somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাজার বছরের গুপ্ত সংঘঃ নয় রহস্যময় মানব সাধক

২৭ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নয় রহস্যময় মানব সাধক। প্রায় দু’হাজার বছরেরও বেশি পুরাতন একটি গুপ্ত সংঘের সদস্য তাঁরা। খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩ সালে প্রাচীন ভারতের সম্রাট অশোক এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রাজ্যজয়ের দুর্দমনীয় নেশা সম্রাট অশোককে কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণে প্ররোচিত করে। ফলে যা হবার তাই হল। এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাঁধল বর্তমান ভারতের কলকাতা আর মাদ্রাজের মাঝামাঝি অবস্থিত তৎকালীন কলিঙ্গ রাজ্যে। প্রায় ১ লক্ষ কলিঙ্গান এতে প্রাণ হারায়। কলিঙ্গ যুদ্ধের বিভীষিকা সম্রাট অশোককে সলজ্জ বিচলিত করে তোলে। সম্রাটের এই অনুশোচনাই পরবর্তীতে জন্ম দেয় কিংবদন্তিতুল্য সেই গুপ্ত সংঘের। শুরু করি তাহলে...


খ্রিষ্টপূর্ব ৩০৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন সম্রাট অশোক মৌর্য্য। বিন্দুসার ও ধর্মার সন্তান আর মৌর্য্য সাম্রাজ্য (Maurya Empire)-এর প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের নাতি ছিলেন অশোক দ্যা গ্রেট। ভারতের ইতিহাসে দুজন রাজাকে গ্রেট উপাধি দেয়া হয় তাদের একজন হলেন এই সম্রাট অশোক আরেকজন মুঘল সম্রাট আকবর। আজব তথ্য হল- হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে একজন হিন্দু রাজাও এই গ্রেট উপাধি পাননি। অশোক প্রথম জীবনে বৈদিক ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তার শাসনকাল ছিল ২৯৮ থেকে ২৭২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। রাজা হবার পর থেকেই অশোক সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি পূর্বে বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশ, পশ্চিমে ইরান ও আফগানিস্তান, উত্তরে পামীর গ্রন্থি থেকে প্রায় সমগ্র দক্ষিণ ভারত নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।


এরপর অশোক কলিঙ্গ প্রজাতন্ত্র দখলে উদ্যোগী হন যা তার পূর্বপুরুষেরা কখনোই জয় করতে পারেনি। খ্রিষ্টপূর্ব ২৬১ (মতান্তরে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৩) সালে দয়া নদীর ধারে ধৌলি পাহাড়ের কাছে এক ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। লক্ষাধিক মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অশোক কলিঙ্গজয় করেন। কিন্তু যুদ্ধজয়ের এই বীভৎসতা সম্রাট অশোককে মানসিকভাবে পরাজিত করে দেয়।



অনুশোচিত সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন। রণাঙ্গনপ্রিয় যুদ্ধবাজ রাজা নিজেকে রুপান্তরিত করেন শান্তিপ্রিয় অহিংসার মানুষে। প্রতিষ্ঠা করেন এক রহস্যময় সমাজের যাদের কাজ ছিল জ্ঞানের এমন কিছু ধারাকে সংরক্ষণ করা যেগুলো কিনা মন্দ লোকের হাতে পড়লে মানবসভ্যতার সাড়ে সর্বনাশ হবার প্রভূত সম্ভাবনা থাকে। বলা হয়ে থাকে যে, সম্রাট অশোক যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন; তাই তিনি চাইতেন মানুষ যেন তার বুদ্ধিমত্তাকে খারাপ কাজে ব্যবহার না করে। তাঁর শাসনামলে বিজ্ঞানের চর্চা অনেকটা গোপনীয়তার সাথে করা হতো। এই গোপনীয়তার অভ্যাস আজ অবধি চলে আসছে। বিগত শতকের শেষের দিকের থেকে ব্যাপক আকারে বের হয়ে আসে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গোপন সংঘের সাথে অন্তরঙ্গ সংশ্লিষ্টতা। ইতিহাসের রক্তাত্ত পথচলা যে শুধু যুদ্ধ, প্রেম আর দুর্যোগের হাত ধরে তা কিন্তু না; এর অনেকটা যাত্রাপথ বিজ্ঞানের চর্চার সাথে ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত। আমরা সাধারণ মানুষজন একটা আবিষ্কার দেখি বা তার কথা শুনি, কিংবা ফলিত চর্চার মাধ্যমে এর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। ব্যস, আমাদের কাজ এইটুকুই। কিন্তু এই আবিষ্কারের পিছনে যে কতটা রহস্যময়, গা শিউরানো ইতিহাস আছে তা আমরা কতজনই বা জানি। অবশ্য এখন আমরা অল্প অল্প জানতে শুরু করেছি সেইসব রহস্যময় গোপন সংঘগুলোর সম্পর্কে। বাভারিয়ান ইলুমিনাটি, নাইট টেম্পলার, ফ্রি ম্যাসন, রসিক্রুসিয়ান, প্রিওরি অব সাইওন কিংবা অদূরবর্তী অতীতের ওপাস দেই, বিল্ডারবার্গ গ্রুপ- অনেক কিছু আজ আমরা জানি। কিন্তু যা আমাদের অনেকরই জানার অগোচরে রয়ে গেছে তা হল অশোক দ্যা গ্রেটের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের প্রাচীনতম সেই গুপ্তসংঘ যার সদস্য সংখ্যা ছিল নয়। তাই অনেকের কাছেই এই সংঘটি নাইন আননোওন মেন (The Nine Unknown Men) নামে পরিচিত।

ইতিহাস ঘাঁটলে এই নয়জন মানুষ সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। এমনকি তাঁরা আসলে কারা কারা ছিলেন, তাঁদের নামই বা ঠিক কি ছিল তা আজও রহস্যের চাঁদরে মোড়া। তবে অনেকের মতে এই নয়জন মানুষ নাকি অমরত্ব লাভ করতে পেরেছিলেন। পেরেছিলেন তাঁদের উপর অর্পিত নিজ নিজ বিভাগে জ্ঞান অন্বেষণের আতিশয্যে পৌঁছাতে। সম্রাট অশোক এই নয়জন মানুষকে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা করার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশমতে এই নয় জ্ঞানী পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁদের স্বীয় স্বীয় ক্ষেত্রের উপর যাবতীয় জ্ঞান সংগ্রহপূর্বক এক জায়গায় সন্নিবেশিত করেন। শুধু তাই নয়, এসব জ্ঞান যাতে ভুল লোকের হাতে না পড়ে তার জন্যও নিখুঁত নিরাপত্তা ও নিখাদ গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হয়। সবচেয়ে অবাক হতে হয় এটা জেনে যে, এই নিশ্চয়তা কেবল সম্রাট অশোকের আমলেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি আজ অবধি প্রবহমান!

কি ছিল সেই নয়টি বিষয়!!!

প্রোপ্যাগান্ডা ও মনোবিদ্যাগত যুদ্ধকৌশলঃ বলা হয়ে থাকে এটিই ছিল নয়টি বিদ্যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর। সাধারণ্যের চিন্তাভাবনা এমনকি স্বভাব-চরিত্র পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল এই বিদ্যার অন্তর্গত ছিল। এই বিদ্যার অধিকারী যে হবে সে নাকি সারা দুনিয়া শাসন করার ক্ষমতা রাখে। ড্যান ব্রাউনের লস্ট সিম্বলে নোয়েটিক সায়েন্স নামক এক বিদ্যার কথা বলা হয়েছে। কে জানে এই নয়েটিক সায়েন্সই সেই প্রাচীন গুপ্তবিদ্যার কোন ধারা কি না!

শারীরবিদ্যাঃ প্রাণী ও উদ্ভিদবর্গের জীবনধারা-সংক্রান্ত বিজ্ঞান; যেখানে জীবদেহের যাবতীয় কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু প্রাচীন জ্ঞানরহস্যের এই শারীরবিদ্যা ছিল অন্যধারার। এখানে জীবশাস্ত্রের এমন কিছু দিক অতি সযতনে লুক্কায়িত ছিল যা আমাদের মতো ম্যাংগো পিপলদের মাথা নষ্ট করে দিবে সুনিশ্চিতভাবে। এই শাস্ত্রের অল্প কিছু জ্ঞান দুঃখজনকভাবে(!)পরবর্তীতে লিক হয়ে যায়। “টাচ অব ডেথ” যার মধ্যে একটা। মার্শাল আর্টের এক গুপ্ত ঘায়েলবিদ্যা। চাইনিজরা এটাকে “ডিম মাক” বলে থাকে। বর্তমান পৃথিবীর খুবই অল্পসংখ্যক (আসলেই খুবই অল্পসংখ্যক) মার্শাল আর্টিস্ট এই বিদ্যা জানেন। অনেকেই সন্দেহ করে থাকেন যে বিখ্যাত মার্শাল আর্টিস্ট ব্রুস লির মৃত্যু এই “টাচ অব ডেথ” এর মাধ্যমে হয়েছিল। “টাচ অব ডেথ” হল মার্শাল আর্টের এমন এক ধরণের মারের স্টাইল যার দ্বারা নিউরন পর্যায়ে আঘাত করার মাধ্যমে ভিক্টিমকে সাথে সাথে না মেরে বরং বিলম্ব মৃত্যু ঘটিয়ে হত্যার সঠিক কারণ লুকানো যায়। চাইনিজ মার্শাল আর্টের প্রাণবায়ু বলে পরিচিত “চি” (Qi) এর মতোই “টাচ অব ডেথ” আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়নি। যাবে বলে মনেও হয় না।

অণুজীববিদ্যা অর্থাৎ মাইক্রোবায়োলজিঃ কিন্তু আধুনিককালের সাপেক্ষে এটা হবে আমাদের বায়োটেকনোলজি যেখানে বিভিন্ন অণুজীবের ফলিত ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু প্রাচীন সেই বইতে কি ছিল অধুনাতন বায়োটেকনোলজি সম্পর্কে? রূপকথার মতো শোনা যায় যে, সম্রাট অশোকের সেই নয় জ্ঞানবন্ত সাধক গঙ্গার পানিকে এমন কিছু মাইক্রবস অর্থাৎ অণুজীব দিয়ে বিশুদ্ধ করেছিলেন যা কিনা যেকোনো মরনব্যাধি থেকেও মানুষকে সুস্থ করে তুলতো। এক ধরণের ব্যাকটেরিওফাজ দিয়ে করা গঙ্গার সেই পবিত্র জল নাকি হিমালয়ের কোন এক রহস্যময় গোপনস্থল থেকে উৎসারিত। তবে বর্তমান বাস্তবতা হল- ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের এই জাতীয় নদীটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত পাঁচটি নদীর একটি। তথাপি একটা কথা কি উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে আমাদের? হয়তোবা এই দূষিত গঙ্গারই কোন এক জায়গার পানি সেই প্রাগৈতিহাসিক অলৌকিক গুণ আজ অবধি ধরে রেখেছে; হয়তোবা আমাদের চর্ম্মচক্ষুর আড়ালে হিমালয়ের সেই রহস্যময় উৎসমুখ থেকে উৎসারিত হয়ে নীরবে নিরবধি বয়ে চলেছে কোন এক অজানা ধারায়। কে জানে সেই কথা?


দূষিত গঙ্গাজল- কুম্ভমেলা উৎসবের পরে...

আলকেমি অর্থাৎ রসায়নঃ এটি যে কেবল সেই সময়ের রহস্যময় বিদ্যা ছিল তা কিন্তু না। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে মুসলিম বিজ্ঞানীদের ব্যাপারে রসায়নশাস্ত্রের উপর করা কিছু অবিশ্বাস্য ও অলৌকিক গবেষণার কথা শোনা যায়। ধারণা করা হয়, এই নয় জ্ঞানী সাধক পরশমণির সন্ধানলাভ করেছিলেন। এই পরশমণি যেকোনো ধাতব পদার্থকে সোনায় রুপান্তরিত করে ফেলে। এমনকি অমরত্বপ্রাপ্তি পর্যন্ত নাকি এই পরশমণির দ্বারা সম্ভব! প্রত্নতত্ত্ববিদগণ একটা বিষয়ে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে থাকেন যে, ভারতে তো তেমন একটা সোনার খনি নেই; তাহলে ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা থেকে এতো স্বর্ণ কিভাবে পাওয়া যায়! আসলে সমগ্র ভারত উপমহাদেশই এক বিচিত্র কারণে বিভিন্ন রহস্যে আবৃত। আরেকটা কিঞ্চিৎ অপ্রাসঙ্গিক কথার অবতারণা করি। জ্ঞান সময়ের মতো বহমান এক বিমূর্ত সত্তা। একে নির্দিষ্ট কোন জাতি, গোষ্ঠী এমনকি সাধকশ্রেণীর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা অসম্ভব। মধ্যযুগের মুসলিম সভ্যতাও রহস্যের চাঁদরে মোড়া এক অধ্যায়। বর্বর তাতার জাতি যখন ইরাক আক্রমণ করে দজলা নদীর পানিতে জ্ঞানবিজ্ঞানের অনেক মূল্যবান তথ্য ফেলে দেয়, কে জানে হয়তো তখন জ্ঞানের অনেক রহস্যঘেরা শাখা চিরতরে হারিয়ে যায়। হয়তো সেই জ্ঞানের কিছু কিছু সম্রাট অশোকের সময়কার সেই জ্ঞানসাধকদের কাছ থেকেই পাওয়া।

যোগাযোগবিদ্যাঃ ধারণা করা হয় এই বিদ্যার মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বহুদূর জগতের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। আমরা যে টেলিপ্যাথির সাথে পরিচিত ওনারা কি তার কথাও জানতেন? না জানার কথা তো না।

মহাকর্ষ ও অ্যান্টি মহাকর্ষঃ এখানে বর্ণিত ছিল “ভিমানা” (Vimana) নামক এক উড়োজাহাজ সম্পর্কিত কিছু তথ্য যা কিনা ইতিহাসজ্ঞগণ প্রাচীন ভারতের ইউএফও (ancient UFO of India) বলে অভিহিত করেন।

কসমোলজিঃ স্থান ও কালের এক জটিল জালকের মধ্য দিয়ে অসামান্য দ্রুততায় অতিক্রমণ করার ক্ষমতা যা আমাদের কাছে টাইম ট্রাভেলিং নামে সুপরিচিত। এর মাধ্যমে নাকি অন্তঃ ও আন্তঃমহাজাগতিক ভ্রমণ করা যেতো। স্থান ও কালের যুগ্ম পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিমাত্রিক পরিব্যাপ্তির নিরীক্ষায় আধুনিক বিজ্ঞানীদের যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা তা যদি প্রাচীন সেই সাধকদের নখদর্পণে থেকে থাকে তো তাতে অবাক না হয়ে পারা যায় না।

আলোকবিদ্যাঃ এখন পর্যন্ত আলোই সবচেয়ে দ্রুতগামী বলে সবার কাছে স্বীকৃত। আলোর চেয়ে বেশি গতির কোন সুপ্রতিষ্ঠিত কণিকা বা শক্তি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বলা হয় রহস্যময় সেই গুপ্তসংঘ আলোর গতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। আলোর গতি বাড়ানো আর কমানোর দ্বারা একে এক অব্যর্থ অস্ত্রে পরিণত করার জাদুকরী বিদ্যা নাকি তাঁদের করায়ত্ত ছিল।

সমাজবিজ্ঞানঃ কোন সাম্রাজ্যের কখন উত্থান আর কখন পতন ঘটবে তার ব্যাপারে নাকি সুনির্দিষ্টভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতো রহস্যেঘেরা এই সমাজবিজ্ঞানের মাধ্যমে।

যারা যারা এই গোপন সংঘ সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন তাদের মধ্যে লুইস জ্যাকলিয়ট, ট্যালবট মুন্ডি, লুইস পাওয়েল ও জ্যাকস বার্গারকে পথিকৃৎ বলা যায়। লুইস পাওয়েল ও জ্যাকস বার্গার তাদের “The Morning of the Magicians” বইতে এই নয়জনের তাঁদের সংঘের বাইরের বিভিন্নজনের সাথে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার ছিলেন সেই বাইরের মানুষদের একজন। বলা হয় যে, পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার ছিলেন এক রহস্যময় মানুষ। তার কাছে লিজেন্ডারি ব্রোঞ্জ মস্তক (Brazen Head) ছিল। মানুষের মাথার মতো দেখতে এই যন্ত্রটি নাকি যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতো। সিলভেস্টারের এই কিংবদন্তি কিন্তু তার জীবনের একেবারে শুরুতেই ছিল না। তিনি একবার ভারত সফরে আসেন। তারপর থেকেই এই রহস্যময়তা। অপ্রাসঙ্গিক তথ্যের অবতারণা করলে বলা যায়, এই একই রকম যন্ত্র দার্শনিক রজার বেকনের কাছেও ছিল যাকে বলা হয় “ডক্টর মিরাবিলিস” অর্থাৎ বিস্ময়কর শিক্ষক। যাই হোক, অনেকেই ধারণা এই কিংবদন্তিতুল্য যন্ত্রের সন্ধান সিলভেস্টার সেই গুপ্ত সংঘের কাছ থেকে পেয়েছিলেন যা সম্রাট অশোক বহুকাল আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আরও একটা বইয়ের নাম উল্লেখ করা যায় যেখানে এই ব্যাপারে একটু বিশদভাবে বলা হয়েছে। আর তা হল ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ট্যালবট মুন্ডির “The Nine Unknown” বইটি।


পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার

অনেকেরই ধারণা কলেরা জীবাণুর প্রতিষেধক আবিষ্কারের পেছনে এই গুপ্ত সংঘের অবদান আছে! এছাড়া র‍্যাবিস এবং ডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক যারা আবিষ্কার করেছিলেন তাঁদের একজনের সাথে নাকি এই সংগঠনের যোগাযোগ ছিল। সেই একজন হলেন- আলেকজান্দ্রে ইয়েরসিন যিনি আবার লুই পাস্তুর এবং এমিল রক্সের খুব কাছের বন্ধু। মিস্টার ইয়েরসিন ১৮৯০ সালে ভারতের মাদ্রাজ নগরীতে আসেন। এই ব্যাকটেরিওলজিস্ট নিজে প্লেগের এক জীবাণু আবিষ্কার করেছিলেন।


আলেকজান্দ্রে ইয়েরসিন

শুধু তাই নয়, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর রেডিও ও মাইক্রোওয়েব অপটিকস আবিস্কার এবং ডঃ বিক্রম আম্বালাল সারাভাইয়ের মহাশূন্য ও মিসাইল প্রতিরক্ষা প্রোগ্রামের অন্তরালেও নাকি সেই একই উৎসের অবদান নিহিত রয়েছে। উল্লেখ্য ডঃ আম্বালালকে ভারতের মহাশূন্য গবেষণার জনক বলা হয়ে থাকে।


ভারতের মহাশূন্য গবেষণার জনক ডঃ বিক্রম আম্বালাল সারাভাই

The Nine Unknown Men” ইতিহাসের এক রহস্যময় নাম। অজানাকে জানতে গেলে, রহস্যময়তাকে ভেদ করতে গেলে অনেক তথ্যই আগাছার মতো ডালপালা গজিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এই সংঘটিকে নিয়েও নানারকম কথা নানা সময়ে শোনা গেছে। অনেকেই ধারণা করেন যে, এই “The Nine Unknown Men” নির্দিষ্ট নয়জন মানুষের কোন দল নয়। বরং যুগে যুগে কালে কালে পৃথিবীর অনেক জ্ঞানীগুণী এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তবে সংখ্যাটা সবসময়ে নয়ই থাকতো। তবে একটা কথা কিন্তু নিরেট সত্য- “এই বর্তমান পৃথিবী এক বঞ্চিত পৃথিবী। সে এমন কিছু জ্ঞান, এমন কিছু বিদ্যা, এমন কিছু প্রযুক্তি সময়ের স্রোতধারায় হারিয়েছে যা পুনর্বার খুঁজে পাওয়া দুষ্করই বটে। এইসব রহস্যময় জ্ঞানের কোন কোনটা চিরতরে চলে গেছে কালের অতল গহ্বরে, মানুষের হাতের নাগালের বাহিরে। শুনলে অবাক হতে হয়, গা শিহরিত হয় এমন হাজারো তথ্য আছে আমাদের নীলরঙা এই পৃথিবীর মাঝে। তার কতটুকুই বা আমরা জানি!"

রহস্যময় জগতের অন্বেষণে শুরু হল এই পথচলা…
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২
২৮টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×