somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝখানে শুরু অজানায় শেষ (পর্ব-২)

২৮ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব-
Click This Link

...এখন ক্লাসে সবাই মনযোগ দিয়ে ম্যাডামের কথা শুনছে।লাবনী ম্যাডাম বায়োলজী বুঝাচ্ছেন কখনো হাত নেড়ে, কখনো মাথা দুলিয়ে আর কখনো চোখ ব্ড় বড় করে।একটা সবুজ নাকি হালকা টিয়া রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছেন আজকে উনি-সাথে সাদা ওড়না।সেই ওড়নার ঢেউ খেলানো ভাজ ঘেঁষে ঘেঁষে সায়েক এর চোখও সদ্য কৈশোর পার হওয়া কৌতূহলে বাঁক খাচ্ছে।সায়েক এর মনে হচ্ছে লাবনী ম্যাডাম লিপটন তাজা চায়ের মডেল যেন এখনই চা বাগানে ছুটোছুটি শুরু করবেন উনি। ম্যাডামের পড়ানোর সময় মাঝে মাঝেই সায়েক দু একটা ফাজলামো করে বসে, এটা ওটা কমেন্ট করে আর ক্লাস শুদ্ধ হেসে ওঠে।একবার সায়েক বলেই বসল -"ম্যাডাম চা খাবো "।মাডাম বললেন "মানে?" মানে বুঝলেন না? আপনি লিপটনের মডেল হয়েছেন আজকে তাই বললাম।"ম্যাডাম অবশ্য তাতে রেগে যান না বরং একটা অদ্ভুত রাগ প্রকাশক হাসি দেন।আসলে রাগ করতে গিয়েও তিনি আর ধরে রাখতে পারেন না।সায়েক এর এই দুষ্টুমি গুলো ম্যাডাম একটা কারনেই ক্ষমা সুন্দর দৃ্ষ্টিতে দেখেন আর তা হল সায়েক পড়াশুনাতে ভাল।প্রতিটা ক্লাস টেষ্টে সে সবার চাইতে বেশি নম্বর পায় ।

--------------------------------------------------------------------------------


অ্যানাটমি ক্লাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গ্যালারীর একদম উপরের সারির মাঝখানে বসেছে লাবনী।সিটটা যেন তার পারমানেন্ট হয়ে গেছে আবার যেতে হবে ক্লাস শেষে ডোম ঘরে।সেখানে ডোম মামা রেডি আছে।আজকে প্রথম সে ডিসেকশন করবে।এতদিন প্রফেসর করতেন আর ওরা দেখতো আজকেই লাবনী লাশগুলাকে কাটবে ফরমালিন মাখা হাতে।মেডিক্যালে গ্লাভস পড়তে দেয়া হয়না ; খালি হাতেই কাটতে হবে তো কি আর করা।লাশটা বেওয়ারিশ- মুখের দিকটা নেই তবে এটা একটা পুরুষ মানুষের লাশ।ওটার বুকের উপর হাতটা রাখতেই লাবনীর শরীরে একটা আচমকা ধাক্কা লাগলো--এই প্রথম কোন পুরুষ মানুষকে সে ছুঁয়েছে অথচ নিথর দেহটা তার অনুভূতি গুলোরমতই নিস্প্রাণ।কখনো লাবনী ছেলেদের সাথে সেভাবে মিশেনি ।খুলনাতে স্কুল কলেজ পাশ করেছে ডাবল স্টান্ড নিয়ে।বাবা মা কখনো ছেলে বন্ধু থাকাটা স্বাভাবিক ভাবে দেখেনি।হয়ত এজন্যই তার মনে একটা কামড় দিয়েছে ,তবে ক্লাস শুরুর আগে এসব ব্যাপারে অনেক লেকচার দেয়া হয়েছিল তার মনে আছে।বলা হয়েছিল মানুষকে একটা "দেহ" হিসেবে দেখতে ।কারন যখন লাশ কাটা ঘরে যাওয়া হয় তখন ছেলে মেয়ে সবার সামনেই লাশগুলোকে যারপরনাই অনাবৃ্তভাবেই রাখা হয়।এটা ভেবে ভেবে ঠিক ভাবেই পার করল সে প্রতিটি স্টেপ।

হাফ ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এসেই সে হলের পথে রওনা হল রিক্সা করে।কিছু দূর যেতেই চোখ পড়ল অপর পাশ থেকে আসা রিক্সাতে পরিচিত কেউ বসে আছে ।আর একটু সামনে আসতেই চোখে থাকা সানগ্লাসটা দেখে চিনতে বাকী রইল না এটা সায়েক। ম্যডামকে দেখে হাত নাড়ল আর রিক্সা থামিয়ে দিল।"আরে ম্যাডাম কি খবর ?আমি বঙ্গবাজারে যাই জিন্সের প্যন্ট কিনতে আপনি কই যান?" "এই তো বাসায় ফিরছি" -লাবনীর উত্তর।আপনি না বলেছেন এই দিকে আসলে আপনি আমাকে ঢাকা ভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখাবেন--এখন দেখান"।অনেক চেষ্টা করেও নাছোড়বান্দা সায়েককে ছাড়ানো গেল না ।সেদিন শহীদ মিনার থেকে টিএস সি হয়ে দোয়েল চত্তরে পাক খেয়ে খেয়ে কখনো কার্জন হল আর কখনো দূরে বুয়েট প্রাঙ্গন চষে দুটা অসম বয়সের ছেলে মেয়ে শেষে নিরব হোটেলে ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃ্থিবীকে পদ্যময় করার ব্রতে নিয়োজিত হল।খাওয়া দাওয়া শেষে বিলটা দিয়ে ম্যাডাম বললেন "এই ট্রিপটা তোমার গত পরীক্ষার পুরস্কার মনে কর।এখন বাসায় যাও রাত হয়ে যাবে নাহলে।"

বাসায় ফিরে সায়েক পড়তে বসল ।পড়ার টেবিলে বসলেই রাজ্যোর যাবতীয় চিন্তা মাথায় এসে ভর করে তার।বলা বাহুল্য আজকের রিক্সা ভ্রমন তার চিন্তারাজ্যোর মূল উপজীব্য বিষয়।কোচিং এর একটা বুকলেট বের করল সে শেলফ থেকে।একটা দুটা পাতা উল্টাতেই লাবনী ম্যাডামের ছবি দেখতে পেল।তখন আগের চশমাটা পড়া ম্যাডাম।ছবিটাকে সে আস্তে করে সমান করে ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে ।এবার ছবিটা তার একটা ছবির পাশে রেখে দেখতে থাকে।পর মুহূর্তেই মা দেখে ফেললে কি ভাববে তা মনে করে ছবিটাকে তার ড্রয়ের এর গোপন চিপায় রেখে দেয়।এটাই সেই গোপন যায়গা যেখানে সে ক্লাস সেভেন এইটে থাকতে পাতলা চটিসদৃ্শ্য বইগুলো লুকিয়ে রাখত।এবার নিশ্চিন্তে পড়াশুনা শুরু করল কিন্তু তবুও কেন জানি আজকের দিনটাই মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকল আর সে অপেক্ষা করতে থাকলো পরবর্তী মঙ্গলবারের যেদিন ম্যাডামের ক্লাস পাওয়া যাবে।

হলে ফিরে লাবনীও পড়াশুনাতে মনোযোগ দিল।আধা ঘন্টা পড়ার পর মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছিল তার তাই চা বানিয়ে খেতে গেল ।হঠাৎই হিহি করে হেসে উঠল সে।কি হয়েছে লাবনী হাসছিস ক্যন?? বান্ধবী জিজ্ঞেস করল।লিপটনের কথাটা বান্ধবীকে শুনালো সে।এবার সে কাপড় বদলিয়ে সেদিনের ড্রেসটা পরে এল গিয়ে ।সত্যি সত্যি ওরকমই লাগছে তাকে ।হাতে চা এর কাপটা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবারও হেসে দিল সে।আজকের সারা দিন কি না করেছে সায়েক ।কথায় কথায় চুটকি কাটা আর বান্দরামি করে জ্বালাতন করে খেয়েছে তাকে ।এসব মনে করতে করতে জুড়ে দিল সায়েক এর পাগলামির গল্প বান্ধবীর সাথে ।বান্ধবী হেসে হেসে বলল,- "দেখিস বাচ্চাটার প্রেমে পড়ে যাস না যেন...হিহিহি।"একটা অজানা অনুভূতি কেন যেন নাড়া দিয়ে উঠল লাবনীর মনে।সে চুপ হয়ে গেল কোন কথা বলল না আর....


চলবে....




সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৪
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×