
চারদিকে অন্ধকার
গাঢ় কৃষ্ণ সে অন্ধকার ক্রমশঃ
আঁধার ছড়িয়েছে জনপদের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে
অজ্ঞতা, অন্ধকার, অরাজকতায় সয়লাব গোটা মানচিত্রজুড়ে
জুলূম নির্যাতন, দমন পীড়নের যাতাকলে পিষ্ট সময়
হত্যা ধর্ষন গুম খুনের রাষ্ট্রীয় মহড়ায়
রেকর্ডের পরে রেকর্ডে ধূলিমলিন মাটি ও মানুষ
জয় বাংলা শ্লোগানে পর্যুদস্ত ধর্ষিতা মা মাটি মানচিত্র
ছাল বাকল তুলে দেয়া ফোকলা মানবতার এফোড় ওফোড় পিঠ
ঠিক যেন নূর হোসেনের ঝাঁজরা বুকের রক্তাক্ত প্রতিচ্ছবি
অমাবশ্যার দীর্ঘ দীঘল কালো রাত গোটা প্রান্তর জুড়ে
দুঃস্বপ্নে মোড়া সোয়া এক যুগের অমানিশা মাড়িয়ে
নতুন সুবহে সাদিক, নতুন সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষায়
ক্লান্ত শ্রান্ত ন্যূজ অবসন্ন বাংলার আকাশ বাতাস আজ
বিধ্বংসী হামলা মামলা নিপীড়ন আর নিষ্ঠুরতার মহোৎসব চারদিকে-
দাঁতালো জানোয়ারের বিভীষিকাময় আক্রমনে ওষ্ঠাগত জাতির প্রাণ
সততঃ জিঘাংসায় মূহ্যমান জোছনার জোনাকিরা
নিষ্পেষিত-পদদলিত সত্যব্রত অবশেষে নির্বাসিত পলাতকা
চারদিকে মিথ্যের জয়জয়কার
সবখানে হায়েনাদের হিংস্র নখরের বিভৎস আক্রমন,
ব্যাংকগুলো দখল হয়ে গেছে
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে
শেখানো কথা ছাড়া এখানে সংবাদ পাঠ করা নাজায়েজ এখন
শুধু নাজায়েজ নয়, স্পষ্টতঃ নিষিদ্ধ, কঠোরতমভাবে হারাম
এখানে গোয়েবলসের খোলস পড়ানোর চেষ্টা হয়েছে
মসজিদের ইমাম খতিবদেরও
নিয়ন্ত্রণের খড়গ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে
ঈদ, জুমুআ কিংবা অন্যান্য খুতবাহ ওয়াজ মাহফিলেও
রাষ্ট্রযন্ত্রের বেনামাজি কিছু তষ্করের
শিখিয়ে দেয়া মন্ত্রই আওড়াতে বাধ্য করা হয়েছে
ইমাম খতিব এমনকি ইসলামি ঘরানার বক্তাদেরও
যেসব আলেম উলামা নাস্তিকদের শিখিয়ে দেয়া
সেসব কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন
প্রকাশ করেছেন অপরাগতা
তাদের নামে হুলিয়া জারি করা হয়েছে
ধরে ধরে তাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে
বছরের পর বছর তাদের কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দি করে রাখা হয়েছে
জামিনযোগ্য ধারার ঠুনকো মিথ্যে মামলায় আটক করার পরেও
জামিনে মুক্তিলাভের কোন সুযোগ তাদের দেয়া হয়নি
এখানে ধর্ষিত মা-বোনের নিরব আর্তনাদ
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয় প্রতিনিয়ত
কিন্তু বিচার হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
ধর্ষক যখন ছাত্রলীগের ষন্ডা ধারালো শীশ্নধারী দুর্ধর্ষ ইয়াবাখোর বদমাশ
বিচারের বাণী তখন নিভৃতে গুমরে কেঁদে মরে
নিরন্তর গুমের বিভীষিকায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া
বিরোধী মতের, ভিন্ন মতের
হাজারও পরিবারের করুণ আর্তনাদ
রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তাব্যক্তিদের বধির কর্ণকূহর স্পর্শ করে না
এ যেন ইসলাম পূর্ব যুগের আইয়ামে জাহিলিয়াতের নব্য সংস্করণ
এ যেন সেই প্রাচীন ফারাওদের অবর্ণনীয় নির্মমতায়
বিরোধীদের নিঃশেষ করার আধুনিক প্রয়াস
'আইয়ামে জাহিলিয়াত' আর 'আওয়ামী জাহিলিয়াত'
দু'টি নামেও অদ্ভূত এক সাযুজ্য!
আশ্চর্য্য এক শ্রুতি বিড়ম্বনা!
কী এক অকল্পনীয় যোগসূত্র দু'টি নামের দু'টি শব্দের মাঝে!
হ্যাঁ, আইয়ামে জাহিলিয়াত আর আওয়ামী জাহিলিয়াত
আজ আর আলাদা কিছু নয়, মিলেমিশে একাকার
একে অপরের পরিপূরক
পুরাকালের আইয়ামে জাহিলিয়াত যারা দেখোনি
এসো, এসো, আওয়ামী জাহিলিয়াত দেখে যাও
আইয়ামে জাহিলিয়াতকে পেছনে ফেলে
অন্যায় অবিচার জুলূম নির্যাতনে
হাজারগুণ সরেষ নব্য আওয়ামী জাহিলিয়াতকে দেখে যাও
আওয়ামী জাহিলিয়াতের জিঘাংসার অন্ধকারে বিতাড়িত সভ্যতা
ঘূনে ধরা ভঙ্গুর সমাজের খসে পড়া পলেস্তরায়
রক্তপিপাসু নৃশংস হায়েনার দাঁতালো মুখ দেখে যাও
খুনের নেশায় আকন্ঠ নিমজ্জিত মাফিয়া সম্রাজ্ঞী
হাসিনার দীগন্ত বিস্তৃত ভয়ঙ্কর রক্তচোখ দেখে যাও
ঠিক যেন গোটা বাংলাদেশের মানচিত্রজুড়ে
বিষাক্ত সাপের ছোবল উম্মুখ উল্লম্ফ ফনা
লকলকে জিহবা থেকে ক্রমাগত জল ঝড়ছে
লোভ, কুক্ষিগত ক্ষমতা, অবিরাম দম্ভ,
অহংকার, অহমিকা,
নিরন্তর মিথ্যাচার, ভোটচুরি, অধিকার কেড়ে নেয়া,
বেশ্যার মত নির্লজ্জভাবে ভারতের পা চাটাচাটি,
অসভ্যতা, অবাধ নোংড়ামো, অবাধ ধাষ্টামো,
অবর্ণনীয় শয়তানির খেল তামাশা দেখে যাও
এখানে এখন মেগা মেগা প্রকল্প হয়
পদ্মা সেতু আর লম্বা কিছু উড়াল সড়কের নামে
কর্ণফুলির তলায় পাতাল সুরঙ্গের নামে
মেগা চুরি আর লুটপাটে মত্ত নব্য ডাকু ড্রাকুলারা
আর এদের নিয়ন্ত্রিত প্রচার যন্ত্রে
অষ্টপ্রহর বাজতে থাকে
উন্নয়নের অবাক করা ঝনঝনানি
অন্যদিকে তলে তলে চলতে থাকে ব্যাংক লুটেরাদের নিরব ধ্বংসযজ্ঞ
হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেয়ার পরে
লুটপাটকারীর বিরুদ্ধে যখন আপত্তি উত্থিত হয়
এখানের ক্যাঙারু কোর্টের নীতিভ্রষ্ট অসভ্য বিচারপতি তখন
অবৈধ অনির্বাচিত জবরদখলকারীদের যেনতেনভাবে
নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়ার আরেকটি সুযোগদানের উদ্দেশ্যে
লম্বা সময়ের বিরতিতে ধামাচাপা দেয়ার প্রয়াস দেখান
অতঃপর অবাক বিস্ময়ে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে
অভাবনীয় অর্থপাচারের বিস্ময়কর মহোৎসব
কোথায় যেন দেখেছিলাম
কয়েক ধর্ষক মিলে এক তরুনীকে বাসের মধ্যে
পালাক্রমে ধর্ষন করার সময় উচ্চ আওয়াজে
বাজিয়ে রেখেছিল গান
যেন বাইরের মানুষ তরুনীর চিৎকার শুনতে না পায়
বাংলাদেশটাকেও আজ আওয়ামী দস্যু ধর্ষকরা
একইভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একইভাবে
খুচিয়ে খুচিয়ে ধর্ষনে লিপ্ত পরিলিপ্ত
দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ বেহিসাব খুনের মহড়া
সর্বব্যাপী লুটপাট লুন্ঠনের বিশাল আয়োজন
দেশ মাতৃকাকে ভেঙ্গেচূড়ে দুমড়েমুচড়ে খাওয়ার বিভৎস উল্লাস
একটু যেন তর সয় না
নেকড়ের দল স্বগোতক্তি করে-
'ছিঁড়েফেড়ে দে রে মা, লুটেপুটে খাই'
নারকীয় নর্তন কুর্দন
পাশবিক লুন্ঠনের বিচিত্র উল্লাস
প্রিয় স্বদেশ গোটা মানচিত্র যেন আজ ঝলসানো পোড়া রুটি এক
এখানে বিচারের বানী আজ নিভৃতে কেঁদে যায়
সাগর রুনিদের অতৃপ্ত আত্মাদের নিরব আর্তনাদ
আকাশে বাতাসে কান্নার ঝড় তোলে
কিন্তু বিচারকগণ মূক-বধির-অন্ধ
আদালতগুলো চুরি হয়ে গেছে
এজলাস থেকে বিচারককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে
বের করে দেয়া দাঁতালো জানোয়ারদের অবাধ বিচরণ এখন
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে
মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় ফুরফুরে মেজাজ তাদের,
সন্ত্রাস ঠেকাবার কেউ নেই কোথাও
বজ্জাতদের রুখে দেবার কেউ নেই চারপাশে
একটি দলের ষন্ডাদের সদম্ভ আনাগোনায়
পদদলিত মানবতার রুক্ষ ম্লান মলিন চেহারা
দাসখত দেয়া চরিত্রহীন বিচারক নামের দুষ্টচক্র
মামলার পরে মামলা নিচ্ছে
নিজেদের স্বার্থে, প্রভূদের বাঁচাতে
যারা মার খায় দিবালোকে
এখানে মামলা কেবল তাদের নামেই রুজু হয়
অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে নয়
পুলিশ কিংবা কোর্ট এখানে বিশেষ দলের
ফরিয়াদির কান্না তারা শোনেন না
শুনতে পারেন না
বিশেষ দলের সাথে অদৃশ্য চুক্তিতে তারা আবদ্ধ
সেই চুক্তিমতে, এখানে মামলা শুধু তাদের পক্ষ থেকেই হতে পারবে
আর কারও মামলা করার অধিকার নেই
মার, তা সে যতই খাক, মাটির সাথে মিশে গেলেও
কোর্ট কাচারি বিচারালয় কেবল একটি দলের লোকদের জন্যই
অবশ্য, নষ্ট দ্বিপদী বিচারক নামের এই সারমেয়দেরও
অবশেষে কোথাও কোথাও বুঝতে বাকি নেই যে
চামচামি, দালালির সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের পরেও
শেষাবদি তাদেরও আর কিছুই করার নেই
তাদেরও কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই
তাদেরও পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়-
দিন শেষে তাদেরকে রক্ষার জন্যও কেউ এগিয়ে আসে না
কারণ, চরিত্রহীন স্বার্থবাদীদের মিথ্যের মুখোশ একসময় খুলে যায়
কারণ, যাদের পক্ষে এত দিন মিথ্যা রায়ের প্লাবন বইয়ে দিয়ে দিয়ে
গোটা বিচারব্যবস্থাকে ধুলিস্যাৎ করে এসেছেন তারা,
আদালতের স্বচ্ছতা আর ন্যায়পরায়নতাকে যাদের জন্য কবর দিতে
কুন্ঠাবোধ করেননি তারা-
স্বপক্ষের সেই ষন্ডারাই পদাঘাতে বিচূর্ণ করে চলেছেন আজ তাদেরকেই
আহ! বিচারকদের বুকে কি ভয়ানক দুঃখগাথা!
বিসুভিয়াসের লাভার মত, আগ্নেয়গিরির ছাইচাপা আগুনের মত
তাদের কাছে আজ- তাদের রক্ষকরাই ভক্ষক,
তারা সবকিছু বোঝেন, কিন্তু টু শব্দ করার যো নেই তাদের,
বিক্রিত বিবেক নিয়ে অন্যায়ের পথে ধাবমান এই বিচারক গোষ্ঠীর
পেছনে ফিরে যাওয়ার উপায়ও নেই
তাই তারা সবকিছু বুঝেশুনেই নিশ্চুপ
ষন্ডারা প্রকাশ্য সভায় বিচারকদের যখন ফেলে দেয়ার হুমকি দেন,
যখন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ফেলে দেয়ার উদাহরণ পেশ করেন
তখন বিচারক নামের নতজানু ইতররা খোশামোদে গদগদ হওয়া ছাড়া
কিছুই করতে পারেন না-
বিচারব্যবস্থার ন্যাক্কারজনক এমন অধঃপতনও আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে
তবে মাননীয় বিচারকগণ এইভাবে উপেক্ষিত হওয়ার পরে
এখনও যে কিছু কিছু বিষয় বুঝতে পারেন,
অনুধাবন করতে পারেন,
পরিস্থিতি আঁচ করার ক্ষমতা তাদের এখনও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি
সে কারণে স্বীকার করে নিতেই হয়, তাদের জ্ঞান আছে বৈকি
তাদের জ্ঞানের প্রশংসা করা ছাড়া আর কীইবা করা যায়
শেষমেষ প্রমানিত হয়ে যায় যে,
বিচারক নামের এই প্রাণীগুলো বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানীও বটেন
এখানে ভোট, ভোটাধিকারের গায়ে পেরেক ঠুকে ঠুকে
অবৈধ উল্লাস করা হয়েছে
এবং গণতন্ত্রের কফিনের উপরে নৃত্য করা হয়েছে
উদ্দাম বেহায়াপনার সয়লাবে ভেসে যাওয়া
গণতন্ত্রের শবদেহের দাফন সম্পন্ন হয়েছে
অবশেষে রাতের অন্ধকারে
অতঃপর মানবাধিকার কিংবা জনঅধিকারের কফিন বইতে বইতে
ক্লান্ত শ্রান্ত ন্যুজ ধরাশায়ী মাটি ও মানচিত্রকে খুবলে খাওয়া হয়েছে
চেতনার নামে মিথ্যার ফেরিওয়ালাদের
উল্লম্ফ আস্ফালনে দিশেহারা মা, মাটি ও মাতৃভূমি
গোটা মানচিত্রকে লুটেপুটে খেয়েও
বুভুক্ষু দৈত্যাকার রাক্ষুসে স্বৈরাচারের ক্ষুধা মেটে না
তাদের আরও চাই আরও চাই আরও চাই
আরও রক্ত চাই আরও লাশ চাই আরও গুম চাই আরও খুন চাই
আরও ক্ষমতা চাই আরও অর্থ চাই আরও বিত্ত চাই আরও
রক্ত চাই আর লাশ চাই আরও অবৈধ উল্লাস চাই
গুম খুনের বন্যায় তারা পদ্মা মেঘনা যমুনার জল রঙিন করে তুলেছে
তারা বঙ্গোপসাগরও ভরে দিতে চায়
নিত্য নতুন শাপলা চত্বর আর পিলখানা কায়েম করতে চায়
তাদের রক্তপিপাসা আর খায়েশ মেটাতে তারা
সুখরঞ্জন সালাহ উদ্দিনদের মত মানুষদের পাচার করে দেন
সীমান্তর ওপারের অন্য একটি দেশের ভূখন্ডে
সপ্তাশ্চর্যের মত সেটাই এই নষ্টদের সময়ের নতুন বিস্ময়
আদালত নামের নাট্যমঞ্চ এখন প্রতিনিয়ত
হাসির খোড়াক যোগানো ঠুটো জগন্নাথ
সেখানে নিত্যনতুন চমক সৃষ্টিকারী নাটক মঞ্চস্থ হয়
গা শিউরে ওঠা সেসব নাটকের মূল উপজীব্যই মিথ্যে
মিথ্যের ওপরে ভর করেই চলে এসব
আদালতকে ব্যবহার করেই স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে
শান্তিকামী মুক্তিপাগল মানুষের কান্নার সকল শব্দ
নাগরিক অধিকার আদায়ের সকল সংগ্রাম
সকল দাবি
সকল আওয়াজ
ধারাবাহিক অত্যাচারের স্টিম রোলারে পিষ্ট করে করে
দেয়ালে ঠেকিয়ে দেয়া হয় প্রত্যেক ফরিয়াদির পিঠ
অবশেষে অধিকারহীন মানুষ যখন নেমে আসেন রাজপথে
অধিকার আদায়ের মিছিলে শামিল হয়ে কন্ঠে তুলে নেন মুক্তির শ্লোগান
তাদের বুক নিশানা করেও গুলি ছুঁড়ে মারা হয় উদ্ধত রাইফেলের গুলি
রাষ্ট্রযন্ত্রের পেটোয়া বাহিনীর বুলেটের আঘাতে
বারবার রক্তাক্ত হয় রাজপথ
অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেমে আসা লাখো নিরস্ত্র মানুষ
তবুও পেতে দেন আপন বুক
রাইফেলের সামনে অস্ত্রের সামনে
কন্ঠে তোলেন মুক্তির স্লোগান
আর তারপরেই আমরা বারবার প্রতিবার
অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি
মুহূর্তেই ঝাজরা করে দেয় রাষ্ট্রীয় বর্বর বাহিনীর বিধ্বংসী বুলেট
অতঃপর আঘাতে আঘাতে ঝাজরা করে দেয়া সেই বুকের ওপরে
চলতে থাকে যাবতীয় অসভ্যতা
বুটের আঘাত
চলে উদ্যম নর্তন কুর্দন
কক্সবাজারে গুলিবিদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার বুকের ওপরে
যেভাবে পদাঘাতে উল্লাস করেছিল প্রদীপ গংরা
এখানে গুম এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা
সত্যোচ্চারণের পরাকাষ্ঠা দেখানো মানেই
অবধারিতভাবে গুমের শিকার
গুম এখন এখানে শুধু জায়েজই নয়,
বিরোধী কন্ঠকে স্তব্ধ করতে এটি বরং
রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর সর্বস্বীকৃত এবং অনুমোদিত উৎকৃষ্ট একটি পন্থা
কারণ, তারা গুম নিয়েও এখন নিত্যনতুন নাটক মঞ্চস্থ করেন
গুম করার পরেও বলে দেয়া হয় যে,
কাউকে গুম করা হয়নি, রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে বরং
কেউ কেউ হয়তোবা স্বেচ্ছাপলাতক হয়েই
রাষ্ট্রের ঘাড়ে দায় চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত
হায়রে স্বেচ্ছাপলাতকের দেশ
হায়রে মিথ্যেবাদী নষ্টদের মিলনমেলা
হায়রে রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মম মিথ্যাচারিতা
গণতন্ত্র এখান থেকে পালিয়ে গেছে
ভোটাভুটির চিরচেনা চিত্র আর নেই এখানে
ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রগুলো থাকে নির্জীব
ভোটারগণ জানেন যে, তাদের ভোট আগের রাতে
কাস্ট করা হয়ে গেছে
ব্যালট ভর্তি সেই বাক্স খুলে শুধু গণনার অপেক্ষা
কে জিতবে তাও সকলের জানাই থাকে এখানে
যে সত্যটি প্রকাশ করে জাপানের রাষ্ট্রদূত
হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিলেন
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তিনি শুধালেন যে,
ইলেকশন পূর্ব রাতটিতে পুলিশের সহযোগিতায়
ব্যালটবাক্স ভরে রাখার এমন আজগুবি গণতন্ত্রের কথা
তিনি আর কোথাও শোনেননি
শুনবেন কী করে?
এমনটি কি এই পৃথিবীতে আর কোথাও হয়েছে?
এমন দুর্লভ গণতন্ত্র আর কোনো একটি দেশেও কি আছে?
মিথ্যাচারের এমন অপসংস্কৃতি
আর কোনো জাতি দেখাতে পেরেছে কি?
এখানে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটেরাদের শাস্তি হয় না
কারণ, আদালত আজ্ঞাবহ
শেয়ার বাজার হোক আর ইসলামী ব্যাংকের কথাই বলুন
লুটেরাদের পরিচয় একটাই তারা চেতনার ফেরিওয়ালা
তারা আওয়ামী দস্যুবৃত্তিতে যুক্ত
তারা জয় বাংলা বলা বিচারের উর্ধ্বে থাকা কিছু অমানুষ
এই কারণেই তারা 'জয় বাংলা'
বলে যখন ধর্ষন করেন জামায়াতের
তিলে তিলে গড়ে তোলা ইসলামী ব্যাংককে,
লুটে নেন সেখান থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা
তা হয়ে যায় জায়েজ
তাদের বিচার হয় না
জয় বাংলার শ্লোগানে তাদের হাতে যখন ধর্ষিত হয় শেয়ার বাজার
আদালত পাড়ায় টু শব্দ হয় না
তাদের বিচার হয় না
জয় বাংলা বলে আ'লীগে ভোট না দেয়ার অপরাধে
চার সন্তানের জননীকে ধর্ষন করা হলে
তা-ও জায়েজ এখানে
তখন বিচার হয় না
কে বিচার করবে? কার বিচার হবে?
বিচারব্যবস্থাকেই তো এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে
বিরোধীমতকে দমনের মূখ্য হাতিয়ার হিসেবে
এই মাটি জানে গুম করার পরে কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে
কোথায় অন্তরীন করে রাখা হয়েছে ব্যারিস্টার আরমানকে
তাও এ মাটি লিখে রেখেছে রক্তের অক্ষরে
ইলিয়াস আলীকে ভুলে যায়নি এ দেশের আলো বাতাস
প্রতিটি প্রাণের বেঁচে থাকার অধিকার বৈধ
আদালতের ন্যায় বিচারপ্রাপ্তির অধিকারও সকলেরই প্রাপ্য
কিন্তু ১৪ টি বছর,
১৩০০ এর অধিক গুম,
লক্ষ লক্ষ মিথ্যা মামলা,
হাজার হাজার খুন
দলীয় ক্যাডার বাহিনীর হাতে সহস্র নারীর ইজ্জতহরণের
বিভীষিকাময় অন্ধকারে আজ
কোথায় সেই অধিকার?
কোথায় সেই আদালত?
কোথায় সেই ন্যায়বিচার?
এখানে এসবের কোন কিছুই আর নতুন নয়
বাদ-প্রতিবাদের স্থান নেই এই জনপদে
নিরস্ত্র যে জনতা মিছিলে নেমে গুলি খায়
এখানে মামলা করা হয় তাদের নামেই
একজন দু'জন, একশো দু'শো, এক হাজার দু'হাজার নয়
অযুত নিযুত জনতার নামে মিথ্যে বেনামি মামলা
শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মামলা
একেকজনের নামে অর্ধশত কিংবা আরও বেশি মামলা
শত শত মামলা
যেন মামলায় মামলায় জীবন হয়ে ওঠে ওষ্ঠাগত
যেন মামলায় হাজিরা দিতে দিতে দিতে ছুটে যায় নাভিশ্বাস
যেন মামলার ঠেলা সামলাতে উদ্ধার হয়ে যায় গোষ্ঠী
যেন মামলার বিভীষিকা ঠেকাতে ঠেকাতে জীবন হয়ে ওঠে আধমরা
সকাল থেকে সন্ধ্যা-
আদালত থেকে আদালতে ছুটোছুটি করতে করতে,
এজলাস থেকে এজলাসে আসামীর কাঠগড়ায় দাড়াতে দাড়াতে
যেন জীবন হয়ে ওঠে তেজপাতার মত
কিংবা পাটা পুতোর ঘসাঘসিতে ধনে পাতার মত অস্তিত্বহীন
বিভাগে বিভাগে মামলা,
জেলায় জেলায় মামলা,
মামলার তোড়ে ভেসে যায়
অধিকার কিংবা মানবাধিকার বলে যদি কিছু থেকে থাকে
অধিকার আদায়ের আন্দোলন তো দূরের কথা
বাচার উপায় খুজে হয়রান হওয়ারও ফুরসত থাকে না শেষমেষ
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আর মানুষের ভোটাধিকারের দাবি আদায়ে
রাজপথে নেমে আসা জনতার যেন অবস্থা হয়
ছেড়ে দে মা কেদে বাচি
সে জন্যই এত এত মামলা
চৌষট্টি জেলার প্রতিটি আদালতে বিবেক বন্ধক রাখা
পা চাটা দলীয় বিচারক
তথাকথিত এসব বিচারকগণ মামলার রায়ে
ঘটনা কিংবা পরিস্থিতির উপজীব্য কোন বিষয়কেই
আমলে নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না
বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না সত্য মিথ্যার যাচাই
রায় দেন বরং উপরের নির্দেশে শীর্ষ নেতা নেত্রী
কিংবা রাতের ভোটে জনতার উপরে সিন্দাবাদের ভূত হয়ে
জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা
মন্ত্রী নামের অনির্বাচিত অথর্বদের শেখানো পদ্ধতিতে
টিভি, টকশো, রেডিও, ছাপা কাগজের সংবাদ মাধ্যমও এখন
দখল হয়ে গেছে
সত্য প্রকাশের অপরাধে কিছু মিডিয়ার কন্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে
নতুন বাকশালের হিংস্রতায় রক্তক্ষরণ হতে হতে তারা আজ নির্বাক
বাকিদের মাথার উপরেও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে উম্মুক্ত খড়গ
একটু এদিক ওদিক হলেই মামলা
একটু নড়চড় করলেই হামলা
একটু সত্য প্রকাশ করলেই টুটি টিপে দেয়ার ভয়ের সংস্কৃতির
স্থায়ী আবাস তাদের ভেতরে গড়ে তোলার সার্বিক অপচেষ্টার কমতি নেই
ফলে তারাও আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ঝুকি মাথায় নিয়ে
বিব্রত শঙ্কিত সঙ্কুচিত এবং কিংকর্তব্যবিমুঢ়
বেহুশ রেডিওতে মিছামিছি উন্নয়নের ফানুস ওড়ানো হয়
মুখবুজে অত্যাচার সয়ে সয়ে
মাথা নিচু করে পালিয়েও শেষ অস্তিত্ব রক্ষার
সময়ের ছিন্নভিন্ন দেহের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু টুকরো
সমুদ্রের তরঙ্গেরে মত মিথ্যারা মাথাচারা দিয়ে ওঠে
দৈত্যের মত, প্রলয়ের বিভীষিকায়
পুনশ্চঃ সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ তারিখের দীর্ঘ এ লেখাটি পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় সম্পাদনা করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর হামলা মামলা এবং গুম খুনের জগদ্দল পাথরের নিচে চাপা পড়ে থাকার দুঃসময় অতিক্রান্ত হওয়ায় লেখাটি অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বলে ভালো লাগছে। ফ্যাসিবাদের উৎখাত তো হয়েছেই, সুতরাং এইসব লেখা এখন আর প্রকাশের প্রয়োজন কী? এই প্রশ্ন কারও কারও থাকতেই পারে। আসলে মহাকালের দেয়ালে সাটানো পোস্টারের মত হয়ে এইজাতীয লেখা থাকা উচিত বলেই বিলম্বে হলেও প্রকাশ করার এই উদ্যোগ, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় এবং ফ্যাসিবাদ রুখে দিয়ে সাম্য মৈত্রী এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুন্দর দেশ ও সমাজ বিনির্মানে কাঙ্খিত ভূমিকা রাখতে পারেন। ধন্যবাদ সকলকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



