somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহারাকাব্য-২

১৮ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কামরল তার দ্বিতীয় স্ত্রী'র বড় ছেলে।প্রথম স্ত্রী এক ছেলে রেখে মারা যাওয়ার পর কামরুলের মাকে বিয়ে করেছে।পরপর ৩ ছেলে হয়েছে, মালেক পাটোয়ারী খুব খুশী।জমিজমা ভালই আছে, ৪ছেলে আর তিনি, বাপ বেটা মিলে গৃহস্হি আরো বড় করবেন। কিন্তু কামরুলের মা বেঁকে বসলেন। ছেলেদের তিনি লেখাপড়া শেখাবেন, মেয়েমানুষের বুদ্ধি!!! অনেক রাগারাগি করেও লাভ হলোনা। কামরুলকে লজিং পাঠিয়ে দিতে হলো, ছেলেটি ভালোভাবে মেট্রিক পাশ করলো, তারপর ঢাকায় কি যেন টেকনোলোজি কলেজে ভর্তি হলো। সে অবশ্য স্টাইপেন্ড পেত, সেই টাকায় নিজের খরচ চালাতো, ছোট ভাই মাহমুদের পড়ার খরচ দিত। কামরুলের মা অবশ্য প্রথম ঘরের ছেলে আকবরকে ও পড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আকবরের পড়ায় মাথা নাই, সে বাবার সাথেই জমি দেখে, চাষাবাদ করে। এই ছেলেটার প্রতি মালেক পাটোয়ারীর অসীম দূর্বলতা, অনেক ধুমধাম করে ছেলে বিয়ে করিয়েছে। এর মধ্যেই ৪ ছেলেমেয়ের বাপ। বউটা মহা চালাক, তার আশকারা পেয়েই অবশ্য বেশী করে, তারপরেও কিছু বলতে পারেনা। ছেলেটা যদি কষ্ট পায়।

কামরুল চাকরি শুরু করেছে বছর পাঁচেক হলো। পরের ভাই মাহমুদ ইন্জিনিয়ারিং -এ ভর্তি হয়েছে। নিজের জন্য সামান্য খরচ আর ভাইকে টাকা পাঠিয়ে বাকী টাকা বাবার হাতে তুলে দিত। এই টাকাটা হাতছাড়া হয় কিনা, সেই চিন্তাটা ইদানিং মাথায় খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। আরেকটু শক্ত হতে হবে।এইবার ঢাকা থেকে আসার সময় আবার বউ'র জন্য সোনার চেইন নিয়া আসছে, ভাবলেই মুখটা তিতা হয়ে যায়।গয়না দিয়ে হয়টা কি? জমি বাড়লে ইজ্জত বাড়ে, এই কথা বোঝে কয়জন?

- কি ব্যাপার, ডাকছেন কেন? স্ত্রী ফজিলা বেগমের ডাকে চমক ভাঙে। রাগী গলায় এতক্ষনের আশংকা প্রকাশ করে--

- তোমার ছেলে কি টাকা পয়সা কিছু দিছে নাকি বউ'র গয়না দিয়াই এইবার ঈদ করা লাগব?

- ছেলেটা আসছে ২৪ ঘন্টাও হয় নাই, এখনই এমন অস্থির হইলেন কেন? সারাজীবন নিজের হিসাব'ই বুঝলেন।

- পোলাদের লেখাপড়া শিখায়া সেয়ানা বানাইছ, এখন যা খেলা দেখাইব, তাই দেখন লাগব। গজগজ করতে করতে মাঠের দিকে রওনা দিলেন পাটোয়ারী। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের দিকে গেলেন ফজিলা বেগম।

কতদিন পর ছেলেটা আসল, মেসে থাকে কি খায় না খায়। ভালমন্দ কিছু রান্না করা দরকার, কত কাজ বাকী, বড় বউটা এখনও উঠলনা, এমন চালাক মেয়ে কিন্তু কিছুই বলা যাবেনা, বললেই অশান্তি। সাহারার উপর কাজের চাপটা বেশীই পড়ে যাচ্ছে। বউটার চোখদুটো আজ একটু ফোলা ফোলা লাগছে, কি হয়েছে কিছুই বলেনা মুখ ফুটে। মাঝে মাঝে একটু অভিমানী, অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।কি আর করা, বউয়ের চাহনি এত গ্রাহ্য করতে গেলে তো আর সংসার চলেনা।পরের ঘরে আসছে, কষ্ট করেই ভাত খাওয়া লাগব, এইটাই নিয়ম, নিয়তি।

৩.

- তুমি উঠবানা, অনেক বেলা হয়ে গেছে

স্ত্রীর ডাকে আড়মোড়া ভেঙে চোখ খোলে কামরুল।
- কয়টা বাজে?

- আটটা, আম্মা তোমার পছন্দের নাস্তা বানাইছে, চালের আটার রুটি আর কবুতরের মাংস। তাড়াতাড়ি ওঠ, নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

- বাবা কই?

-আব্বা ক্ষেতে চলে গেছে।

- তোমার মুখটা কেমন যেন শুকনা লাগতেছে, কি হইছে?

- কিছু হয় নাই, অনেকদিন পরে দেখছ সেজন্য মনে হয়। এখন ওঠ, আম্মা অপেক্ষা করতেছে নাস্তা নিয়ে। কলপাড়ে বালতিতে পানি তুলে রাখছি, হাতমুখ ধুয়ে আস তাড়াতাড়ি।

-----
মা, আজ দুপুরে কি রান্না করবা? রুটি মুখে দিতে দিতে বলে কামরুল

- তুই কি খাইতে চাস্‌ বাবা?

- বেগুন পুড়ে ভর্তা বানাও। পুকুরে মাছ আছে কেমন, মা?

- আছে মনে হয় ভালই, তুই আসবি শুনে মামুন মাছ ধরছে গতকাল। বড় বড় কই আর শিং, দাদা'রে ভাল কইরা রাইন্ধা দিতে বলছে।

- কাইলকা সারা সন্ধ্যা আমার পিছপিছ্‌ ঘুরছে, ওরে নাকি এইবার ঢাকা নিয়া যাইতেই হইব, ওর সব বন্ধুরাই গেছে খালি ও একাই নাকি বাদ আছে।

- কিসের ওর সব বন্ধুরা গেছে, দুনিয়ার চাপাবাজ হইছে তোর ভাই, বানায়া বানায়া কত কথা যে কয় আর টো টো কোম্পানির ম্যানেজার, পড়ার কথা শুনলেই আর ভাল্লাগেনা লাটসাহেবের।

- এইবার সিক্সে উঠল, এখন থেকেই তো ভাল কইরা পড়তে হইব।

- সবার ছোট ভাই, দাদারা ঢাকা থাকে, সেই আহ্লাদেই শেষ, তুই এইবার শাসন কইরা দিয়া যাইস, তোর বাপের তো এগুলা নিয়া চিন্তা নাই।

- আচ্ছা দেখি।


দুপুরে খাওয়া শেষ করে সব গুছিয়ে রাখতেই আছরের ওয়াক্ত হয়ে গেল। কলপাড়ে ওজু করতে গিয়ে মাথাটা কেমন যেন করে উঠল সাহারার, কোনমতে কলের হাতল ধরে বসে পড়ল। কদিন ধরে শরীরটা ভাল যাচ্ছেনা। অজানা আনন্দ আর আশংকায় বুক কাঁপে।আজ রাতে কামরুল'কে বলব, ভাবতে ভাবতে ঘরের দিকে পা বাড়ায় ....... (চলবে..)
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×