আজকে আমাদের স্কুল দিবস। ৫ জুলাই এইদিনেই একটি নিষ্পাপ শিশুর পথ চলা শুরু হয়। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শ্রদ্ধেয় আমজাদ স্যার এই স্বপ্নটা বুনেছিলেন তারো অনেক আগে। এইদিনেই তাঁর মহৎ উদ্যোগ পৃথিবীর মুখ দেখে। শিশুটি এখন হাটতে শিখেছে, শত বিড়ম্বনা আর কষ্ট বুক পেতে নিয়ে চলতে শিখেছে, ভালবাসতে শিখেছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেকে অনন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। আজ এই স্কুলের সন্তানরাই দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চশিক্ষার দুয়ারে নিজের মহিমা প্রদর্শন ও স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞবদ্ধ ও অঙ্গিকারবদ্ধ।
/
অতীত ধোকা না দিলে, যতদূর মনে পড়ছে, আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। গ্রামের আটদশটা ছেলের চাইতে একটু ভিন্ন ছিল জাহিদের জীবন। ঘুম থেকে উঠেই স্কুলের নাম করে চলে যেতাম ক্যারামের জুয়ার আসরে। সকাল থেকে রাত অবধি চলতো ক্রিকেট, ফুটবল আর বাধ্যতামূলক ক্যারাম। ৩ খেলাতেই ভাড়া খেলতে ছুটে যেতাম গ্রামসহ বিভিন্ন থানায়। ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষায় খারাপ করতে শুরু করি তখন। টাকার নেশা কেঁচোর মত পেয়ে বসেছিল আমায়। ক্রমে ক্রমে নিজেকে কৃষ্ণ গহবরে হারিয়ে পাগলের মত খুঁজতে লাগলাম। “আমি আর সেই জাহিদ নেই”- এই চিন্তাটা সারাদিন কুড়ে কুড়ে খেত আমায়। আত্মসম্মানহীনতায় ভুঁগতে থাকা এই বলদটির স্কুল পরিবর্তন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছিল। কোথায় পড়ি কোথায় মাথা গুজি সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম আমি।
/
ভাগ্যের অলৌকিক ছোঁয়ায় এই স্কুলে আশ্রয় মিলেছিল দিশেহারা জাহিদের। সেদিন ছিল স্কুলের ফর্ম ও পরীক্ষা দেয়ার শেষ দিন। সম্ভবত শুক্রবার সকাল ৯টা। ঐদিনেই পরীক্ষা দিতে হবে। তড়ি ঘড়ি করে ফর্ম কিনে ছবি তুলে পরীক্ষা দিলাম। তাও ১৫ মিনিট দেরী করে এসে। বিধাতার ইচ্ছাটাও ছিল হয়তো এখানেই পড়বো। সেই যে দুষ্টু আর জুয়ারি ছেলেটা ঢুকলো, সময়ের পরীক্রমায় অন্য এক মানুষ হয়ে বের হলো। যার অনেক বড় অবদান এই স্কুলের। স্কুলের পানি, মাটি, আলো, বাতাস অন্য এক জাহিদের জন্ম দিয়েছে। বলতে পারেন দ্বিতীয় জন্ম।
/
আজ স্কুল ১৫ বছরের টগবগে তরুণ। ‘তুই বড় হও অনেক’, বেঁচে থাক কোটি বছর। হাজার-হাজার, লাখ-লাখ মানুষ স্বমিহমায় বের হোক তোর কল্যাণে। যে স্বপ্নটা স্যার শুরু করেছেন তাঁর যথার্থ রূপায়ন হোক তোর সন্তানদের সাধনায়। এই কামনায় শেষ করছি..........