
উৎসর্গ: জ্বি হ্যা, শুভেচ্ছা জানাতেই হচ্ছে। মোদির ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই লেখাটি তাকে উৎসর্গ করা হলো—যাতে তিনি তার উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতির ধ্বংসাত্মক পরিণতি উপলব্ধি করতে পারেন এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের ক্ষতি পুনর্বিবেচনা করেন।
ভূমিকা
নরেন্দ্র মোদি, একজন উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মাধ্যমে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করেছেন। তার শাসন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করেছে, দেশকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করে। মোদি হিন্দু মৌলবাদের বিষাক্ত আদর্শ চাপিয়ে ভারতকে সনাতনী উন্মাদনার জাতিতে পরিণত করেছেন, যার ফলে ২২ কোটি মুসলিম, ৩ কোটি খ্রিস্টান এবং ২০ কোটি নিম্নবর্ণের মানুষ অধিকারহীনতা ও দারিদ্র্যের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। মোদি, যিনি গুজরাটের কসাই হিসেবে কুখ্যাত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, এই বিপর্যয়ের দায় এড়াতে পারেন না।
গুজরাট দাঙ্গা: মানবতার উপর কালো দাগ
২০০২ সালে গুজরাটে মোদির মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে গোধরা ট্রেনে অগ্নিসংযোগের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ১০০০ মানুষ, প্রধানত মুসলিম, নির্মমভাবে নিহত হয়। মোদির প্রশাসন কেবল দাঙ্গা প্রতিরোধে ব্যর্থই ছিল না, বরং এর নীরব সমর্থক হিসেবে কাজ করেছে। যদিও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এবং তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ পায়নি, এই ঘটনা তার রাজনৈতিক জীবনের একটি অমোচনীয় কালো দাগ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই দাঙ্গার জন্য মোদির তীব্র সমালোচনা করে, যার ফলে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও, গুজরাটের কসাই হিসেবে তার কুখ্যাতি অমলিন।
হিন্দুত্ববাদ: ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বংস
মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে পদদলিত করেছে। বিজেপি এবং আরএসএস-এর প্রচারিত হিন্দু জাতীয়তাবাদ সংখ্যালঘুদের জন্য বিষাক্ত হুমকি হয়ে উঠেছে। নিচে তার কিছু কুখ্যাত পদক্ষেপের উল্লেখ করা হলো:
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং NRC: ২০১৯ সালে প্রণীত এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি স্পষ্ট বৈষম্যমূলক। ভারতের ২২ কোটি মুসলিম নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত, যা মোদির হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্রের অংশ।
গো-রক্ষা সন্ত্রাস: হিন্দুত্বের নামে গো-রক্ষকদের হামলা মুসলিম এবং নিম্নবর্ণের মানুষের উপর অব্যাহত রয়েছে। এই সহিংসতা মোদির প্রশাসনের নীরব সমর্থনে উৎসাহিত হয়েছে।
রাম মন্দিরের রাজনৈতিক ব্যবহার: অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ হিন্দু ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, যা ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতিকে ধ্বংস করেছে।
ধর্মীয় উৎসবের অপব্যবহার: বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে ধর্মীয় উৎসবগুলো প্রায়ই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মঞ্চে পরিণত হয়, যা মোদির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার প্রতিফলন।
সংখ্যালঘু ও নিম্নবর্ণের উপর নিপীড়ন
মোদির নীতি ২২ কোটি মুসলিম, ৩ কোটি খ্রিস্টান এবং ২০ কোটি নিম্নবর্ণের (দলিত ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়) মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। তার শাসন তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে:
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল: ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তাহীনতা, নিপীড়ন এবং অর্থনৈতিক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
তিন তালাক নিষিদ্ধকরণ: নারী ক্ষমতায়নের ছলে এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত আইনে হস্তক্ষেপ করেছে, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
নিম্নবর্ণের শোষণ: দলিত ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের সম্প্রদায় সামাজিক বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী আদর্শ তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক বিদ্বেষকে আরও উস্কে দিয়েছে।
সংখ্যালঘুদের উপর হামলা: খ্রিস্টান মিশনারি এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে "লাভ জিহাদ" অভিযোগের মতো ঘটনা মোদির শাসনে সংখ্যালঘুদের জীবনকে বিপন্ন করেছে।
অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং দারিদ্র্যের জাল
মোদির অর্থনৈতিক নীতি, বিশেষ করে নোটবন্দী (২০১৬) এবং পণ্য ও পরিষেবা কর (GST), ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই নীতিগুলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশ্বব্যাংকের দাবি সত্ত্বেও, দারিদ্র্য হ্রাসের পরিসংখ্যান বিতর্কিত। অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার শিকার প্রধানত সংখ্যালঘু এবং নিম্নবর্ণের সম্প্রদায়। মোদির তথাকথিত "অর্থনৈতিক সংস্কার" কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে, যা তার হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার সঙ্গে মিলে সামাজিক বিভাজনকে আরও তীব্র করেছে।
গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার উপর আঘাত
মোদির শাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মিডিয়ার স্বাধীনতাকে দমন করেছে। প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান ক্রমাগত নিম্নগামী, যা মোদির সমালোচনা দমনের প্রমাণ। বিরোধী দল, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের কণ্ঠস্বরকে আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে নিষ্পেষিত করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, UAPA-এর মতো কঠোর আইন ব্যবহার করে সরকার-বিরোধী কণ্ঠকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এই কর্তৃত্ববাদী শাসন ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে, যা মোদির হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের পথকে সুগম করছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে মোদির ভাবমূর্তি
মোদির সমর্থকরা তার নেতৃত্বে ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধির দাবি করলেও, গুজরাট দাঙ্গা এবং তার হিন্দুত্ববাদী নীতি তাকে বিশ্ব মঞ্চে বিতর্কিত করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো একসময় তাকে প্রত্যাখ্যান করলেও, কূটনৈতিক প্রয়োজনে তারা এখন মোদির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। তবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো, যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের ক্ষয় নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মোদির হিন্দুত্ববাদী শাসন ভারতকে বিশ্বের কাছে একটি বিভক্ত ও অসহিষ্ণু জাতি হিসেবে তুলে ধরেছে।
উপসংহার
নরেন্দ্র মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদ ভারতকে ধর্মীয় উন্মাদনা, সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং গণতান্ত্রিক ধ্বংসের গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে। গুজরাট দাঙ্গা থেকে শুরু করে CAA, ৩৭০ ধারা বাতিল এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়—মোদির প্রতিটি পদক্ষেপ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করেছে। তার নীতি কোটি কোটি মুসলিম, খ্রিস্টান এবং নিম্নবর্ণের মানুষকে অধিকারহীনতা ও দারিদ্র্যের অতলে ঠেলে দিয়েছে। তার সমর্থকরা অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার দাবি করলেও, মোদির উত্তরাধিকার হলো বিভক্তি, সন্ত্রাস এবং একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের অশুভ প্রয়াস। এই দায় তিনি কখনোই এড়াতে পারবেন না।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



