somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

মহান আল্লাহ তাআ'লা যাদের নিয়ে গর্ব করেন

০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মহান আল্লাহ তাআ'লা যাদের নিয়ে গর্ব করেন

অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

মহান আল্লাহ তাআলা, যিনি সৃষ্টির প্রতিপালক, তাঁর কিছু বান্দা আছেন যাদের প্রতি তিনি বিশেষ মহব্বত ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এমনকি তাদের আমল নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন। এই নিবন্ধে আমরা এমন খোশকিসমত বান্দাদের ফযীলত, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের প্রাপ্তি সম্পর্কে আলোচনা করব, যারা রাতের শেষ প্রহরে আরামের বিছানা ত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হন।

তাহাজ্জুদ: ইবাদুর রাহমানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

‘ইবাদুর রহমান’—দয়াময় আল্লাহর প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। এটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপাধি এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা। এই বান্দাদের একটি বিশেষ গুণ হল, তারা রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে:

وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا، وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا

তারা রহমানের বান্দা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে, অজ্ঞ লোক যখন তাদেরকে লক্ষ করে অজ্ঞতাসূলভ কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে। এবং যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে কখনো সিজদারত অবস্থায় এবং কখনো দণ্ডায়মান অবস্থায়। -সূরা ফুরকান (২৫): ৬৩-৬৪

আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত বান্দা

এই বান্দারা তাহাজ্জুদের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

ثَلَاثَةٌ يُحِبُّهُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، يَضْحَكُ إِلَيْهِمْ وَيَسْتَبْشِرُ بِهِمْ

তিন শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা মহব্বত করেন; তাদের প্রতি হাসেন এবং তাদের ব্যাপারে খুশি প্রকাশ করেন।

তন্মধ্যে এক শ্রেণি হল:

وَالَّذِي لَهُ امْرَأَةٌ حَسْنَاءُ وَفِرَاشٌ لَيِّنٌ حَسَنٌ، فَيَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَذَرُ شَهْوَتَه فَيَذْكُرُنِي وَيُنَاجِينِي وَلَوْ شَاءَ لَرَقَدَ

যার রয়েছে সুন্দরী স্ত্রী এবং নরম বিছানা। কিন্তু সে নিজের চাহিদা পরিত্যাগ করে রাতের বেলা উঠে যায়; আমাকে স্মরণ করে, আমার সাথে গোপন আলাপ করে। অথচ ইচ্ছে করলে সে ঘুমিয়ে থাকতে পারত।

আরেক শ্রেণি:

وَالَّذِي يَكُونُ فِي سَفَرٍ، وَكَانَ مَعَه رَكْبٌ، فَسَهَرُوا وَنَصَبُوا، ثُمَّ هَجَعُوا، فَقَامَ فِي السَّحَرِ فِي سَرَّاءٍ أَوْ ضَرَّاءٍ

ঐ ব্যক্তি, যে কোনো সফরে আছে। তার সাথে কাফেলা আছে। রাতে সফর করতে করতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সকলে নিদ্রায় গিয়েছে। কিন্তু সে সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় শেষ রাতে জেগে ইবাদত করেছে। -আল-আসমা ওয়াস-সিফাত, বাইহাকী, হাদীস ৯৮৩

রাব্বুল আলামীন যাদের প্রশংসা করেছেন

কুরআন মাজীদে বহু স্থানে আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদগুজার বান্দাদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন:

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ، آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَٰلِكَ مُحْسِنِينَ، كَانُوا قَلِيلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ، وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

মুত্তাকীগণ অবশ্যই উদ্যানরাজি ও প্রস্রবণসমূহের মাঝে থাকবে। তারা উপভোগ করবে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে যা-কিছু দেবেন। পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎকর্মশীল। তারা রাতের অল্প সময়ই নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং তারা সাহরীর সময় ইস্তিগফারে রত থাকত। -সূরা যারিয়াত (৫১): ১৫-১৮

অন্যত্র তিনি বলেন:

أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ ۗ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

তবে কি (এরূপ ব্যক্তি সেই ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে,) যে আখিরাতকে ভয় করে এবং নিজ প্রতিপালকের রহমতের আশা করে রাতের মুহূর্তগুলোতে ইবাদত করে, কখনো সিজদাবস্থায়, কখনো দাঁড়িয়ে? বল, যারা জানে আর যারা জানে না, উভয়ে কি সমান? -সূরা যুমার (৩৯): ০৯

আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:

مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ أُمَّةٌ قَائِمَةٌ يَتْلُونَ آيَاتِ اللَّهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ

কিতাবীদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা (সঠিক পথে) প্রতিষ্ঠিত, রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তারা (আল্লাহর উদ্দেশে) সিজদাবনত হয়। -সূরা আলে ইমরান (৩): ১১৩

আল্লাহ তাআলা তাদের ভালবাসেন

আল্লাহর প্রিয় বান্দারা রাতের শেষ প্রহরে ইবাদতে মশগুল থাকেন। হাদীসে এসেছে:

ثَلَاثَةٌ يُحِبُّهُمُ اللهُ

তিন শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা ভালবাসেন।

তাদের এক শ্রেণি:

وَقَوْمٌ سَارُوا لَيْلَتَهُمْ حَتَّى إِذَا كَانَ النَّوْمُ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِمَّا يُعْدَلُ بِه، نَزَلُوا فَوَضَعُوا رُءُوسَهُمْ فَقَامَ يَتَمَلَّقُنِي وَيَتْلُو آيَاتِي

এক কাফেলা রাতভর সফর করেছে। সফর করতে করতে যখন দুনিয়ার সবকিছু থেকে ঘুম তাদের প্রিয় হয়ে উঠেছে, তখন যাত্রা বিরতি দিয়েছে এবং (বিছানায়) মাথা রেখেছে। এ অবস্থায় তাদের একজন নামাযে দাঁড়িয়ে আমার কাছে অনুনয়-বিনয় করছে এবং আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করছে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৫৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫৬৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৪৫৬

আল্লাহ তাআলা তাদের নিয়ে গর্ব করেন

আল্লাহ তাআলা যখন মানুষ সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, তখন ফেরেশতাদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন। ফেরেশতারা বলেছিলেন, এরা পৃথিবীতে ফাসাদ ও রক্তপাত করবে। কিন্তু আল্লাহ বলেছিলেন, “আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না” [সূরা বাকারা (২): ৩০]। যখন বান্দা তাহাজ্জুদের মতো মহৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও মহব্বত প্রকাশ করে, তখন আল্লাহ তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন। হাদীসে এসেছে:

عَجِبَ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى مِنْ رَجُلَيْنِ: مِنْ رَجُلٍ ثَارَ مِنْ لِحَافِه وَفِرَاشِه مِنْ بَيْنِ حِبِّه وَأَهْلِه إِلَى صَلَاتِه، فَيَقُولُ اللهُ لِمَلَائِكَتِه: يَا مَلَائِكَتِيْ، انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي هَذَا، قَامَ مِنْ بَيْنِ فِرَاشِه وَلِحَافِه مِنْ بَيْنِ حِبِّه وَأَهْلِه إِلَى صَلَاتِه، رَغْبَةً فِيمَا عِنْدِي، وَشَفَقَةً مِمَّا عِنْدِي

আমাদের রব আল্লাহ তাআলা দুই ব্যক্তির প্রতি অত্যন্ত খুশি হন। তন্মধ্যে একজন: ঐ ব্যক্তি, যে লেপ ও বিছানা ছেড়ে নিজের প্রিয়মানুষ ও পরিবারের মাঝ থেকে (শেষ রাতে) নামাযের জন্য উঠে গেছে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের ডাক দিয়ে বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ কর। সে লেপ ও বিছানা ছেড়ে নিজের প্রিয়মানুষ ও পরিবারের মাঝ থেকে নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে, আমার নিআমতের আশায় এবং আমার আযাবের ভয়ে! -মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৫৩৬১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৯৪৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৫৫৮

তাদের জন্য রয়েছে কল্পনাতীত নিআমত

তাহাজ্জুদগুজার বান্দাদের জন্য আল্লাহ তাআলা এমন নিআমত প্রস্তুত রেখেছেন, যা কল্পনারও অতীত। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ ۞ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ ۞ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

আমার আয়াতসমূহে তো ঈমান আনে কেবল তারা, যারা এর দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজ প্রতিপালকের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে। তারা অহংকার করে না। (রাতের বেলা) তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক করে, ভয় ও আশার সাথে তারা নিজ প্রতিপালককে ডাকতে থাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে। সুতরাং কেউই জানে না এরূপ লোকদের জন্য নয়ন প্রীতির কত কী উপকরণ লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ। -সূরা সাজদা (৩২): ১৫-১৭

রাতের শেষ প্রহর: দুআ কবুলের বিশেষ মুহূর্ত

রাতের শেষ প্রহর বরকতময় ও রহমতঘেরা সময়। এ সময় দুআ কবুল হয়। হাদীসে এসেছে:

نَعَمْ، إِنَّ أَقْرَبَ مَا يَكُونُ الرَّبُّ مِنَ الْعَبْدِ جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمَّنْ يَذْكُرُ الله فِي تِلْكَ السَّاعَةِ فَكُنْ

অবশ্যই আছে। রাব্বে কারীম বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন রাতের শেষ প্রহরে। সুতরাং সম্ভব হলে ঐ সময় যারা আল্লাহর যিকির করে, তাদের মধ্যে তুমিও শামিল হয়ে যাও। -সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৪৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৫৭২

আরেক হাদীসে এসেছে:

يَتَنَزَّلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ، يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَه، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه

আমাদের রব আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছে, আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আছে, আমার কাছে (কিছু) চাইবে, আমি তাকে দান করব! কে আছে, আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব! -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮

তাহাজ্জুদ: নেককার বান্দাদের গুণ ও কল্যাণের মাধ্যম

তাহাজ্জুদ ছিল পূর্ববর্তী সালেহীনদের অভ্যাস। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের, গুনাহ মাফের এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যম। হাদীসে এসেছে:

عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمُكَفِّرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الْإِثْمِ

তোমরা অবশ্যই তাহাজ্জুদের পাবন্দী করবে। কেননা, তাহাজ্জুদ ছিল পূর্ববর্তী সালেহীনদের অভ্যাস। এ নামায তোমাদেরকে আপন রবের নৈকট্য দান করে, তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করায় এবং তোমাদেরকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে। -সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৫৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ১১৫৬

জান্নাতের বিশেষ প্রকোষ্ঠ

তাহাজ্জুদগুজারদের জন্য জান্নাতে বিশেষ কক্ষ রয়েছে, যা অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণ ও স্বচ্ছ। হাদীসে এসেছে:

إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرْفَةً يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا، وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا أَعَدَّهَا اللهُ لِمَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَأَلَانَ الْكَلَامَ، وَتَابَعَ الصِّيَامَ وَصَلَّى وَالنَّاسُ نِيَامٌ

জান্নাতে একটি কক্ষ আছে, যার বাহির থেকে ভেতর এবং ভেতর থেকে বাহির দেখা যাবে। এই কক্ষটি আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল স্বরে কথা বলে, বেশি বেশি রোযা রাখে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাযে দণ্ডায়মান হয়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯০৫; জামে মা‘মার ইবনে রাশেদ, হাদীস ২০৮৮৩; মুজামে কাবীর, তবরানী ৩/৩০১ (হাদীস ৩৪৬৬)

দুই রাকাত নামায: দুনিয়ার চেয়ে উত্তম

হাদীসে এসেছে:

رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا الْعَبْدُ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ، خَيْرٌ لَه مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَلَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَفَرَضْتُهُمَا عَلَيْهِمْ

রাতের গভীরে দুই রাকাত নামায দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম। আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে আমি তাদের ওপর শেষ রাতের দুই রাকাত নামায ফরয করে দিতাম। -আয-যুহ্দ ওয়ার-রাকাইক, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, হাদীস ১২৮৯

নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের তাহাজ্জুদের প্রতি যত্ন

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে দিতেন। হাদীসে এসেছে:

أَلَا تُصَلِّيَانِ؟

আরে! তোমরা কি তাহাজ্জুদ পড়বে না? -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭৫

আরেক বর্ণনায় আলী রা. বলেন:

دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَى فَاطِمَةَ مِنَ اللَّيْلِ، فَأَيْقَظَنَا لِلصَّلَاةِ...

এক শেষ রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ও ফাতেমার ঘরে এলেন এবং নামাযের জন্য ডেকে দিলেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭০৫; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৩৯

সাহাবায়ে কেরামও এই সুন্নাহ অনুসরণ করতেন। উমর রা. রাতের শেষ প্রহরে পরিবারকে জাগিয়ে দিতেন এবং আয়াত তিলাওয়াত করতেন:

وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ۖ لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا ۖ نَحْنُ نَرْزُقُكَ ۗ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ

এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ করো এবং নিজেও তাতে অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না; রিযিক তো আমিই দেব। আর শুভ পরিণাম তাকওয়ারই। -সূরা ত্ব-হা (২০): ১৩২; মুয়াত্তা মালেক, আছার ৩১১; সুনানে ছুগরা, বাইহাকী, আছার ৮০২

স্বামী-স্ত্রীর জন্য রহমতের দুআ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের জন্য পরস্পরকে জাগানো স্বামী-স্ত্রীর জন্য দুআ করেছেন:

رَحِمَ اللهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى وَأَيْقَظَ امْرَأَتَه فَصَلَّتْ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ، رَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ، وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ

ঐ ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাতে ঘুম থেকে উঠেছে, নামায পড়েছে এবং আপন স্ত্রীকে জাগিয়েছে। ফলে স্ত্রীও নামায পড়েছে। আর স্ত্রী না উঠতে চাইলে তার চেহারায় পানি ছিটিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঐ নারীর প্রতিও রহম করুন, যে রাতে ঘুম থেকে জেগেছে, নামায পড়েছে এবং স্বামীকে জাগিয়েছে। স্বামী উঠতে অস্বীকার করলে তার চেহারায় পানির ছিটা দিয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৫০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬১০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৪৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৫৬৭

উপসংহার
তাহাজ্জুদ হল ইবাদুর রহমানের বিশেষ গুণ, যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য, ক্ষমা এবং জান্নাতের অফুরন্ত নিআমত লাভ করে। আমাদের উচিত নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের তাহাজ্জুদের পাবন্দী করতে উৎসাহিত করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:২৩
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×