দিনের সব ক্লান্তি মাথায় করে শেষ বিকেলে সূর্যটা যখন ডুবে যেত, পশ্চিম আকাশ তখন লাল আভায় ভরে যেত—এ যেন ডুবে যাওয়ার আগে খানিকটা জ্বলে উঠা । বালিয়াড়িতে বসে দেখতাম ডুবে যাওয়া সূর্য; আকাশের রাঙা আবীর যেন আমাকেও রাঙিয়ে যেত ।
আমার বেড়ে উঠা কক্সবাজারে । পাহাড়- সমুদ্র-বালিয়াড়ি; প্রকৃতি যেন উদার ভাবে দান করেছে কক্সবাজারকে । আমার স্কুল পালানো দিনগুলোর অমোঘ সাক্ষী হয়ে আছে সমুদ্র আর পাহাড়। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সাথে আমরাও হারিয়ে যেতাম বাধাহীন আনন্দে। সেই উচ্ছল দিনগুলো আজ আর নেই। অপরাজনীতির বলি হয়ে কক্সবাজারও পর্যটক শূন্য। এমন ভরা মৌসুমে এতটা পর্যটকহীন-- কোন পর্যটন স্পট কি হয়েছিলো কখনও ? যারা পর্যটনের সাথে জড়িত এরা জানেন কতটা লোকসান গুনতে হবে তাঁদের, বেকার থাকতে হবে কত জনকে । বাংলাদেশও হারাবে তাঁর আয় ও সুনাম ।
চলছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর । বাঙলার ঘরে ঘরে আজ আনন্দের বদলে আতঙ্ক । অবরোধে থমকে আছে স্বাভাবিক জন-জীবন । এ বছর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ ও নাকি হবে না! তারপরও পতাকার ঝুলি নিয়ে এগলি ওগলি ঘুরে বেড়ায় পতাকা ফেরিওয়ালা ।
বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ভাল কোন অর্জন থাকলে সেটা ক্রিকেট কে ঘিরে । নিরাপত্তাহীনতার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব -১৯ দল সিরিজ শেষ না করেই চলে গেল দেশে। বাংলাদেশ সম্পর্কে কি ধারণা নিয়ে গেল তাঁরা ? সামনে এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপ । এভাবে চলতে থাকলে নিশ্চিত বাতিল হয়ে যাবে সব আয়োজন । সাধারণত আমরা খেলার সুযোগ কম পাই, তারোপর যদি শুধু মাত্র রাজনীতিক কারণে এই সুযোগ হারায়; এর চেয়ে দুঃখের আর কি হতে পারে । দোহাই আপনাদের, আমাদের এই আবেগের জায়গাটা শেষ করে দিবেন না । তামিম, সাকিব, মুশফিকদের খেলতে দেখলে আমরা আপনাদের পিশাচী চেহারাটা কিছুক্ষণের জন্যে অন্তত ভুলে থাকি ।
দেশে যুদ্ধপরাধির বিচার চলছে । এ নিয়ে বিতর্ক ও বিভাজনেরও শেষ নেই । একসাথে পাঁচ বছর স্কুলে পড়ার পরও আমারই দুই বন্ধুর ফেসবুক স্ট্যাটাসেও ভিন্নতা । একজন লিখেছে, “কাদের মুল্লার মত এমন শহিদি মরণ আমাকেও দাও” অন্য জন লিখেছে, “শালা কাদের মুল্লার ফাঁসি দেখবো বলে জেগে আছি”। যখন একসাথে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতাম, এমন বিভাজন আমাদের কখনও হয়নি । এই বিভাজন আপনাদের সৃষ্টী । আপনাদের ফায়দা লুটার রাজনীতির জন্য চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন প্রহসন । এই প্রজন্ম যদি বিপথে যায়, আপনারা এবং আপনাদের বিকৃত ইতিহাসই এর জন্য দায়ী । ‘কলঙ্খ মোচনের’ বদৌলতে দেশ যদি আফগানিস্তানে পরিণত হয় এ দায়ও আপনাদেরই ।
আমরা আর কোন অবরোধ বা হরতাল চাই না । যে সংবিধান মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে না এমন মনগড়া সংবিধান আঁকড়ে ধরে থাকারও যুক্তি খুঁজে পাই না । চাই না দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হোক । আমারা চাই হেমন্তের বিকেলে অতিথি পাখি আসুক,পেট্রোল বোমা নয় চেনা শালিকটা প্রাণ খুলে ডেকে উঠুক, মমিনুলরা সেঞ্চুরি করুক আর কক্সবাজারটা ভরে যাক পর্যটকে । ঐ যে লাল আভাটা, ডুবন্ত সূর্যটা, রাঙিয়ে দেবে কি আমাদের ?