somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

দালালের খপ্পরে সর্বস্ব হারালো হতদরিদ্র পরিবার: গুনতে হলো দুই লাখ

৩০ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দালালের খপ্পরে সর্বস্ব হারালো হতদরিদ্র পরিবার: গুনতে হলো দুই লাখ

ছবিটি এআই এর সহায়তায় তৈরি করা।

গত ১৯ আগস্ট ২০২৫, আমি একটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা নিয়ে লিখেছিলাম। একজন শ্রমিক, ভবনের ছাদে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে তিন তলা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া, হাড় চূর্ণ হওয়া, দেহের একাধিক অংশ বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে পুড়ে যাওয়া—একটি জীবন্ত দুঃস্বপ্নে রূপ নেয় তাঁর জীবন। আমার পরিচিত এই ব্যক্তির দুর্ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর সংকটের এক নগ্ন প্রতিচ্ছবি।

দুর্ঘটনার পর তাঁকে দ্রুত নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)—দেশের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল, যা সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করছিল হতাশা। এক দিন ধরে অপেক্ষার পরও মেলেনি একটি বেড, মেলেনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা। হাসপাতালের করিডরে দিশেহারা স্বজনদের ঘিরে ধরে দালালচক্র। মধুর কথায় তারা প্রলোভন দেখায়: “এখানে চিকিৎসা হবে না। রোগী মরে যাবে। আমাদের ক্লিনিকে নিয়ে চলুন, ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার পাবেন, রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।” প্রিয়জনের জন্য মরিয়া পরিবারটি সরল বিশ্বাসে দালালদের ফাঁদে পা দেয়। রোগীকে হাসপাতাল থেকে নাম কেটে নিয়ে যাওয়া হয় একটি কথিত প্রাইভেট ক্লিনিকে।

ক্লিনিকে পৌঁছানোর পর শুরু হয় অমানবিক শোষণ। একটি অপারেশনের জন্য গুনতে হয় ৯০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয় সিট ভাড়া, চিকিৎসকের ফি, ওষুধ এবং অন্যান্য খরচ। রোগীকে কয়েক দিন আটকে রাখা হয়, স্বজনদের মানসিক চাপে রেখে ভুয়া বিল ও ভাউচার ধরিয়ে আদায় করা হয় মোট দুই লাখ টাকা। হতদরিদ্র এই পরিবার, যাদের এত অর্থ ছিল না, আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পেতে, ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে। কিন্তু এত খরচেও চিকিৎসার মানের কোনো নিশ্চয়তা নেই। এসব ক্লিনিকে প্রায়ই নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি বা দক্ষ চিকিৎসক। দালাল সিন্ডিকেটের কবলে পড়লে বাঁচার উপায় থাকে না।

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সরকারি হাসপাতালে বেডের অভাব, চিকিৎসকের স্বল্পতা এবং অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে দালালরা সুযোগ নেয়। তারা হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থেকে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে টেনে নিয়ে যায়, যেখানে অতিরিক্ত খরচ আর নিম্নমানের চিকিৎসায় মানুষ সর্বস্বান্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী এই সিন্ডিকেটের শিকার হন, এবং অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার নামে প্রাণহানি ঘটে। হতদরিদ্র মানুষ, যাদের বিকল্প নেই, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

এই ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই দুরবস্থার জন্য দায়ী কে? দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে আরও সক্ষম করতে হবে, দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর উপর কড়া নজরদারি চালাতে হবে। সচেতনতা বাড়ানো দরকার—রোগীর স্বজনদেরও জানতে হবে এবং বুঝতে হবে যে, দালালদের প্রলোভনে না পড়ে সরকারি সহায়তা বা বিশ্বস্ত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এই হতদরিদ্র পরিবারটির মতো আর কোনো পরিবারকে যেন দালালের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াতে না হয়, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কার না হলে এমন ট্র্যাজেডি চলতেই থাকবে। সরকার, চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষ—সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×