"তোমার ছেলে তো শুকনা ক্ষেতে নৌকা চালায়া দিছে"। পাশের ঘরে শ্বাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাগুলো সহজেই কানে আসে সাহারা'র।
চৌচালা টিনের ঘরের ভেতরে ৩টি রুম কাঠের পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। কথাগুলো কানে আসতেই মৃদুভাষী, শান্ত স্বভাবের সাহারা'র আনন্দে ঝলমল মুখটা মলিন হয়ে যায়। গতরাতে স্বামী ঢাকা থেকে এসেছে। বিয়ের সময় কিছু দিতে পারে নাই, তাই ঈদের বোনাস পেয়ে শখ করে বউ'র জন্য একটা পাতলা সোনার চেইন কিনে এনেছিল। তাই নিয়েই শ্বশুরের এত কথা।
খুব ধনী না হলেও অবস্হাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে সাহারা। দুধে আলতা গায়ের রং। লেখাপড়ায় ভাল, সদ্য মেট্রিক পাশ করেছে। চার বোন এক ভাই। আচমকা কিছু বুঝে উঠার আগেই বাবা মারা গেল, তিনজন বিবাহযোগ্যা মেয়ে নিয়ে মা দিশেহারা। এমন সময় বিয়ের প্রস্তাব আসে একই গ্রামের
মালেক পাটোয়ারীর মেজ ছেলে কামরুলের সাথে। ছেলেটি শিক্ষিত, সদালাপী। বিয়েটা তাই হুট করেই, বিনা আড়ম্বরে হয়ে যায়। মালেক পাটোয়ারীর ও ইচ্ছা ছিলনা টাকা পয়সা খরচ করার, বাপ মরা মেয়ে বলার ও কেউ নাই। এভাবেই একদিন কিশোরী সাহারা দুরুদুরু বুকে নতুন জীবনে পা রাখে। বিয়ের সাতিদন পরেই স্বামী ঢাকায় চলে যায়। আপাত নিরীহ, নির্ঝন্ঝাট মানুষটিকে তার ভালই লেগেছে। শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে ও মানুষ হিসাবে ভালই মনে হয়েছে, তবে মনে হয় একটু বেশী হিসেবী। সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েই সংসার শুরু করে সাহারা।
২.
"আব্বা, আপনার চা।" ফজরের নামাজ পড়ে জায়নামাজ ভাজ করছিল মালেক পাটোয়ারী।
" দেও মা দেও, কয়টা চা- মুড়ি খেয়ে ক্ষেতে যাই তাড়াতাড়ি। তোমার শ্বাশুড়ি কই?"
"আম্মা রান্নাঘরে, আমি পাঠায়ে দিতেছি।"
স্নিগ্ধ চোখে বউ'র চলে যাওয়া দেখলেন। শিক্ষিত, বড় ঘরের মেয়ে, অথচ একটুও অহংকার নাই। ছেলে বিয়ে করিয়ে কয়দিন একটু দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন, না জানি বউ কেমন হয়। অনেক খোঁজ খবর করেই সমন্ধ করেছে তারপরে ও মনটা একটু কাঁটা হয়েছিল, আজকালকার পোলাপানের উপর ভরসা করা মুশকিল। ছেলে বিয়ে করানোর ৬ মাস পার হয়ে গেছে। বউ টা আসলেই ভাল, এখন মনটা হালকা লাগছে। নাহলে হিসাব গন্ডগোল হয়ে যেত, অন্তত বড় ছেলের বউ'র মতো হলে সংসারে এতদিনে আগুন লেগে যেত।
(চলবে................)
এই প্রথম গল্প লেখার দুঃসাহস দেখাচ্ছি, বুঝতে পারছিনা আদৌ কিছু হচ্ছে কি না। আপনাদে র পরামর্শ আশা করছি...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০০৯ সকাল ৭:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






