সব কিছু দেখে শুনে কেমন যেন বোধহীন চলমান অশরীরি হয়ে গেছি। স্থানুর মত কাজ করি, নির্ঘুম রাত কাটাই- সবকিছু, সবার সঙ্গ অসহ্য ঠেকে। সাকা, মুজাহিদের ফাঁসী কার্যকরের খবর পড়ে সেদিন খুব নানাভাইকে মনে পড়লো।
কেন তাঁর কোন কিছুই আমার বা আমাদের তেমন জানা হয়নি? শেষ ভরসা বড় মামাকে ফোন দিলাম, নানীও বেঁচে নেই- মামা যদি জানেন কিছু!
আড়াই ঘণ্টা ল্যান্ডফোনে লং ডিস্টেন্স কল। শুরুতে মনে হচ্ছিল মামার ওয়েবক্যাম আর স্কাইপ্টা কেন কাজ করছেনা, কি সুন্দর দেখতে পেতাম দুজনকে।
পরে মনে হলো এটাই ভাল হয়েছে !
নানাভাই( অধ্যক্ষ ফজলুল করিম) এর ৭১'এর বন্দীশিবিরের দেড়মাসের অমানুষিক সময়কাল এবং সমান্তরালে আমার নানু ( বাংলা একাডেমীর পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী শামসুন্নাহার করিম) তাঁর কলেজ পড়ুয়া বড় মেয়েকে( খালা) বিভিন্ন খানে লুকিয়ে, স্কুল পড়ুয়া আমার মাকে ঢাকায় রেখে নাবালক দুই ছেলেকে নিয়ে সিলেট জর্জ কোট, পাক সেনাদের শিবিরে ধর্না দেয়ার ইতিহাসে ফিরে যেতে আজ ৪৪ বছর পরেও আমার মামা আধাঘণ্টা ব্যাপী শিশুর মত মর্ম ভেদী কান্নায় একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেলেন!
যেমন, নানাভাই বস্তায় মোড়ানো ক্ষত বিক্ষত শরীরে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে জ্ঞান ফিরে পেলে আতংকিত হতেন চোখের সামনে অন্য সহ যোদ্ধাদের ওপর পৈশাচিক অত্যাচার দেখে। তাঁদের কলজে কাপানো আর্তনাদে তিনি প্রার্থনা করতেন আবারও যেন তিনি অত্যাচারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন- তাতে অন্তত এই দৃশ্য, এই আর্তনাদ সহ্য করতে হবে না।
আমি স্বান্তনা দেবার মত একটা শব্দও খুঁজে পাইনি!
খুব ইচ্ছা হচ্ছিল- বিশ্বাস করেন- খুব-- রেকর্ড করে মামার আর্তনাদটুকু যদি মিডিয়ায় শোনাতে পারতাম! ফাঁসীর রাতে সাকা, মুজাহিদের খাবার আর স্বজনদের সাক্ষাতের বর্ণনায় যারা আপ্লুত হয়েছেন তাঁদের কানে পৌঁছে দিতে পারতাম! আরিফ জেবতিক ভাই লিখেছেন , যে, বাঙালীর অনেক মায়া, সব কষ্ট ভুলে যাই - মায়াটা থেকে যায়।
আর স্বজন হারানো এইসব মায়া যা ৪৪ বছর পরেও ঠিক কালকের দিনের ঘটে যাবার মতই তাজা দগদগে? তাঁদের যখন ৪৪ বছর ধরে শুনে যেতে হয় '৭১ কোন ইস্যু না, ইত্যাদি হাজারো শ্লেষোক্তি?
যাঁদের কাফন দিয়ে কেনা এই পতাকা, বুকের মানিক সাদকা দিয়ে স্বাধীনতা?
অবশ্যই "আমরা তোমাদের ভুলবোনা" - না সেই বীর শহীদদের , না এই যুদ্ধাপরাধীদের। হাজার বছর পরেও '৭১ আমাদের সবচেয়ে বড় ইস্যু এবং তাই থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১১