somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমযানে শবে কদর

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার অগ্নি পরীক্ষার ভিতর দিয়ে মানুষের জীবনে পবিত্র মাস রমজান। মুলত এ উপলব্ধি থেকেই সত্যিকার সংযম ও মহানুভবের শিক্ষা পায় মানুষ। অর্জন করে রহমত, বরকত ও মহাকল্যাণ। আল্লাহ রব্বুল আলামিন এ পবিত্র রমযান মাসে একটি মহা কল্যাণের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ, মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনী প্রদান করেছেন। সে রজনী হাজার মাস অপেক্ষাও উৎকৃষ্টতর।

এ রজনীকে শবে কদর বলে। এ রজনীতেই আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির পরিপূর্ণ জীবন বিধান সর্বশেষ নির্দেশনা গ্রন্থ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেছেন।

“শবে কদর” ফার্সি শব্দ। এর আরবী রুপ হল “লাইলাতুল কদর” যার অর্থ ভাগ্য রজনী, সম্মানীয় রজনী, মর্যাদার রাত্রি, মহাকল্যাণের রাত্রি।
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি উহা(কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। (হে রাসুল) তুমি কি জান কদরের রাত্রি কী? কদরের রাত্রি হলো সহস্র রাত্রি থেকেও উত্তম। উহাতে (রাত্রিতে) রূহ(জিবরাইল (আঃ) ও সাধারণ ফেরেশতাগণ) তাঁদের প্রতিপালকের আদেশে প্রতেক কাজের জন্য অবতীর্ণ হয়। উহা প্রভাত পর্যন্ত শান্তিময়।” (সূরা আল-কদর, আয়াতঃ১-৫)।

ইবনে আবী হাতেম(রাঃ) এর রেওয়ায়েত আছে, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) একদা মদীনার মসজিদে ইসলামের বীর সেনানীদের সামনে আলোচনা প্রসঙ্গে ইজরাইল বংশের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বলেন এই সৈনিক আল্লাহার দীন প্রতিষ্ঠার জন্য এক হাজার বছর অবধি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জিহাদের জন্য প্রস্তুত থাকতেন। তিনি দিনে যুদ্ধের জন্য বের হতেন আর রাতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন।

এ ঘটনায় উপস্থিত সেনানী সাহাবীগণ বিস্মিত হন। এমতবস্তায় হজরাত জিবরাইল(আঃ) উপস্থিত হয়ে বলেন, হে মুহাম্মাদ (সাঃ)! আপনার উম্মাত ইসরাইল বংশের মুজাহিদদের কথা শুনে এত বিস্ময় প্রকাশ করছে অথচ এর চেয়েও আল্লাহ তায়ালা আপনার উম্মাতের জন্য উত্তম জিনিষ দান করেছেন, আর তা হলো শবে কদরের রাত্রি। এ সময়ই সূরা আল-কদর অবতীর্ণ হয়। যার ফলে মহানবী(সাঃ) উপস্থিত সাহাবাগন অতিশয় আনন্দ বোধ করেন।(মাজহারী)।

বছরে প্রতিবছর যতটুকু কুরআনের অবতরণ অবধারিত ছিল তততুকু শবে কদরে দুনিয়ার আকাশে নাযিল করা হয়।(কুরতবী)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কুরআন অবতরনের রাত্রি শবে কদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা স্থির করা হয় যা পরবর্তী শবে কদর পর্যন্ত এক বছর সংঘটিত হবে। অর্থাৎ এ বছর কারা জন্ম গ্রহণ করবে, কে কে মারা যাবে, কাকে কী পরিমাণ রিজিক দেয়া হবে, এ বছর বৃষ্টি কি পরিমাণ হবে তা সংশ্লিষ্ট ফিরিস্তাগণের কাছে অর্পণ করা হয়। একাজ চারজন ফিরিশতার তত্ত্বাবধানে দেয়া হয়। তারা হলেন- ইসরাফিল, মিকাইল, আজরাইল, জিবরাঈল (আঃ)।

শবে কদর কোন রাত্রি ও সম্পর্কে মহানবী(সাঃ) নির্দিষ্ট করে দেননি। এজন্য পরবর্তীতে ও তারিখ হয়নি। শবে কদর রমযানের শেষ ১০ দিনের মধ্যে আছে। প্রত্যেক রমযানে তা পরিবর্তিত হয়।(মাজহারী)।
শবে কদরে সূর্যাস্তের পরই সমস্ত ফিরিস্তাগণ হজরত জিব্রাইল(আঃ) এর নেতৃত্বে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। প্রত্যেক স্থানে সিজদা করেন। তারা মুমিন নারী-পুরুষের জন্য দোয়ায় লিপ্ত হন। কিন্তু গিজ্জা, মন্দির, প্রতিমা ও অগ্নিপুজার স্থান, ময়লার স্থুপ, যে গৃহে নেশাখোর বাদ্যযন্ত্র ও পুতুল থাকে সেসব জায়গা থেকে তারা দূরে থাকেন।

হজরত জিবরাঈল (আঃ) প্রতিটি ইমানদারদের সাথে করমর্দন করেন। শরীর রোমাঞ্চিত হাওয়া হৃদয় বিগলিত হাওয়া নয়ণাশ্রু গড়িয়ে পরা ইত্যাদি তার করমর্দনের প্রতীক। যারা শবে কদরে ইবাদতে মশগুল থাকেন রমযানের রোযাগুলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে তাদের নাম-ঠিকানাসহ ফিরিশতারা ে রাতে সিদরাতুল মুনতাহার বৃক্ষের কাছে ব্যক্ত করেন। এরপর জান্নাতের উক্ত ঠিকানায় বৃক্ষটি প্রদান করেন। পরে জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ অতিসত্বর তাদেরকে আমার নিকট পৌঁছে দাও। এ রাতে সারারাত জেগে থেকে নামাজের মাধ্যমে, কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিনয় ও নম্রতার সাথে অস্রুসজল চোখে ক্ষমা প্রার্থনা করাই মূল কাজ।
এ রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, আমরা যদি সেই কুরআনকে ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, ব্যবসা, অর্থ, আদালাত, শিক্ষা, চিকিৎসা, আফিস, প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কাজে অনুকরণ করতে পারি তাহলে আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি রাত্রিই হতে পারে শবে কদর।

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ঠ্য

লাইলাতুল কদর বা মহামন্মিত রজনী পবিত্র মাহে রমযানকে বহুগুণে সমৃদ্ধ করেছে। এ রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ রাতের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কল্পে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন মাজীদে “সূরাতুল কাদর” নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন।

একবার নবী করীম (সাঃ)-কে স্বপ্নে পূর্বকার লোকেদের আয়ু দেখানো হল। এর দ্বারা তিনি বুঝলেন তাঁর উম্মতের আয়ু খুবই কম, সুতরাং এর সারা জীবন কাজ করলেও ওদের আমলের নিকট পৌঁছতে পারবে না। তখন আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদর দান করেন, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।

পবিত্র মাহে রমযানের কদরের রাতে আল-কুরাআনুল কারীম অবতীর্ণ হওয়ায় রমযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাসটি সমৃদ্ধ হয়েছে।

লাইলাতুল কদর কেবলমাত্র উম্মাতে মুহাম্মাদীয়াকেই প্রদান করা হয়েছে। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহানবী(সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় ইবাদত করল, তাঁর অতীতের গুনাহ সকল মাফ করে দেয়া হয়।”

রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হয়ে থাকে। এ জন্য নবী(সাঃ) শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদরের অনুসন্ধানের জন্য বলেছেন। যেমন, নবী(সাঃ) বলেন, “তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর।” তিনি রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেনঃ “তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ কর।”

রমাযান মাসে নবী(সাঃ) আল্লাহর ইবাদতের জন্য যত পরিশ্রম করতেন, অন্য কোন মাসে তেমন পরিশ্রম করতেন না। যখন কোন একটি দল আল্লাহর ঘর-সমূহের মধ্যে কোন একটি ঘরে অর্থাৎ মসজিদ বা মাদ্রাসায় একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং পরস্পর উহার আলচনা করতে থাকে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের উপর শান্তি ও স্বস্তি অবতীর্ণ হতে থাকে এবং আল্লাহর রহমত তাঁদের ঢেকে ফেলে, ফিরিশতাগণ তাঁদের ঘিরে ফেলেন এবং আল্লাহ তাঁদের তাঁর নিকট যারা আছেন অর্থাৎ ফিরিশতাগনের নিকট তাঁদের কথা উল্লেখ করেন। আর যার আমাল তাকে পিছিয়ে দেয় তাঁর বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।

লাইলাতুল কদরে বিশেষ দোয়া আছে। আয়েশা(রাঃ) বলেনঃ একবার আমি নবী(সাঃ)-কে জিজ্ঞাস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল(সাঃ) আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটা কদরের, তাহলে ওই রাতে আমি কী বলব? তিনি বললেন, এ দোয়া বলবে- “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” “লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম।”(সূরা কদর-৩)।

“নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপন বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।”(সূরা দুখান-৩,৪)। “এতে ফিরিশতাগণ এবং রূহ তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে অবতরণ করেন সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। শান্তিময়, নিরাপত্তাপূর্ণ সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।”(সূরা কদর-৪,৫)। “যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় ইবাদত করল, তাঁর অতীতের গুনাহ সকল মাফ করে দেয়া হয়।”(বুখারী-৩৫,১৮০২,১৯৯, মুসলিম-৭৬০)। হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমার আঁধার আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাস, কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।(তিরমিজী-৩৫১৩, ইবনে মাজহা-৩৮৫০)।

মূলত এই রাত্রি হল বেশী বেশী ইবাদতের রাত, তাই নফল নামায, কিয়ামুল লাইল, বেশী বেশী তাসবীহ পাঠ, তাওবা ও এস্তেগফার গুনাহের ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া, এবং কুরাআন তেলাওয়াত করা উচিত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×