
স্বপ্নে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখা একজন মুমিনের জীবনে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত ও নিয়ামত। এ সৌভাগ্য খুবই বিরল, কিন্তু যাঁদের জীবনে এটি নসিব হয়, নিঃসন্দেহে তারা আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত। এটি ঈমানের দৃঢ়তা, নবীপ্রেম এবং সুন্নাহর প্রতি আনুগত্যের প্রতীক। সহীহ হাদীসে এসেছে—
مَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَآنِي، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَتَخَيَّلُ بِي
"যে আমাকে স্বপ্নে দেখেছে, সে বাস্তবেই আমাকে দেখেছে; কারণ শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।" — সহীহ বুখারী, হাদীস: 6993; সহীহ মুসলিম, হাদীস: 2266
এই হাদীস স্পষ্ট করে যে, স্বপ্নে নবীজীকে দেখা কোন কল্পনা বা ভ্রান্তি নয়; বরং তা বাস্তব ও সত্য। শয়তান কখনোই তাঁর রূপ ধারণ করতে পারে না।
কুরআনেও নবীজী ﷺ-এর মুমিনদের প্রতি দয়া ও ভালোবাসার কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
"নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল, তোমাদের কষ্ট তাঁর কাছে ভারী মনে হয়; তিনি তোমাদের মঙ্গল কামনায় অত্যন্ত আগ্রহী, আর মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও করুণাময়।" — সূরা আত-তাওবা: 128
এ আয়াত প্রমাণ করে যে, নবীজীর রহমত ও ভালোবাসা মুমিনদের অন্তরে বিশেষভাবে প্রবাহিত হয়। স্বপ্নে তাঁকে দেখা সেই রহমতেরই এক অনন্য প্রকাশ।
আলেমগণ এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইমাম নববী (রহ.) বলেন— "স্বপ্নে নবীজী ﷺ-কে দেখা সত্য এবং তা মুমিনের জন্য সুসংবাদ। এটি আল্লাহর রহমত ও বরকতের প্রতীক।"—শরহ মুসলিম, ইমাম নববী
ইমাম তিরমিযী (রহ.) উল্লেখ করেছেন— "এ স্বপ্ন ঈমানের পূর্ণতা ও নবীজীর সুন্নাহ অনুসরণের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়।" —সুনান তিরমিযী, হাদীস: 2282
ইতিহাসে অসংখ্য ওলি আউলিয়া, সালাফে সালিহীন ও বিশিষ্ট আলেমরা নবীজী ﷺ কে স্বপ্নে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তাঁদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, এই দর্শন তাঁদের জীবনে আমল বাড়িয়েছে, অন্তরে নবীপ্রেমকে জাগ্রত করেছে এবং সুন্নাহর প্রতি দৃঢ় আনুগত্য সৃষ্টি করেছে। যেমন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বর্ণনা করেন যে, স্বপ্নে নবীজী ﷺ-এর দিকনির্দেশনা পেয়ে তিনি হাদীস সংকলনের কাজে আরও দৃঢ়তা অর্জন করেছিলেন।
স্বপ্নে নবীজীকে দেখা নিঃসন্দেহে এক বিশেষ সৌভাগ্য। তবে এর সঙ্গে মুমিনের জন্য একটি বড় দায়িত্বও জড়িত। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ এবং একইসাথে তাঁর সুন্নাহকে জীবনে বাস্তবায়নের প্রতি নতুন আহ্বান। যে ব্যক্তি এ সৌভাগ্য লাভ করে, তার কর্তব্য হলো নবীর শিক্ষা মেনে চলা, জীবনে আমল বৃদ্ধি করা এবং মানুষের মাঝে সুন্নাহর দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া।
এই মহামূল্যবান নিয়ামত লাভের জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। যেমন—
اللَّهُمَّ ارْزُقْنَا رُؤْيَةَ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَنَامِ وَفِي الْيَقَظَةِ، وَثَبِّتْنَا عَلَى سُنَّتِهِ حَتَّى نَلْقَاكَ وَأَنْتَ رَاضٍ عَنَّا
"হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে স্বপ্নে এবং কিয়ামতের ময়দানে দেখার সৌভাগ্য দান করুন এবং আমাদেরকে তাঁর সুন্নাহর উপর দৃঢ় রাখুন, যতক্ষণ না আপনার সাথে সাক্ষাৎ করি এবং আপনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হোন।"
বস্তুতঃ স্বপ্নে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখা একটি বিরাট খোশনসিবি। এটি শুধু আনন্দ ও আবেগের বিষয় নয়, বরং সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। নিঃসন্দেহে এ সৌভাগ্যবান দর্শন ঈমানকে সতেজ করে, নবীপ্রেমকে জাগ্রত করে এবং আখিরাতের মুক্তির পথে মুমিনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



