশে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, শহরের গলি ঘুপচিতে অভুক্ত কুকুরদের বিষন্ন আর বিধ্বস্ত চেহারা দর্শন করতে হতো না।

ধারাবাহিক উপোসের কারণে চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলা হাড্ডিসার কিংবা কঙ্কালপ্রায় মুমুর্ষ কুকুরের মুখ দর্শনে আজও পথ চলতে গেলে রীতিমত গা শিউরে ওঠে। আমরা না কি সভ্য হচ্ছি ক্রমশ? কোথায় আমাদের কথিত সভ্যতা? আমার পাশেই একটা কুকুর খাবার পায় না। না খেতে পেয়ে ধুকে ধুকে সে করুণ মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছে। অথচ আমি নির্বিকার। আমার কোন ভাবান্তর নেই। আমার কোন হাপিত্যেস নেই। হা-হুতাশ নেই। মায়া, মমতা কিংবা দরদের ছিটেফোটা নেই। আমি কেমন মানুষ হলাম? আমার তো মনে হচ্ছে, আমার দরজার সামনে শুয়ে থাকা লাগাতার অভুক্ত এই কুকুরও আমার চেয়ে শ্রেয়। শুধু শ্রেয় নয়, বহুগুণেই বরং শ্রেয় মনে হয় ওদের।

আমাদের হৃদয়রাজ্যজুড়ে হৃদ্যতার চাষবাস নেই। সেখানে জমে উঠছে অলঙ্ঘনীয় আগাছা। মমতার স্থান নেই। কেন যেন বেড়ে চলেছে শুধুই নির্মমতাদের আনাগোনা। মানুষ কিংবা পশুপাখি, সকলের প্রতিই যেন আমরা কঠোর হয়ে উঠছি দিনকে দিন। সেই দিন কবে আসবে জানি না, যে দিন ক্ষুধা পিপাসায় কাতর বুভূক্ষু এবং মৃতপ্রায় প্রাণীদের এমন নির্মমতা আর প্রত্যক্ষ করতে হবে না। চা দোকানীর ব্যথিত হৃদয়ের রক্ষক্ষরণ সেই দিনই কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে হয়তো।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশাল বড় সৃষ্টি তোমার

লিখেছেন প্রামানিক, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

বিশাল বড় সৃস্টি তোমার
মানুষ ক্ষুদ্রতম
চন্দ্র সূর্য দেখার পরে
করছে নমঃ নমঃ।

নানা রকম সৃস্টি দেখে
হচ্ছে চমৎকার
দুইটা চক্ষু উর্দ্ধে তুললে
দৃস্টি যায়না আর।

কোথায় সৃস্টির শেষ সীমানা
কোথায় বা তার শুরু
দূর সীমানায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই লেখা বলা নয়....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩১



বকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই বলা/ লেখা নয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জনসংহতি নষ্ট করা রাষ্ট্র দ্রোহিতার শামিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণবিপ্লব পরবর্তী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×