ইহুদীদের প্রবর্তিত বর্তমান ব্যাংকিং কনসেপ্টের মূলে কুঠারাঘাত করে মানুষের সৃষ্টিশীলতা মূল্যায়নের যে নতুন পথ যিনি করে দিলেন তার নাম ড: মুহাম্মদ ইউনুস। তেলে মাথায় তেল দেওয়াই ব্যাংকিং সিস্টেমের চিরাচরিত কাজ। ড: ইউনুস ক্ষূদ্র-ঋণ কনসেপ্টের মাধ্যমে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন শুধু পয়সাওয়ালাদের জন্য নয় গরীবের জন্যেও হতে পারে ব্যাংক।
হঁ্যা; ড: ইউনুসকে নিয়ে নেগেটিভ সমালোচনা কম নয়, সেসব সমালোচনার যথেষ্ট কারণও ছিল। বিশেষ করে অতিরিক্ত সুদ ঐসকল সমালোচনার উৎস বা কেন্দ্রবিন্দু। সুদ ইসলামী জীবন ব্যাবস্থায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশের মূদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ত বাড়াতে এবং উৎপাদনশীলতা কমাতে সুদ এক শক্তিশালী হাতিয়ার। শুধু ইসলামী জীবন ব্যাবস্থা নয়, সুদ যে সমাজ ব্যাবস্থায় ঢুকে পড়ুকনা কেন তা ধনী ও গরীবের ব্যাবধান বাড়িয়ে দেবেই। আর এভাবেই স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সুদ নিয়ে ড: ইউনুসদের এনজিওগুলো যেমন দ্রুত বড়ো হয়েছে তেমনি দরিদ্র মানুষগুলো হত দরিদ্রতে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু আমাদের ভুলেগেলে চলবেনা সুদ ব্যবস্থার প্রবর্তন ড: ইউনুস করেননি বরং তার কনসেপ্ট দরিদ্র মানুষকে ব্যাংকিং এর আওতায় নিয়ে আসা; জীবন সংগ্রামের পরিক্ষার মুখোমুখি করা। এতে কিছুলোক সফল হয়নি তাকিন্তু নয় হয়ত তাদের সংখ্যা একেবারেই কম। শতকরা দশজন লোকও যদি সফল হয় তাকি নিতান্তই সামান্য পাওয়া এ সমাজের জন্য। কেউ বলবেন যে পরিক্ষায় 90 জন ফেল করে সে পরিক্ষার দরকার কি? পরিক্ষায় অংশগ্রহন না করলে তার জন্য পাস-ফেল ব্যাপারগুলোই অবান্তর হত। কিন্তু একথা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন মূর্খহয়ে বসে থাকার চেয়ে পরিক্ষা দিয়ে ফেল করা অনেক ভাল।
এনজিও নামক স্কুলগুলোতে ড: ইউনুসরা শিক্ষক, মানব সমাজ নামক পরিক্ষাকেন্দ্রে ব্যার্থ/দরিদ্র মানুষগুলো পরিক্ষার্থী। সবমিলিয়ে একটি পরিক্ষা ব্যবস্থার আয়োজন করা গিয়েছে। এখন সময় এসেছে এর গুণগত মান বাড়ানোর। পরিক্ষার পাশের হার বাড়াতে হবে। নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, হবে ( যেমন-সুদের হার ক্রমে কমিয়ে আনা, সমস্যাগুলোর কারণ অনুসন্ধান, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ইত্যাদি)।
কোন জন্মদান প্রক্রিয়া মোটেও সহজ নয়। তিব্র-যন্ত্রণাদায়ক, জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কোন কিছু জন্ম লাভ করে। বাংলাদেশ যেহেতু ক্ষূদ্র-ঋণ/গ্রামীন-ঋণ ব্যবস্থার জন্মভূমি তাই বাংলাদেশকেও একটি কষ্টকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এখন ক্ষূদ্র-ঋণ নামক যে শিশুটির জন্ম হল তার সুস্থ বেড়েওঠা নিশ্চিত করতে হবে। একদিন বড়ো হবে শিশুটি; অপেক্ষার প্রহর গুনছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



