১৯৯৮ এর শেষের দিক। ভার্সিটিতে নতুন ঢুকেছি। ক্যাম্পাসের তখন সবই খুব সুন্দর আর স্নিগ্ধ মনে হতো। গাছ খুব ভালোবাসি, তাই আলাদা দুর্লভ গাছের একটা বাগান দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। একটি গাছের নাম পান্হপাদপ। সেই গাছের গোড়া থেকে উপর পর্যন্তকলাগাছের মতো ডাল ছড়ানো। ডাল ধরে টান দিলেই গড়িয়ে জল পড়ত। সেই টলটলে জল খুব বিশুদ্ধ। খাওয়াও যায়! বাকীদের চক্ষু বাঁচিয়ে মাঝে মাঝে এই ছেলেমানুষিটা খুবই ইনজয় করতাম।
দুসপ্তাহ পরেই শুরু হয়ে গেলো ইলেক্টিভ কোর্স। হয় ম্যাথ নইলে বোটানী। আবার কী? ঢুকে পড়লাম বোটানীতে। ইন্টার পর্যন্ত বয়েজ স্কুলে পড়ে আসা; তাই নতুন কম্বাইন্ড ক্লাসে ঢুকে একটু অস্বস্তিতেই পড়ে গেলাম।
ক্লাসের অর্ধেকই মেয়ে। মেইন কোর্সের মেয়েরা (আঁতেল কোর্স) আহামরি না হলেও বোটানীতে ঢুকেতো চক্ষু চড়কগাছ! বেশীরভাগই দেখতে শুনতে বেশ ভালো!
ঐ ডিপার্টমেন্টেই পরিচয় হলো জেলীর সাথে! শান্ত ও বেশ মিষ্টি স্বভাবের। ছিপছিপে গড়ন। আহমরি ফিগার না হলেও হাসিটা ছিলো অদ্ভুত সুন্দর আর ডায়াবেটিস রকমের মিষ্টি।
তখন হিন্দী একটা গান খুব জনপ্রিয় হয়ে গেলো,"হো গায়ি হ্যায় মোহাব্বাৎ তুমসে"। বৃষ্টির মাঝে নৌকায় শুটেড। খুবই রোমান্টিক। :> একদিন ডিপার্টমেন্টের সামনে সবাই আড্ডা দিচ্ছি, তো হঠাৎ জেলী আমার নামের পেছনে অতিরিক্ত একটা নাম জুড়ে সম্বোধন করল। কিছুই না বুঝে ওর দিকে তাকালাম। ও বলল এই গানের কথা। এই গান সংশ্লিষ্ট একজনের সাথে নাকি আমার নামের হুবহু মিল। লাস্ট নেমটা না মিলায় ও নিজেই কষ্ট করে জুড়ে নিয়েছে! ও জানেনা যে এটা আসলে আমারও খুব প্রিয় একটা গান! গানটা মনে পড়ার পর আমি কেনো যেনো লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম! :#> খুব স্বাভাবিক ঘটনা কিন্তু বিড়ম্বনায় পরে গেলাম। তাই শুধু একটু দাঁত কেলালাম।
এর কিছুদিন পরের ঘটনা। ডিপার্টমেন্টের সামনে দাড়িয়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছি। জেলী তখনও আসে নাই। সবাই নিজেদেরকে নিয়ে অযথা গল্প শুরু করলাম। বাংগালী কাজ না থাকলে যা করে আর কি! কথা প্রসন্গে জেলীর কথা উঠলো। আমি কি মনে করে যেনো টপ করে বলে ফেললাম যে, মানুষ কেনো যে খাবারের নামে নাম রাখে তাই বুঝি না। শুনলেই মনে হয়, যেনো ওরে টপ করে মুখে পুরে খেয়ে ফেলি। :#> হঠাৎ বুঝলাম যে সবার চোখ কেনো যেনো আমার দুই হাত পেছনে ফোকাসড। পিছনে ফিরে দেখি.........কোথ্থেকে যেনো স্বয়ং জেলী সশরীরে হাজির!
ক্লাস শেষ হয়ে আসায় তারপর ওর সাথে কালে ভদ্রে দেখা হতো। হ্য়তো ওর প্রতি ভালোবাসা ছিলো না, কিন্তু ভালো লাগা অবশ্যই কাজ করতো। আজ এতদিন পরে মনে হয় যে, ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে খুব সুক্ষ একটা লাইন থাকে। লাইনটা ক্রস করতে চাই ছোট্ট একটু প্রয়াস! ভালোবাসাতো আর আকাশ থেকে ধপাস করে পড়ে না! কিন্তু কখনো তাকে ঐ ভালোলাগাটুকুও বলা হয় নাই।
ইয়ার ফাইনাল শেষ করে ২য়, ৩য় বর্ষ শেষ করে লাস্ট ইয়ারে চলে এলাম। এরমধ্যে আর ওর সাথে দেখা হয় নাই। মাস্টার্সের ক্লাশ শুরু হওয়ার পর হঠাৎ একদিন ওকে দেখলাম বোটানীর সামনে। ঠিক আগের মতোই আছে। সেই মিষ্টি হাসি! অনেকদিন পরে দেখা, হয়তো ভুলে গেছে মনে করে আর থামলাম না। চিনতে না পারলে মান ইজ্জত দুটাই পাংচার। কিন্তু একটু এগিয়েই আড়চোখে বুঝতে পারলাম যে সে ঠিকই চিনতে পেরেছিলো!
পরিশেষে শেষ করবো ওর পছন্দের ঐ "হো গায়ি হ্যায় মোহাব্বাৎ তুমসে" গানটা দিয়ে,
গানটা কিন্তু বেশ সুন্দর, তাই না!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




