ঘটনাটা প্রথম যখন শুনি তখন আমি অফিসের বাইরে। সন্ধ্যায় অফিসে ফিরছি, শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা তার স্বামীর হাতে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। পাষন্ড স্বামীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে রুমানা ম্যাডাম দুই চোখ হারাতে বসেছেন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ল্যাব এইড হাসপাতালে।
অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে এমন ঘটনার সঙ্গে আমরা পরিচিত। রাজধানীতে প্রতিদিন খুন, আÍহত্যা, জখম ইত্যাদি নানারকম ঘটনার সঙ্গেই আমাদের বসবাস। দিন দিন আমাদের অনুভূতি ভোতা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই খবরটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি যেন আমার অনুভূতি ফিরে পেলাম। এমনও হয় নাকি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককেও তার স্বামীর হাতে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়? কথাটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
সন্ধ্যায় অফিসে গিয়ে শুনলাম আমাদের এক সহকর্মী ঘটনাস্থল কভার করতে গিয়েছেন। রাতে তার কাছ থেকে ও পরদিন পত্রিকা পড়ে যা জানলাম তাতে আমি রীতিমতো স্তম্ভিত, বাকরুদ্ধ হওয়ার মতো অবস্থা।
রুমানা ম্যাডাম। উচ্চ শিক্ষিত নারী। তার স্বামীও উচ্চ শিক্ষিত, বুয়েট থেকে পাশ করেছেন। সেই বুয়েট থেকে পাশ করা একজন মানুষ, আমরা যাদের মেধাবী বলে জানি, তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্ত্রীকে এমন নির্মমভাবে নির্যাতন করতে পারেন, আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমাদের সমাজ আসলে কতটা অন্ধকারে পতিত হচ্ছে এই ঘটনা তারই প্রতিফলন।
অপরাধ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা, এমন ঘটনা বেশিরভাগই ঘটে অল্প শিক্ষিতদের মধ্যে। উচ্চ শিক্ষিতরা যেটা করেন, তা হলো স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে বনাবনি না হলে আলাদা হয়ে যান, সেটা এক ধরনের সমাধান। শিক্ষিত ব্যক্তিরা স্ত্রীকে নির্যাতন করেন এমন ঘটনা কমই দেখা যায়। যারা করেন তাদের মধ্যে কুশিক্ষার প্রভাব থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়।
আসুন আমরা রুমানা ম্যাডামের জন্য প্রার্থনা করি, তিনি যেন অন্তত তার চোখ দুটি ফিরে পান। চোখ দুটি দিয়ে তিনি যেন আবার পৃথিবীর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আর তার স্বামী, বুয়েট থেকে পাশ করা আপাতদৃষ্টির সেই মেধাবীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
এমন অমলিন হাসি কি আবার ফিরে আসবে রুমানা ম্যাডামের মুখে...?
আরেকটি কথা, এমন একটি দুঃখজনক, নির্মম ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। না কোনো মানববন্ধন কিংবা অন্য কিছুই নয়। এমনকি তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও না। এটাও এক ধরনের হতাশাজনক চিত্র।
আসুন আমরা সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করি।
ছবি কৃতজ্ঞাতা : বাংলানিউজ ও ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮