
আগেকার দিনে ভুত-প্রেত ছিলো গ্রামে-গঞ্জে অহরহ। রাত বিরাত বাইরে যেতে ভয় হতো। তখনকার দিনের মত ভুত প্রেতের আনাগোনা এখন আর দেখা যায় না। আমাদের ছোট বেলায় তো দিনেও ঘরের বাইরে যেতে রীতিমত বুক কাঁপতো। শয়তানও ছিল ম্যালা তখন। এখানে ঢিল ছোঁড়ে তো ওখানে ভেংচি কাটে। এর বাড়িতে হানা দেয় তো ওর বাড়িতে ভ্যাজাল সৃষ্টি করে। সন্ধ্যার পরে হাট বাজার থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়িতে যেতেও ভয় হতো তখন। পথে শয়তান ইলিশ মাছ কেড়ে নিয়ে যায় কি না, সেই ভয়। বুঝুন, শয়তানের উপদ্রব কেমন ভয়ানক পর্যায়ে ছিল। সন্ধ্যার পরে বৈশাখ মাসে নতুন পানিতে ভরে যেত মাঠঘাট। তখন গ্রামে থাকতো উৎসব মুখর পরিবেশ। অনেকেই টর্চ লাইট, লুফা কিংবা হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে হাটু পানিতে মাঠেঘাটে মাছ ধরতে নেমে যেত। সে এক মজার স্মৃতি। রীতিমত মৎস্য ধরার অভিযান। কৈ, শোল, বোয়াল, মাগুর, শিং, বাইম, সরপুটিসহ নানান ধরণের মাছ প্রচুর পাওয়া যেত। আনন্দময় এই মাছ ধরার অভিযানে আমরাও প্রায়ই যেতাম। এক হাতে লাইট অন্য হাতে দাও কাঁচি ইত্যাদি। এগুলো দিয়ে কুপিয়ে মাছ ধরা হতো।
তখন দেখতাম, মাথার উপর দিয়ে, একেবারে কাছে দিয়ে, একটু পরপর শয়তান উড়ে যেত। একটু আধটু ভয়ও পেতাম। তখন দোয়া কালাম পড়ে নিতাম। এগুলোকে আমরা বলতাম, দিয়া বাতি। মুখের কাছে একটা আগুনের গোল্লার মত থাকতো। এগুলো যখন উড়ে যেত তখন ফস করে একটা আওয়াজ হতো। গ্রামের লোকেরা বলতেন, এরা না কি, মাছ খেকো ভুত। এখন আর এসব দেখার কথা শুনি না। আগে প্রচুর পরিমানে শয়তান বন্দি করার ঘটনাও দেখা যেত। ওঝা, ফকিরেরও অভাব ছিল না। শয়তান যেমন ম্যালা ছিল, ওঝা ফকিরও ছিল প্রচুর। তারা শয়তান দমন করতে বোতলবন্দির এই কাজটা করতো। এখন অতশত শয়তানও দেখা যায় না, আর আগের মত ওঝা, ফকিরের কেরামতিও চলে না। তবে এখনও সামু ব্লগে মাঝেমাঝে ভয়ঙ্কর কিছু ভুত-প্রেতের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। অবশ্য, বেশি বাড়াবাড়ি করলে, এদের উপদ্রব অতি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে, এগুলোও একসময় বোতলবন্দি হয়ে যায়।
বোতলবন্দি শয়তানের ইনিয়েবিনিয়ে কান্নাও কিন্তু সেইরকম উপভোগ করার মত বিষয়। এরা জোরে জোরে শব্দ করে কান্না করে। হাজারও অন্যায় করেও এরা নিজেদের নির্দোষ প্রমান করতে কান্নার ঢেকুর তুলতে থাকে। হেচকির মত দিতে থাকে। সে এক ভয়াবহ পরিবেশ। একসময় জিদ ধরে, মুক্তি না দিলে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলারও হুমকি দিতে থাকে। এরে ওরে ঘুষি মারতে চায়। সাংঘাতিক বিশ্রী অবস্থা। কিন্তু সবকিছু করে বোতলের ভেতরে থেকেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


