
দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার লক্ষ্যে বিশেষ আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতি। এই টাকা ফেরত আনতে সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে কাজ করছে। বিশেষ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে। এই আইনটি শুধু পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনাই নয়, বরং ভবিষ্যতে অর্থ পাচার রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে। এই উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও সহযোগিতা প্রয়োজন। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনায় সফলতা পেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় অর্জন হবে।
সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। আশা করি, এই বিশেষ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পথ সুগম হবে এবং দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা কেন জরুরি
১. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা
অবৈধভাবে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে এবং টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করা সম্ভব হবে। এতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য খাতে স্থিতিশীলতা আসবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
২. জনগণের অর্থ জনগণের জন্য
এই অর্থ বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ, যা দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা যেতে পারে। উন্নত দেশে অর্থ পাচার হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সুতরাং, এই অর্থ ফিরিয়ে আনা মানে জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা।
৩. আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা
টাকা পাচারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং অর্থ ফেরত আনা আইনের শাসনকে সুসংহত করবে। এটি ভবিষ্যতে দুর্নীতিবাজদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে এবং অর্থপাচার প্রবণতা কমাবে।
বিশেষ আইনের প্রয়োজনীয়তা
প্রস্তাবিত বিশেষ আইনের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকর হবে। বিদেশি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের আইনি কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে। এই উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অর্থপাচার প্রতিরোধের উদাহরণ হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা
অর্থপাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ইতোমধ্যে ৩০টির মতো আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছে, যা এই উদ্যোগকে সফল করতে সাহায্য করবে।
মূলকথা অর্থপাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নৈতিক ভিত্তি সুসংহত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ সফল হলে জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ দুর্নীতি থেকে মুক্তির পথে অগ্রসর হবে। এখন দরকার দ্রুত ও কার্যকর বাস্তবায়ন, যাতে পাচারকৃত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে পুনঃনিয়োজিত হয় এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



