আমি ব্যাক্তিগত ভাবে যুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল কিন্তু এই যুক্তির উপরই বা কতটুকু নির্ভর করা যায়। যে যুক্তির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত সে তো আজ এক কথা আবার কাল আর-এক কথা বলে বসে থাকে। অর্থৎ প্রমাণ অনেক ভাবেই করা যায়।
যুক্তি প্রমাণিত হবার পরও তা ভুল হতে পারে, একথা ভাবলে যারা কট্টরপন্থী বা মৌলবাদী তাদেরকে দোশ দেওয়া যায় কি? আমি জানি না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর জীন্নার (সাংঘাতিক সেকুলার এবং যুক্তিবাদী মানুষ ছিলেন বলে আমি মনে করি যদিও দ্বি-জাতি............) কাছে কেউ মৌলবাদীদের সম্পর্কে বিষাদগার করলে তিনি বলেছিলে, দেখুন কট্টর পন্থীদের সম্পর্কে বাজে কথা বলবেন না। আমি কট্টর না হলে পাকিস্তানের জন্ম হত না। (পাকিস্তানের জন্ম আদৌ প্রয়োজন ছিল কি না এ-নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, আমার ফোকাস হল পাকিস্তানের সফল পরিণতির জন্য কট্টরতার প্রয়োজন ছিল।)
অযুক্তি/মৌলবাদের প েসাফাই গেয়ে জর্জ বার্নাড শ বলেছেন------ "যুক্তিবাদী-লোক নিজেকে বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় কিন্ত অযোক্তি লোক বিশ্বকে তার সাথে খাপ খওয়ানোর চেষ্টা করে। সুতরাং সকল প্রকার প্রগতি অযৌক্তিক লোকের উপর নির্ভরশীল।"
আমার লেখা পড়ে হয়ত অনেকে ভাবছেন, এ ছেলেটা সবসময় সামপ্রদায়ীকতা বিরোধী লেখা লিখে আজ হঠাৎ কট্টরপন্থীদের জন্য কচকচ করছে কেন? হ্যাঁ, খুবই স্বাভাবিক প্রশ্ন।
মৌলবাদ ঠেকাতে ধর্মের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রয়োজন আছে কি না?
এ ধরনের প্রশ্নে পজেটিভ উত্তরদাতার সংখ্যা নেহাতই কম নয়। আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলিম, খৃষ্টান ও সংখ্যলঘুরা কেন সরকারের পৃষ্টপোষকতা পাবে, এনিয়ে অনেকের বড় কষ্ট হয়। তাদের কথা ধর্ম থেকে রাষ্ট্র আলাদা হবে এবং সরকার সকল ধর্মকে দমন করবে কেননা সেকুলার রাষ্ট্রে ধর্ম হবে কেবল মানুষের ব্যাক্তিগত ব্যাপারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ এই ব্যাক্তিগত ব্যাপারগুলো নিয়েই সমাজ। আর সেই ছোট ছোট সামাজিক অংশগুলো নিয়েই যে সমগ্র রাষ্ট্র গড়ে ওঠে এ কথা না বোঝার মত বোকা বলে ঐসকল শান্তিকামী লোকদের মনে করতে সত্যিই আমার কষ্ট হয়, যারা শান্তির কথা বলে সকল মতের সহাবস্থানকে অস্বীকার করেন।
যারা সকল মত ও পথকে অস্বীকার করে, এদের ধ্বংস নিশ্চিত করে রাষ্ট্রে সেকুলার ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাদের বলি- পৃথিবীতে আজপর্যন্ত অধিকাংশ যুদ্ধই সংঘটিত হয়েছে ধর্ম ও শান্তির নামে, প্রকৃত অর্থে কোন যুদ্ধই শান্তি নয় বরং অশান্তি আর হিংসার আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে।
আমার সেকুলার ধর্ম শব্দটির উপর হয়ত অনেকেরই চোখ পড়েছে। সেকুলারিজম আবার ধর্ম হয় কি করে?
ধর্ম অর্থ শুধু ইসলাম, সনাতন(হিন্দু) বা খ্রিষ্টান নয়। ধর্ম অর্থ বৈশিষ্ট্য। যেমন- লোহার ধর্ম এটা মজবুত,আগুনে পুঁড়লে গলে যায়, পিটিয়ে চ্যাপ্টা করা যায় আবার পানির ধর্ম এর নির্দিষ্ট রং নেই, ওজন আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক তেমনি রাষ্ট্র যে মতবাদে বিশ্বাসীই হোকনা কেন সেটাই তার ধর্ম। সেটা হতেপারে সেকুলারিজম বা সমাজতন্ত্র অথবা অন্যকিছু।
রাষ্ট্রব্যাবস্থা যেটাই হোক, ইসলাম ধর্মের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, হিন্দু ধর্মের রাষ্ট্র ব্যবস্থা অথবা সেকুলার ধর্মের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ঐ রাষ্ট্র ব্যবস্থাই সবচেয়ে সফল হতে পেরেছে যেখানে সহনশীলতার চর্চা বেশী এবং সকল ধর্ম ও মতের সহাবস্থান নিশ্চিত হয়েছে (আমি সমাজতন্ত্র সম্পর্কে খুব বেশি না জানলেও মনে করি এর পতনের পেছনে অন্যান্য কারণের সাথে এই সহনশীলতার অভাব বিশেষভাবে দায়ী, সেখানে অন্য সকল দল মত নিষিদ্ধ ছিল যদিও গর্ভাচেভ গ্লাসনস্ত চালু করেছিলেন একেবারে শেষ পর্যায়ে যা ঐ সময়ে উল্টো বুমেড়াং হয়েছিল)।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



